বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘গভীর রাতে বিন্নির বাড়িতে যেত রাজু আহম্মেদ’

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১ আগস্ট ২০২২  

 

# ঘটনা জেনে যাওয়ায় শুরু হয় শত্রুতা

# তদন্ত শেষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে : তদন্তকারী কর্মকর্তা

 

একদিন পেরুলেও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নির পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক রাজু আহম্মেদ ও সাংবাদিক সৈকত আশিকের মামা ব্যবসায়ী তমাল আহম্মেদের মাথা ফাঁটানোর ঘটনায় মামলা গ্রহণ করেনি পুলিশ। এদিকে চাষাঢ়া রেলগেট সংলগ্ন কাউন্সিলর বিন্নির বাড়ির প্রতিবেশী তমাল আহমেদের মাথা রাজু আহম্মেদ কেন ফাঁটাল তা নিয়ে শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। 

 


শুক্রবার দুই পক্ষ অভিযোগ করলেও মামলা গ্রহণ না করে তদন্তের জন্য ঘটনাস্থলে দুই পক্ষের বক্তব্য নিয়েছে পুলিশ। আজ এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে পুলিশ। শুক্রবার তাৎক্ষণিকভাবে গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে এই ঘটনার কথা বলা হলেও পুলিশের কাছে ভুক্তভোগী তমাল আহম্মেদ, রাজু আহম্মেদের সাথে বিবাদের পূর্ব কারণ উল্লেখ করেছেন। 

 


এব্যাপারে তমাল আহম্মেদ যুগের চিন্তাকে বলেন, প্রায় একমাস পূর্ব থেকেই আমার এবং আমাদের বাড়ির ফ্ল্যাটের অন্যান্য বাসিন্দাদের সাথে একটি বিষয় নিয়ে কাউন্সিলর বিন্নির মনোমালিন্য চলতেছিল। বিষয়টি হলো একজন লোক প্রতিদিন রাত ২/৩ টায় বিন্নির ফ্ল্যাটে আসা-যাওয়া করতো। আমাদের বাড়ির সবার সম্মতিক্রমে নিয়ম হলো রাত ১২ টার পড়ে জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোন ব্যাক্তি আসা-যাওয়া করতে পারবেনা।’

 


‘কাউন্সিলর বিন্নির সাথে এই বিষয়ে কথা হলে বিন্নি ঐ ব্যাক্তিকে তার স্বামী হিসাবে পরিচয় দেন। তখন আমরা জানতে পারি বিন্নি স্বামী পরিচয় দেওয়া এই ব্যক্তি সাংবাদিক রাজু আহাম্মেদ। তখন রাজু আহাম্মেদ আমাকে হুমকি দিয়ে বলেন, এই বিষয়ে যেন আর কেউ জানতে না পারে। জানলে আমার এবং আমার সন্তানদের ক্ষতি হবে।’ 

 


তমাল আহমেদ আরও বলেন, ‘ঢেঁড়শ গাছ লাগানো কোনো বিষয় নয়, তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই আমাকে আঘাত করে মাথা ফাঁটিয়ে দিয়েছে। আমি খুব অসুস্থ বোধ করছি। আমার মাথায় খুব সমস্যা হচ্ছে, শারিরিক সমস্যাও সৃষ্টি হচ্ছে।’ 

 


তিনি জানান, ‘আজ নারায়ণগঞ্জ সদর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম এসেছিলেন। আমি তাকে পুরো ঘটনা জানিয়েছি এবং সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছি। আমি সুষ্ঠু তদন্তসাপেক্ষে ন্যায় বিচার চাই।’

 


এদিকে তমাল আহম্মেদ বয়ানে যেই সিসি টিভির কথা বলেছেন তাও গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে দেখা যায়, তমাল আহম্মেদ বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন। তার সাথে আরো দুইজনও তার সাথে কথা বলছে। এসময় বাড়ির ভেতর থেকে দৌঁড়ে এসে রাজু আহম্মেদ, তমাল আহমেদকে ধাক্কা দিয়ে এলোপাথাড়ি মারতে থাকে। এসময় দাঁড়িয়ে থাকা দুজন লোকের একজন রাজু আহম্মেদের সাথে মিলে তমাল আহমেদকে এলোপাথাড়ি মারধরে যুক্ত হয়। 

 

 

লাথি, কিল, ঘুষিতে উপর্যুপুরি আঘাতে পর আঘাত করতে থাকে। নিচে পড়ে গেলেও ইট কিংবা পাথরের টুকরো হাতে নিয়ে রাজু আহম্মেদ তমাল আহমেদকে মারতে থাকে। এসময় কেউ তাদের নিবৃত্ত করতে আসেনি। এরপর তমাল আহম্মেদ দৌঁড়ে বাড়ির ভেতর ঢুকার চেষ্টা করলেও তাকে বাধা দেয় তারা। এই ঘটনার পর পরপরই সেখান থেকে সটকে পড়ে রাজু আহম্মেদ ও দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিরা।

 


১৯ আগস্ট দুপুরের দিকে গাছ লাগানোকে কেন্দ্র কওে চাষাঢ়ায় রেল গেইট সংলগ্ন বাড়ির সামনে সংরক্ষিত কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নির গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট উত্তেজনায় সাংবাদিক রাজু আহম্মেদ; সাংবাদিক সৈকতের ছোট মামা ব্যবসায়ী তমাল আহম্মেদের মাথা ফাঁটিয়ে দেয় । গুরুতর আহত তমাল আহম্মেদকে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে পর্যবেক্ষণে রাখে ডাক্তার। 

 


