শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ক্ষমতার দাপটে শামীম ওসমান এসব বলছেন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩  

 

# ঘোড়ার ডিম পাড়ার ঘটনা অবাস্তব : সাখাওয়াত
# মানুষ কোন গডফাদারকে পছন্দ করে না : টিপু

 

 

গত বছর থেকেই নানা দাবি, নিয়ে রাজপথে সরব রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। আর দফায় দফায় কর্মসূচি পালন করে দেশে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। যার কারণে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা নানা সময় তাদের ভয়ভীতি বা প্রতিহত করার জন্য জোরালো বক্তব্য দিয়ে থাকেন। গত বছরের ২১ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে আসা প্রসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছিলেন, মির্জা ফখরুলরা বলছেন ১০ তারিখে খালেদা জিয়া, ১১ তারিখে তারেক রহমান আসবে। ঘোড়ার ডিম আসবে, ঘোড়ার ডিম। ঘোড়া যেদিন ডিম পাড়বে সেদিন তারা আসবেন।

 

তার পরে আবার গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) দুপুর ২ টায় জেলা আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আদালত প্রাঙ্গনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ মনোনীত এড. হাসান ফেরদৌস জুয়েল-এড. মুহাম্মদ মোহসীন মিয়া পরিষদ প্যানেলের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, এইতো কয়েকদিন আগে বিএনপি নেতাকর্মীরা এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করল যেন তারা ক্ষমতায় এসে পড়ছে।

 

তারা বলেছে ১০ তারিখে হেন হবে তেন হবে। আমি বলেছিলাম ঘোড়ার ডিম হবে। এখনো বলছি কোন ডিমই হবে না তাদের। ওদের ডিম শেষ। আম্মাগো-ভাইয়াগো বলে অনেক ভাগ হয়ে গেছে। একটা কথা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা ধৈর্য ধরেছি কিন্তু আমরা দুর্বল না। একটা কারণে ধৈর্য ধরেছি। আপনারা যে অপরাধ করেছেন তার জন্য আপনাদের বিচার হয়েছে, জনগণ আপনাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। রাষ্ট্রীয়ভাবে এবং নারায়ণগঞ্জ বারেও আপনাদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। আমরা আল্লাহর কাছে বিচার দিয়েছি এবং জনগণের কাছে বিচার দিয়েছি যাদের ওপর আমরা বিশ্বাস করি।

 

শামীম ওসমান আরও বলেন, বিএনপির সঙ্গে এত গণতন্ত্র চর্চা করার মানসিকতা আমার নাই। বিএনপির ভাইয়েরা যারা আছেন তারা মনে রাখবেন, ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত আপনারা কি করেছেন। ১৯৭৫ এর পরে আপনারা যখন ক্ষমতায় ছিলেন নারায়ণগঞ্জে আপনারা কি করেছেন। আপনারা যারা বিএনপি করছেন অনেক বড় বড় কথা উচ্চারণ করছেন। আপনাদের উদ্দেশ্য করে বলতে চাই, শান্ত থাকুন। নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ শান্ত থাকতে দেন। আপনারা আমার বাপ দাদার বাড়ি হীরা মহলে গিয়ে পেশাব করা হয়েছিল, আগুন দেয়া হয়েছিল। আমাদের বহু নেতা-কর্মীকে, সেলিমকে জেলখানা থেকে এবং আমাদের নিয়াজুলের বড় ভাই নজরুল ইসলাম সুইটকে রিমান্ডের নামে জেলখানা থেকে ডান্ডাবেড়ি অবস্থায় বের করে গুলি করে মারা হয়েছিল। এ গুলো যদি একবার আমাদের মাথায় মনে পড়ে যায় তাহলে কিন্তু আপনাদের জন্য নারায়ণগঞ্জে বসবাস করা কঠিন হয়ে যাবে।

 

তার এই ধরনের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিএনপির নেতাকর্মীরা তাকে উদ্দেশ্য করে পাল্টা বক্তব্যে দিয়েছেন। এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন খান যুগের চিন্তাকে বলেন, শামীম ওসমান সাহেব একজন জনপ্রতিনিধি তার কারণে তার বক্তব্যে দায়িত্বশীল বক্তব্যে হওয়া উচিত। আর উনি সেদিন যে বক্তব্যেটা দিয়েছে এটি একটি বালক শোলভ বক্তব্য। এই বক্তব্য দিয়ে উনি বুঝাতে চেয়েছে উনারা ঘোড়াকে দিয়ে ডিম পাড়াতে চেষ্টা করে। আর ঘোড়া যে ডিম পারে না এটা পৃথিবীর সকল মানুষেই জানে এটা অবাস্তব। আর তারা সব সময় অবাস্তবের পিছনেই ঘুরে।

 

আর বলতে চাই আমরা সব সময় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আর তারা সেই নির্বাচনটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য আর তারা আবার আগের মতো হাতিয়ে নেওয়ার জন্য এই ধরনরে হুমকি ধমকিসহ বিভিন্ন ধরনরে বক্তব্যে দেয়। আর তার এই বক্তব্যেগুলো একজন জনপ্রতিনিধির মুখে শোভা পায় না। উনি বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সমালোচনা সৃষ্টি করতে চায়। আর তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে বুঝা যায় সে আইনজীবী নির্বাচনের মধ্যে একটি প্রভাব বিস্তার করতে চায়। আর তারই মাধ্যমে সে জোর করে বিজয়ী হওয়ার জন্য এই ধরনরে বক্তব্যে দিচ্ছে।

 

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, শামীম ওসমান সাহেব একজন সাংসদ বা রাজনীতিবীদ হিসেবে উনি কখন কি জোকারি কথা বার্তা বলেন তা নিজে ও জানে না। আমরা আশা করি উনি একজন রাজনীতিবীদ হিসেবে উনি শোভনীয় বক্তব্য দিবেন। উনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত উনি এমপি অবস্থায় নারায়ণগঞ্জে যে সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন ও মানুষকে তারা যে জুলুম অত্যাচার নির্যাতন করেছিলেন। তারপর যখন বিএনপি ক্ষমতায় এলো উনাদের কিছু বলা লাগে নাই। উনারা নিজেরাই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়ে ছিলেন।

 

তারপর যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা সাধারণ মানুষের ক্ষোভের থেকে হয়েছে। কারণ তাদের যুবলীগ, ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওপেনে অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বিএনপি মিছিল মিটিংয়ে হামলা করেছিলেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা ধরে নিয়ে পিটিয়েছে নির্যাতন করেছে। আর ২০০১ সালে যদি কিছু হয়ে থাকে সেটা সাধারণ জনগণ করেছে আর এটা মনে করিয়ে দিলে যে উনি কিছু করে ফেলবে এটা কোন রাজনৈতিক নেতার ভাষা বা বক্তব্য হতে পারে না। আর আমাদের আইনজীবী সমিতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাতীয়ভাবে যে ভোট কারচুপি করে এই আইনজীবী নির্বাচনে ও উনি এই ধরনের কিছু করতে চাচ্ছে।

 

আর যদি ফেয়ার নির্বাচন হয় শুধু শামীম ওসমান কেন এমন শামীম ওসমানের মতো ১০০ শামীম ওসমান ও যদি নানা বেফাঁস বক্তব্যে দেয় তাহলে ও তারা এই আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ আইনজীবীদের ভোট পাস করতে পারবে না। তাই আমি আশা করবো উনি একজন দক্ষ রাজনীতিবীদ এবং দক্ষ সাংসদ উনার বক্তব্যে যেন শোভনীয় বক্তব্য হয়। কারণ মানুষ কোন গডফাদারকে পছন্দ করে না। কোন সন্ত্রাসীকে পছন্দ করে না। মানুষকে কথায় কথায় খেলা হবে এই ধরনের কথা পছন্দ করে না। আর আমি বলতে চাই উনারা যদি কোন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ না করে বিএনপি ও কোন সময় ক্ষমতায় আসলে কোন সন্ত্রাসী কার্যকালাপ করবে না।

 

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক এম এইচ মামুন যুগের চিন্তাকে বলেন, শামীম ওসমান সাহেব এই বক্তব্যে তার ক্ষমতার জোরে দিয়েছে। আর কোন স্বৈরাচারীর পতনের পূর্ব মুহুত্বেই এই ধরনরে দাম্বিকতা প্রকাশ পায়। বর্তমান সরকারকে দেশের জনগণ কোনভাবেই মেনে নিতে পারছে না। দেশে এখন গ্যাস নাই পানি নাই বিদ্যুৎ নাই। সুষ্টভাবে এই দেশ চলতেছে না। তাই এখন তাদের পায়ের নিচে মাটি নাই। যার কারণে তারা এ ধরনরে বক্তব্য দিচ্ছেন। আমরা তার কাছ থেকে এই ধরনের বক্তব্যে আশা করি না।

 

