শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ক্ষতিপূরণ কিসের?

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১১ এপ্রিল ২০২১  

শীতলক্ষ্যায় যাত্রীবাহি লঞ্চডুবির ঘটনায় লঞ্চ ও এক স্টাফের নামে ক্ষতিপূরণ চেয়ে ঘাতক কার্গোর মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করবে যাত্রী পরিবহন লঞ্চ মালিক সমিতি। এছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত লঞ্চের এক স্টাফের পক্ষেও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি মামলায় উল্লেখ করবেন বলে জানিয়েছেন  যাত্রী পরিবহন লঞ্চ মালিক সমিতি নারায়ণগঞ্জের সভাপতি বদিউজ্জামান বাদল।

তিনি বলেন, আজ সকালে ঢাকায় মেরিন কোর্টে ঘাতক কার্গো জাহাজের মালিককে আসামি করে ক্ষতিপূরণ মামলা করবো। ঘাতক জাহাজ এসকেএল-থ্রির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আসামী করেই মামলাটি দায়ের করা হবে। সেখানে যদি ঘাতক জাহাজের মালিক কোন সাংসদ হোক আর যেই হোক তাকেই আসামি করা হবে। জাহাজের বিরুদ্ধে তো বটেই, জাহাজের মালিকানার বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করা হবে। তবে জাহাজের মালিক যদি মিউচ্যুয়াল আন্ডারস্ট্যাডিং এর মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেয় তবে সেটিও বিবেচ্য হবে। ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলে মামলার কার্যক্রমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কার্গোর ধাক্কায় লঞ্চের যে ৩৪ জনের প্রাণহানি হয়েছে  তাদের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি মামলায় অন্তর্ভূক্তি করার সুযোগ নেই যাত্রী পরিবহন মালিক সমিতির এমন দাবি করে তিনি বলেন, প্রাণহানির ঘটনায় পুলিশ হত্যা মামলা করবে, সেটি আমরা পারিনা। আমাদের পক্ষ থেকে হত্যা মামলা করতে পারবোনা।  দুর্ঘটনায় লঞ্চের একজন স্টাফ নিহতের ব্যাপার টেনে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যাত্রী কল্যাণ সমিতি বলে একটি বিষয় রয়েছে, যেটির ফান্ড আমরাই দেই।ওখান থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার অথবার ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা লঞ্চের কোন স্টাফ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে আমাদের তরফ থেকে দেয়া হয়ে থাকে। বাকি নিহতদের কে কি দিবে তা আমরা জানিনা। আমরা যেই মামলাটি করতে যাচ্ছি, এতে লঞ্চের স্টাফ নিহতের বিষয়টি টেনে তার ক্ষতিপূরণ চাইবো। কারণ প্রচলিত আইনে স্টাফের ক্ষতিপূরণের বিষয়টি কাভার করবে।’  


এদিকে এটিকে নিছক দুর্ঘটনা বলতে নারাজ যাত্রী পরিবহন মালিক সমিতি নারায়ণগঞ্জের সহসভাপতি মনিরুজ্জামান মনির। তিনি বলেন, ‘এটা তো শুধু দুর্ঘটনা নয়, এখানে অবশ্যই একটি হত্যা মামলা হবেই। এতোগুলো মানুষ মারা গেলো এটিকে শুধু দুর্ঘটনা বলার সুযোগ নেই। আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়ের করতে যাচ্ছি আমরা।’ 


লঞ্চডুবির ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষে দায়ের করা মামলার বাদী বাবু লাল মৈত্র বলেন, ‘আমাকে বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে যেভাবে মামলা দায়ের করতে বলা হয়েছে, আমি সেভাবেই করেছি। অজ্ঞাত জাহাজ, অজ্ঞাত ব্যক্তির কথা আমি মামলায় উল্লেখ করেছিলাম। আমি যেহুতু সেখানে ছিলামনা, পুলিসহ অন্য যে কোন সংস্থার সহায়তা চেয়ে মামলা দায়ের করেছি। মামলার আদলে এখন সেই জাহাজটি ধরা পড়েছে। জাহাজের চালকসহ ১৪জন ধরা পড়ার পর, তারা দুর্ঘটনা ঘটানোর পর কোথায় কোথায় গিয়ে জাহাজের নাম বদলাতে চেয়েছে এসব জানা যাচ্ছে। তদন্তে সবকিছু বেরিয়ে আসবে। আমি যে মামলা করেছি বিআইডব্লিউএ’র পক্ষে  সেটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার গতিবিধি যেদিকেই নেবে সেটিই চূড়ান্ত। বিআইডব্লিউটিএ’র পক্ষ থেকে সবগুলো ধারাই দিয়ে দেয়া হয়েছে। ইনল্যান্ড শিপিং অর্ডিন্যান্সের ৭০ ধারায় সবগুলো আইটেম দেয়া হয়েছে। সেখানে হত্যা মামলাসহ আর কোনটা পড়বে সেটি আইও ঠিক করবে।’


এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় নিহত ৩৪ জনের পরিবারকে  মরদেহ হস্তান্তরের সময় ২৫ হাজার টাকা লাশ দাফন ও যাতায়াত বাবদ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হলেও নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, ‘এখন পর্যন্ত লঞ্চডুবির ঘটনায় নিহতদের জন্য নতুন করে কোন অনুদান আসেনি। যদি আসে এবিষয়ে পরবর্তীতে গণমাধ্যমকে জানানো হবে।’
এদিকে লঞ্চডুবির ঘটনায় দায়ের করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ থানার এসআই ইউনুস মুন্সীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।  


প্রসঙ্গত, ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নিচে যাত্রীবাহি লঞ্চ সাবিত আল হাসানকে পেছন থেকে ধাক্কা মেরে ডুবিয়ে দেয় ঘাতক জাহাজ এসকেএল-থ্রি। এঘটনায় ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ১৪জন স্টাফসহ ঘাতক কার্গো জাহাজ এসকেএল-থ্রিকে মুন্সিগঞ্জে আটক করে পাগলা কোস্টগার্ড। পরে নৌথানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে জাহাজটি নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। লঞ্চডুবির ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা দায়ের করেছেন বিআইডব্লিউটিএ নারায়ণগঞ্জে ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য। এঘটনায় প্রকাশিত একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এসকেএল-৩ জাহাজটির রেজিস্ট্রেশন নাম্বার এম-০১২৬৪৩। এই রেজিস্ট্রেশনে জাহাজটির মালিক বাগেরহাট ২ আসনের সাংসদ শেখ তন্ময়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসকে লজিষ্টিকস।

 

এছাড়া ডিপার্টমেন্ট অব শিপিং এর সুত্র অনুযায়ী, জাহাজটি চলতি বছরের ১৮ মার্চ অনুমোদন দেয়া হয়। তবে নৌ পথে চলাচলের জন্য সার্ভে অনুমোদন প্রদান করা হয়নি। অর্থাৎ সার্ভে অনুমোদন প্রাপ্তির আগ পর্যন্ত জাহাজটি ডকইয়ার্ডেই থাকবে। কিন্তু সেই নির্দেশনা অমান্য করে ঘোড়াশাল থেকে ট্রায়ালে নেমেছিলো জাহাজটি। লঞ্চের ৩৪ যাত্রীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ঘাতক কার্গো জাহাজ এসকেএল-৩ এর মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার ১৪ জনের মধ্যে শুক্রবার ৫ জনের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। এছাড়া বাকি ৯ জনের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় বিজ্ঞ আদালত।  রিমান্ড প্রাপ্তরা হলেন, কার্গো জাহাজের মাস্টার ওহিদুজ্জামান (৫০), সুকানি আনোয়ার মল্লিক (৪০), চালক মজনু মোল্লা (৩৮), গ্রীজার হৃদয় হাওলাদার (২০) এবং গ্রীজার মো. ফারহান মোল্লা (২৭) । কারাগারে পাঠানোর আদেশপ্রাপ্তরা হেলেন, জাহাজের সুকানী নাজমুল, গ্রীজার ডেক টেন্টাইল আব্দুল্লাহ, লস্কর রকিবুল, নূর ইসলাম, সাগর, সাকিব, আলিফ এবং বাবুর্চি বাশার।

এই বিভাগের আরো খবর