তার মাথার ক্ষত স্থানে তিনটি সেলাই লেগেছে। ঘটনার পরপরই রাজু আহম্মেদ আত্মগোপনে চলে যায়। এ ঘটনায় থানায় দায়েরকৃত অভিযোগে তখন তমাল আহমেদ জানান, ‘আমি চাষাঢ়ায় অবস্থিত আমার নিজ বাড়িতে বসবাস করে আসছি, কাউন্সিলর বিন্নি  আমাদের বাড়িতে আমাদের নিকট থেকেই ফ্ল্যাট ক্রয় করেছে। বাড়ির সামনের কিছু জায়গায় গাছ লাগাতে গেলে কাউন্সিলর বিন্নি প্রায় সময়ই আমাকে বাধা দেয় এবং আমার সাথে খারাপ আচরণ করে।’ 

 


তিনি আরো জানান, ‘১৯ আগস্ট দুপুরের দিকে গাছ লাগানোকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলর বিন্নি ও তার স্বামী সাংবাদিক রাজু আমাকে উত্তেজিত কথাবার্তা বলে। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে সাংবাদিক রাজু এবং তার এক সহযোগী ইট দিয়ে আমার মাথায় আঘাত করে। এতে আমার মাথা ফেটে যায় এবং প্রচুর রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এরপর আমার স্বজনরা এবং এলাকাবাসী আমাকে উদ্ধার করে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে আমার মাথায় তিনটি সেলাই পড়ে। এরপর নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করি।’

 


এই ঘটনায় কাউন্সিলর শারমিন হাবিব বিন্নী থানায় আরেকটি লিখিত অভিযোগে বলেছেন, তমাল আহম্মেদ বাড়ির সামনে ঢেঁড়শ গাছ লাগাতে না দিয়ে তাকে এবং তার সন্তানদের নিয়ে কটূক্তি করেছেন। ১৩, ১৪ ও ১৫নং ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর (সংরক্ষিত) শারমিন হাবিব বিন্নি রাতে ফোনালাপে দৈনিক যুগের চিন্তা’কে বলেন, ‘তমাল আহমেদ এবং আমি একই বাড়িতে বসবাস করি। সে প্রায়ই আমার বাড়ির সামনে রেলওয়ের জায়গায় গাছ লাগাতে গেলে অত্যন্ত খারাপ আচরণ করে। 

 


তমাল আহমেদ এত জঘন্য ভাষায় কথা বলে যে, তা ভাষায় প্রকাশ করার নয়।’ তিনি আরো জানান, ‘আমাকে এই ফ্ল্যাটটি ক্রয় করতে সাংবাদিক রাজু আহাম্মেদ এবং সাংবাদিক সৈকত সহযোগিতা করেছেন। তাই বাড়িতে কোনো সমস্যা হলে সবসময় আমি তাদেরকে জানাই। ১৯ আগস্ট দুপুর বেলা যখন তমাল আহমেদ আমার সাথে খারাপ আচরণ করছিলো; তখন আমি সাংবাদিক রাজু আহম্মেদকে জানাই।

 


সে আমার বাসার সামনে আসলে তমাল আহমেদ এর সাথে তর্কাতর্কি হয়। তমাল আহমেদ আমাকে এবং আমার সন্তানদেরকে নিয়ে অনেক কটূক্তি করে।’ এসময় কাউন্সিলর বিন্নি বলেন, রাজু আহম্মেদ তার স্বামী নন, কে কি বললো সেটা আমার কথা নয়। আমার ফ্ল্যাট কিনতে সহযোগিতা করেছে বলেই; আমি যে কোন সমস্যায় তাকে ডাকি এবং জানাই। এই ঘটনায় আমি সাংবাদিক সৈকতকেও ফোন করেছিলাম। এসময় সৈকত ব্যস্ত থাকায় আসতে পারেনি। কিন্তু রাজু এসেছিল।

 


প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাজু আহম্মেদের সাথে তমাল আহম্মেদের বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এ সময় রাজু আহম্মেদ ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করে তমাল আহম্মেদকে রক্তাক্ত জখম করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানিয়েছে, রাজু আহম্মেদ তমাল আহম্মেদকে গুরুতর  জখম করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ও স্বজনরা তমাল আহম্মেদ উদ্ধার করে দ্রুত ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়।

 


তবে এব্যাপারে সাংবাদিক রাজু আহম্মেদের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 


এই বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সাইফুল ইসলাম ফোনালাপে যুগের চিন্তা’কে জানান, ‘আমি আজ ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম; উভয় পক্ষের সাথে কথাবার্তা বলেছি, তথ্য নিয়েছি, তদন্ত চলছে। তদন্ত সম্পন্ন হলে আমরা এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

 


দুই পক্ষ অভিযোগ দেয়ার পরপর শুক্রবার (১৯ আগস্ট) নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান মোল্লা যুগের চিন্তাকে জানিয়েছেন, ‘উভয়পক্ষ দুইটি ভিন্ন ভিন্ন অভিযোগ দায়ের করেছে। উভয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে আগামীকাল (২০ আগস্ট) তদন্ত করে আইননানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

 


কৈফিয়ত : গতকাল দৈনিক যুগের চিন্তায় এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জোরপূর্বক হকারদের কাছ থেকে যুগের চিন্তা পত্রিকা নিয়ে যায় বেশ কয়েকজন লোক। হকাররা জানিয়েছে, সকালে পত্রিকা বাজারে আসার সাথে সাথেই কয়েকজন লোক হকারদের কাছ থেকে যুগের চিন্তার সকল কপি হুমকি ধমকি দিয়ে কিনে নিয়ে যায়। যার দরুণ গ্রাহকদের অনেকেই পত্রিকা হাতে পাননি। এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর