মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে ফান্ডের টাকা নেন জসিম

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন গোগনগর ইউনিয়নে অবস্থিত সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন রেজুলেশন না মেনে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জসিম উদ্দিনকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। জসিম উদ্দিনের এমন কাণ্ড নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা।  

 


তাদের মতে, বিদ্যালয়ের রেজুলেশন ভঙ্গ করে ফান্ড থেকে ওই টাকা নিয়েছেন জসিম উদ্দিন। আর টাকা নেয়ার বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির কাছে প্রথমে গোপন করেছিলেন তিনি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজির ফকির দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানান, গত প্রায় ৪ মাস পূর্বে বিদ্যালয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন ম্যানেজিং কমিটির কাউকে না জানিয়ে অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে ফান্ড থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

 

প্রথমে অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদ ফান্ডের টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে জসিম উদ্দিন অধ্যক্ষকে ওই টাকা দিতে বাধ্য করেন। ফান্ডের ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়ার পর বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ অবগত হলে জসিম উদ্দিন ফান্ড থেকে ওই টাকা হাওলাদ নিয়েছেন বলে জানান এবং দ্রæতই ওই টাকা আবারও ফন্ডে জমা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন। কিন্তু ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ফান্ডের টাকা বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। তা নিয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

 

এদিকে, রেজুলেশন ভঙ্গ করে প্রধান শিক্ষক তোফায়েল আহমেদ কেন জসিম উদ্দিনকে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা দিলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন কমিটির অন্যান্য সদস্যরা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক সদস্য দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক কোন বলে জসিম উদ্দিনকে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা দিলো। এটা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। আমাদের রেজুলেশনে পরিস্কার বলা আছে যে, যেই দিন যত টাকা কালেকশন হবে, ঐদিনই তা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এখন হেড মাস্টার কিভাবে ম্যানেজিং কমিটির সাথে মিটিং না করে ফান্ডের টাকা সভাপতিকে ব্যক্তিগত কাজে হাওলাদ দিলেন। হেড মাস্টার ইচ্ছে করলেই ফান্ডের টাকা কাউকে দিতে পারবে না। এক্ষেত্রে হেড মাস্টার রেজুলেশন ভঙ্গ করেছে। হেড মাস্টার তার ইচ্ছে মত ফান্ডের টাকা ব্যবহার করছেন। এখানে ছাত্রদের রেজাল্ট নিয়ে কোন অগ্রগতি নেই, লুটপাটের অগ্রগতি হচ্ছে।’  

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক অভিভাবক সদস্য বলেন, ‘ফান্ডের টাকা এভাবে কেউ নিতে পারে না। টাকাটা নেয়ার পর আমরা জেনেছি। ফান্ডের টাকা এভাবে নেয়া উচিৎ হয়নি। তাছাড়া, ফান্ডের হিসাব নিকাশও আমরা জানি না। সম্প্রতি বিদ্যালয়ে অডিটরিয়াম নির্মাণ হলো। এটা নির্মানে সেলিম ওসমান সাহেব কত টাকা দিয়েছেন আর কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেই তথ্যও তিনি আমাদের দিতে চাচ্ছে না। হিসাব চাইলে উনি বলে যে, এমপি মহোদয় খরচ দিয়েছে, তাই হিসাব দিলে এমপি মহোদয়কে হিসাব দেব। অন্য কাউকে নয়! এই বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জানে, কিন্তু আমাদের জানাচ্ছে না। অথচ, বিদ্যালয়ের একটি টিন লাগালেও আমাদের জানা থাকার কথা, কিন্তু এতো বড় একটা অডিটরিয়াম হলো, সেই বিষয়ে কোন হিসাব তিনি দিচ্ছেন না।’

 

এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি তিনি প্রথমে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘এটা নিয়ে নেগেটিভ কোন সংবাদ প্রকাশ না হলেই ভালো। জসিম উদ্দিন সাহেব ওই টাকাটা হাওলাদ হিসেবে নিয়েছেন, আবার তা দিয়েও দিবেন।’
বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা- ‘এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেলিম ওসমান সাহেবের একটি অনুষ্ঠানের সময় তিনি ওই টাকা নিয়েছিলেন। ফোনে এসব বলার চেয়ে সামনা সামনি কথা বললে ভালো হয়।’ এদিকে, বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন সভাপতি জসিম উদ্দিন!

 

এই বিষয়ে জসিম উদ্দিন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এমন কোন পরিস্থিতি স্কুলে হয়নি। আমি স্কুল থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা পাই। স্কুলের আর্থিক অবস্থা খারাপ। আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থ থেকে শিক্ষকদের বেতন দিয়েছি। ফান্ডের টাকা নেয়ার মত কোন বিষয় নেই। অডিট কমিটি প্রতিমাসে মাসে অডিট করে যদি কোন ভুল পায়, তাহলে তা রিপোর্ট আকারে হেড মাস্টারের মাধ্যমে আমার কাছে আসবে। আমি এটার সমাধান করবো বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব। সভাপতি কখনো হিসেব দেয় না।’ যেহেতু স্কুলের ফান্ডের হিসেব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সেহেতু আপনি কখনো প্রধান শিক্ষক ও ক্যাশিয়ারের কাছে হিসাব চেয়েছিলেন কিনা? এমন প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর না দিলেও তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই এই ব্যপারে সচেষ্ট এবং সচেতন।

 

তবে, এটা সম্পূর্ন মনিটরিং করে ক্যাশিয়ার আর হেড মাস্টার। আর স্কুলের প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিনেই ব্যাংকে জমা হয়। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে হলে রিকোজিশনের মাধ্যমে বলতে হবে যে, কোন খাতে বা কোন কাজে টাকা ব্যয় হবে। এটা সিস্টেম। এই সিস্টেম আমরা ম্যান্টেন করি।’ জানা গেছে, জসিম উদ্দিনকে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান। তবে, সেলিম ওসমানের সমর্থিত এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের অর্থ হেরফের করার।

এই বিভাগের আরো খবর