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজিব যুগের চিন্তাকে বলেন, উনি একজন বিজ্ঞ রাজনীতিবীদ আর উনি যে বলছে ১০ তারিখে হেন তেন হবে। এটা কিন্তু বিএনপি বলে নাই এটা সরকার বলেছে। আর বিএনপি বিভাগীয় সমাবেশের মতোই শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করেছে। আর আমরা বলি নাই ১০ তারিখে সরকারের পতন হবে এগুলো আমাদের চিন্তা ও ছিল না। আর উনি সঠিকভাবে আমাদের কর্মসূচির ব্যাপরটা বুঝতে পারি না। উনারা রাতের ভোটের সরকারের অনুসারী তাই তাদের চোরের মন পুলিশ পুলিশ। নারায়ণগঞ্জের আমরা বাসিন্দা আমরা থাকবো না থাকবো এটা আমাদের ব্যাপার আর তার এই বক্তব্য উনাদের রাজনৈতিক বক্তব্য হতে পারে।

 

জেলা যুবদলের সদস্য সচিব মশিউর রহমান রনি যুগের চিন্তাকে বলেন, শামীম ওসমান সাহেব যে বক্তব্যে দিয়েছেন এটা তার রাজনীতিক বক্তব্য হয়নি। এই বক্তব্য তার পেশি শক্তি বা ক্ষমতাকে কিভাবে মানুষের সামনে তুলে আনা যায় সেটার বক্তব্য। উনি এখন ক্ষমতায় আছেন ক্ষমতায় থাকলে তো অনেক কথা অনেক কিছু বলা যায়। তিনি নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সাংসদ সদস্য তার মুখে বিরোধী দলকে ছোট করে বক্তব্যে দেওয়া শোভা পায় না। আমি মনে করি এটা রাজনীতিক বক্তব্য না এটা তার ব্যক্তিগত বক্তব্য। বিরোধী দল বা তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিভাবে তাকে হুমকি দিয়ে হোক, বা প্রশাসনিক কায়দায় হোক কিভাবে তাদের প্রতিহত করা যায় সেটা সে করবেই।

 

আমি মনে করি আমরা যারা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল করি আমরা যারা এই দলের সদস্য আমরা তাদের এই ধরনের হুমকি ধমকিকে আমরা ভয় পাই না। আমরা তাদের এই হুমকি ধমকি ও প্রশাসনিক নির্যাতন, ছাত্রলীগ, যুবলীগের নির্যাতনকে উপেক্ষা করেই আমরা রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছি। আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদলের একটি সাধারন কর্মী হিসেবে আমি বলতে পারি এমপি সাহেবের বক্তব্যে তার ব্যাক্তিগত বক্তব্যে আর হয়তো কাউকে ইঙ্গিত করে তিনি এই ধরনের বক্তব্যে দিয়ে থাকে।

 

আর আমি উনাকে উদ্দেশ্য করে বলতে চাই রাজনীতি বক্তব্য দিতে হলে রাজনীতি ভাষায় দেওয়া উচিত। আর এখন দেশের এমন অবস্থা হয়েছে দেশের জনগণ তাদের পাশে নেই। তারা এখন দেউলিয়া হয়ে গেছে। তাই তারা এই ধরনের ধমক দিয়ে দেশের জনগণকে জিম্মি করে রাখতে চায়। আর তারা বিএনপিকে ইস্যূ করে সাধারণ মানুষকে ভয় দেখিয়ে রাজনীতি করতে চাচ্ছে। আমি মনে করি সাধারণ জনগণ ও এখন তাদের আর ভয় পায় না। শামীম ওসমান সাহেব ও তার অনুসারীরা যে বক্তব্য দিচ্ছে এই বক্তব্যের জবাব আমরা রাজপথে দিতে চাই।

 

এ বিষয়ে মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহেদ আহম্মেদ যুগের চিন্তাকে বলেন, আন্দোলন একটি চলমান প্রক্রিয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য এই সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপি রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। আর আন্দোলন সংগ্রামে সব থেকে সফলতার দিক এখন দেখা যাচ্ছে। আর এখন তাদের ভিতরে আতঙ্ক। আমরা আমাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি পালন করছি। আর অবশ্যই সামনে দল ক্ষমতায় আসবে। আর উনি বলে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতে পারবো না। আমরা তো এখনই করতে পারছি না। কিছুদিন পরে পরে হামলা মামলা পুলিশের হয়রানির শিকার। দল ক্ষমতায় থকালে আসলেই অনেক কথা বলা যায়।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর