শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

কয়লাঘাট যেন মৃত্যুপুরী !

সাবিত আল হাসান

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২১  

একসাথে এত লাশ কখনই দেখেননি সৈয়দপুরের কয়লাঘাট এলাকার বাসিন্দারা। লঞ্চ দুর্ঘটনায় মৃতদের অধিকাংশ যাত্রীই মুন্সিগঞ্জের। কিন্তু শোকের ছায়া পড়েছে পুরো কয়লাঘাট পুবালী সল্ট এলাকা জুড়ে। নদী পেরিয়ে মদনগঞ্জ ট্রলার ঘাটে যাওয়ার অপেক্ষমান যাত্রীরা প্রতিবারই তাকিয়ে থাকেন নির্মানাধীন ব্রীজের নিচে। ঠিক এই স্থানেই সলিল সমাধি হয়েছে ৩৪ জন আদমসন্তানের। গত ৪ এপ্রিল সন্ধ্যা থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত যে কয়টি মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে শীতলক্ষ্যা থেকে, তার সবকয়টির স্থান হয়েছিলো কয়লাঘাট সংলগ্ন মেহগনি গাছের নিচে। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ঠিক এই গাছটির নিচে মরদেহ রেখে ইউএনও’র মাধ্যমে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করেছেন। গাছটি বেশ বড় হওয়ায় এর ছায়ায় আশ্রয় নিয়েছিলো জীবিত, মৃত সকলেই।  ৩৪ লাশের সাক্ষী হয়ে এই গাছটি দাঁড়িয়ে থাকবে বহু বছর ধরে। গণমাধ্যমের কাছে এলাকার নাম কয়লাঘাট হিসেবে পরিচিত হলেও স্থানীয়রা পূবালী মিল এলাকা হিসেবে জায়গাটি চিনে থাকেন। নির্মানাধীন ব্রীজের একদম কাছেই ঘাটের অবস্থান। দুই পাড়ের অধিকাংশ মানুষ স্থানীয় কারখানার সাথে নিজেদের জীবন জীবিকা জড়িয়ে নিয়েছেন। তবে বিকেল নামতেই ধীরে ধীরে জনমানব শূন্য হয়ে উঠে কয়লাঘাট। সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে বন্ধ হয়ে যায় ট্রলার চলাচল। সুনসান নীরব এই ঘাটে অসংখ্য লাশের উপস্থিতি আর হৃদয় বিদারক কান্না শিহরণ তৈরী করে দেয় আগতদের মনে। স্থানীয় বাসিন্দা বিল্লাল হোসেন জানান, লাশ পাওনের পর থিকা এই এলাকার মানুষের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসছে। আগে মানুষ বিকালে এখানে (ঘাট) আড্ডা দিত। কিন্তু এখন আসলে মানুষের মন খারাপ হইয়া যায়। যারা ঐপাড়ে যাইব তারাও আফসোস করতে করতে যায়। যেমনে জাহাজটা লঞ্চরে ডুবাইসে ঐটা দেইখা মানুষ ট্রলারে পার হইতেও ভয় পায়। ব্রিজের কাম শেষ না হইতে এমন ভয় মানুষ সবসময়েই পাইব। ৬ এপ্রিল সকালে নদীর তীরে ডুবে যাওয়া লঞ্চযাত্রীদের মরদেহ দেখতে পেয়েছিলেন পূবালী মিল এলাকার বাসিন্দা আকবর। ঘুম থেকে উঠেই ব্রাশ হাতে নিয়ে ছুটে এসেছিলেন ঘাটের দিকে। ভেবেছিলেন আজ যদি নিখোঁজ ব্যক্তিদের মরদেহের খোঁজ পাওয়া যায়। পেয়েছিলেনও খোঁজ। তবে সেসব মরদেহ ছিল বিকৃত অবস্থায়। তারপর থেকেই ট্রমায় ভুগছেন তিনি। প্রথমদিন ব্যাগে মোড়ানো লাশ দেখে খুব বেশী খারাপ না লাগলেও পরদিন বিকৃত মরদেহ দেখে দিনরাত মানসিকভাবে অস্থিরতার ভেতর আছেন তিনি। উল্লেখ্য, গত ৪ এপ্রিল বিকেলে শীতলক্ষ্যার কয়লাঘাট এলাকায় যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘সাবিত আল হাসান’কে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয় এসকেএল-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজ। লঞ্চডুবির পর ৩৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় বিআইডব্লিউটিএ’র ভারপ্রাপ্ত উপ পরিচালক বাবু লাল বৈদ্য বাদী হয়ে বন্দর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ৮ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে ঘাতক কার্গো জাহাজ ও তার ১৪ স্টাফকে গ্রেফতার করে কোস্ট গার্ড। ৯ এপ্রিল আসামীদের আদালতে তোলা হলে জাহাজের চালক সহ ৫ আসামীকে ২ দিনের রিমান্ডে নেয়ার আদেশ দেয় আদালত। বাকি ৯ আসামীকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরো খবর