শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

কয়েকজনের চাঁদাবাজিতে ইমেজ সংকটে গোটা ট্রাফিক পুলিশ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

 

# এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় আমাদের ট্রাফিক বিভাগ বিব্রত ও লজ্জিত : টিআই (এডমিন)

 

 

চলতি বছরের  ৩০ জানুয়ারি সকাল ১০ টা। যুগের চিন্তা প্রতিনিধির দৃষ্টিগোচর হয় সেলিম নামের এক সার্জেন্ট সাইনবোর্ড মোড়ে বিভিন্ন সিএনজি আটকে কাগজপত্র চেক করছে। কিন্তু পরক্ষণেই সিএনজি চালকের কাছ থেকে উৎকোচ নেয়ার বিষয়টি দৃষ্টি এড়ায়নি। বেশ কিছু গাড়ি থেকে এভাবে টাকা নেওয়ার দৃশ্য ক্যামেরা বন্দি করে যুগের চিন্তা প্রতিনিধি। যাদের কাছে টাকা নেয়া হয়েছে তাদের কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলে এক চালক বলেন আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে। তারপরও সার্জেন্ট বলে সাইনবোর্ড আসছি কেনো? এরপর ৫০ টাকা নিয়ে চলে যায় তারা।

 

অন্য এক চালক বলেন, আমার কাগজ এর মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। এই জন্য ধরছিলো। ১০০ টাকা নিয়ে আর কিছু বলেনা। তিনি আরোও বলেন ট্রাফিক পুলিশদের চাঁদা দিতে দিতে নাভিশ্বাস উঠে যায়। মালিকদের জমার টাকা আর পুলিশদের চাঁদা দিতে দিতে বাসায় চাল কিনার টাকাও নিয়ে যেতে পারিনা। এরা পুলিশ এ চাকরি না নিয়ে সন্ত্রাসী হয়ে চাঁদাবাজি করলে পুলিশের সুনাম নষ্ট হতো না। ৯ জানুয়ারি  দুপুর ১ টা। আবুল কালাম নামের এক সার্জেন্টকে দেখা যায় পঞ্চবটি ষ্ট্যান্ড এর চারপাশে থাকা বিভিন্ন ব্যাটারিচালিত গাড়ি ও সিএনজি থেকে ১০-২০ টাকা করে নিচ্ছেন। কেউ দিতে অস্বীকৃতি জানালে তার চাকা ফুটো করে দেয়া হচ্ছে। সবাই একরকম বাধ্য হয়েই এই টাকা পুলিশ সদস্যের তাতে তুলে দিচ্ছে। তারা বলছে একটা ভিখারীকেও তো আমরা ১০-২০ টাকা করে দেই। এটাকেও ভিক্ষা মনে করে দিয়ে দেই।

 

এমন চিত্র শুধু সাইনবোর্ড কিংবা পঞ্চবটির নয়। চাষাড়া, শিবু মার্কেট,জালকুড়ি, মেট্রো, কালির বাজার ,দুই নম্বর গেইট কিংবা সিদ্ধিরগঞ্জ সবত্রই এমন চিত্র দেখা যায় হরহামেশাই। এই স্বল্প মূল্যের চাঁদাবাজি চলছে একেবারে প্রকাশ্যে। এটা একপ্রকার গা সওয়া ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে। কিন্তু এ সাধারণ ঘটনার কারণে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, ঝড় বৃষ্টি রোদ উপেক্ষা করে অসাধারণ ট্রাফিক পুলিশদেও পরিশ্রমকেও হাস্যরসের রশদ হিসেবে ভাবা হচ্ছে। মুষ্টিমেয় কিছু চাঁদাবাজ ট্রাফিক সদস্যদের জন্য বদনামের ভাগিদার হচ্ছে অন্যরা। এতে চরম ইমেজ সংকটে পরে গোটা ট্রাফিক বিভাগ।

 

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাকে দেখা যায়, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের নামে তারা বড় ধরনের চাঁদাবাজির সাথে নিজেদের যুক্ত করে নিচ্ছে। এ ধরনের চাঁদাবাজিতে তারা শহরের বাইরে কিংবা অভ্যন্তরে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক আটক করছে। আটকের পর সেগুলোর মধ্যে মুষ্টিমেয় কিছু ডাম্পিংয়ে পাঠাচ্ছে। বাকি গাড়ি গুলো থেকে হাফ রেকার বিল বাবদ ৫০০/৭০০ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এই টাকার পুরোটাই নিজেদের মধ্যো ভাগাভাগি করা হচ্ছে। এই ধরনের চাঁদাবাজি নিয়ে এএসআই হাসানের নামে ইতোমধ্যে যুগের চিন্তায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

 

তবে এ বিষয়ে এএসআই হাসানের সাথে কথা বললে তিনি জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। তিনি মাঝে মাঝে পঞ্চবটি গাড়ি আটক করেন যেনো ব্যাটারিচালিত গাড়ি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে এমন কর্মকাণ্ডের সাথে বিভিন্ন টিআই ও এএসআইরা সরাসরি জড়িত। দীর্ঘদিন ধরে এ অপরাধ চলমান রেখে চালকদের একপ্রকার শোষণ করা হচ্ছে। প্রকাশ্য এই অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা না নেয়ায় দিনের পর দিন বাড়ছেই এ ধরনের চাঁদাবাজি । ক্ষুন্ন হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশের ইমেজ।

 

এ বিষয়ে জেলার ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (এডমিন) করিম যুগের চিন্তাকে বলেন, এমন চাঁদাবাজির ঘটনায় আমাদের ট্রাফিক বিভাগ বিব্রত ও লজ্জিত। এমন চাঁদাবাজির বিষয়ে কি উত্তর দিবো আমার জানা নেই। মুষ্টিমেয় কিছু সদস্যের জন্য আমাদের পুরো ডিপার্টমেন্ট ইমেজ সংকটে পড়ছে। সবাই মন্দটাই দেখে আমাদের বিবেচনা করছে। এ ধরনের কর্মকান্ডে না জড়ানোর জন্য কয়েকদফা কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে অনেকেই মানছে না।

 

তিনি বলেন, আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর থেকে কঠোরতম ব্যবস্থা নিবো। তবে সুধীজনরা বলছেন এমন কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে শুধু কথায় না, শাস্তির আওতায় আনতে হবে। কারন মুখে মুখে সবাই ভালো মানুষ। কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করলে বুঝা যায় কে আসলে কেমন। এ ধরনের সদস্যের ধরতে হলে তাদের ছদ্মবেশে ধরতে হবে তবেই বুঝা যাবে কে কেমন চরিত্রের। ট্রাফিক পুলিশিং ব্যবস্থাকে এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যেনো কেউ এ ধরনের ছোট কিংবা বড় কোনো ধরণের চাঁদাবাজির সাথে নিজেদের যুক্ত করার সাহস কিংবা সুযোগ না পায়। যেনো কেউ ট্রাফিক পুলিশকে ১০/২০ টাকা দেওয়ার সাহস না পায়।

 

ট্রাফিক পুলিশকে দেখলে যেনো সবার ঘৃনার চোখে দেখার পরিবর্তে শ্রদ্ধার চোখে দেখে। ট্রাফিক পুলিশদের নতুনভাবে ঢেলে সাজানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই ।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর