শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

গাউছিয়ার ফুটপাতে দৈনিক আড়াই লাখ টাকার চাঁদাবাজি

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২১  

রূপগঞ্জ উপজেরার ভূলতা গাউছিয়া এলাকায় চাঁদাবাজি থামছেনা। বেপরোয়া এসব চাঁদাবাজরা মহাসড়কের উপরে যেখানে সেখানে দোকান বসিয়ে ইচ্ছেমত চাঁদাবাজি করছে। প্রায় ৪ শতাধিক দোকান বসিয়ে দৈনিক আড়াইলাখ টাকা চাঁদা আদায় করছে বলে জানা গেছে। এতে মহাসড়কে যেমন যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে তেমনি ভুলতা ফ্লাইওভার ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হচ্ছে। 

 


জানা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোলাকান্দাইল মোড় হতে গাউছিয়া মোড়, ভূলতা ফ্লাইওভারের নীচে ও ভূলতা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পর্যন্ত উভয়দিকে প্রায় ৪ শতাধিক অবৈধ ফুটপাত রয়েছে। এসব দোকানের মধ্যে রয়েছে ফলের দোকান, কাপড়ের দোকান, মাছ ও তরিতরকারীর দোকান, ফুসকা ও চটপটির দোকান তাছাড়াও হরেক রকমের ভ্রাম্যমাণ দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকান থেকে এককালীন জামানত ১০ হাজার টাকা করে আদায় করছে চাঁদাবাজরা। আর প্রতিদিন ২’শ থেকে ৪’শ টাকা করে আদায় করছে। নতুন পজিশন নিতে গেলে দোকানীদের প্রথমেই ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়।

 

গোপন সূত্রে জানা গেছে বিশাল অংকের এসব টাকা স্থাণীয় যুবরীগনেতা ও ভূলতা পুলিশ ফাড়িঁর পকেটে যাচ্ছে । এত বিশাল অংকের চাঁদাবাজি নিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সাথে ইউনিয়র যুবলীগের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটছে প্রতিনিয়ত। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। চাঁদাবাজদের কোন ক্রমেই থামানো যাচ্ছে না। গরীব ফুটপাত ব্যবসায়ীরা চাঁদা দিতে দিতে নিঃস্ব হচ্ছে। চাঁদার টাকা দৈনিক পরিশোধ না করতে পারলে তাদের জামানত বাতিল করে আবার ১০ হাজার টাকা নিয়ে নতুন ব্যবসায়ীদের বসিয়ে দেয়। কন্তিু আগের দোকানদার তার জামানতের টাকা ফেরৎ পাওয়ার সাহসই করেনা। এভাবে গরীব ফুটপাত ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে।

 

এদিকে ফুটপাতের কারনে ঢাকা- সিলেট মহাসড়ক দখল হয়ে যাওয়াতে যানঝট আবার পূর্বের অবস্থায় চলে এসেছে। ৩৫৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মিত হওয়ার পরেও গাউছিয়া এলাকার যানজট কমছে না। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা মহাসড়ক দখলে নেওয়ার কারণে যানঝট লেগেই থাকে। ফুটপাত ব্যবসায়ীরা ফল ও তরিতরকারীর উচ্ছৃষ্ট অংশ ফ্লাইওভারের পিলারের গোড়ায় ফেলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করছে। এতে দুষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ। ফুটপাত ব্যবসায়ীদের কারণে পথচারীরাও রাস্তা পারাপার করতে পারছেনা। এজন্য বিভিন্ন সময় দূর্ঘটনার স্বীকার হতে হয় পথচারীদের। 
ভূলতা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমীনের নেতৃত্বে মহাসড়কে অবৈধভাবে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজি হচ্ছে বলে জানান এলাকাবাসী।

 

গোলাকান্দাইল গোলচত্তর হতে নুরম্যানশন মার্কেট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে আল আমিন। এদিকে আব্দুল হক সুপার মার্কেট হতে আজিজ সুপার মার্কেট পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করে ইকবাল হোসেন। তাদের রয়েছে ৬ জন সহকারী। এরা সারাদিন ফুটপাতে টাকা তোলার কাজে ব্যস্ত থাকে। ভূলতা পুলিশ ফাঁড়ির সামনে এসব চাঁদাবাজি হওয়ার পরেও অজ্ঞাত কারণে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। এলাকার সচেতন মহল মনে করেন, এখনই এ সকল চাঁদাবাজি বন্ধ না করলে এলাকার আইনশৃংখলার চরম অবণতি ঘটতে পারে। তাছাড়া মহাসড়ক দখলমুক্ত করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন সচেতন মহল। 

 


ফুটপাত ব্যবসায়ীরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দৈনিক ৩/৪’শ টাকা চাঁদা দিতে হয়। ব্যবসা না হলেও তাদের চাঁদা দিতে হয়। তা না হলে পরের দিন বসতে দেয়না। আবার কেউ টাকা দিতে না পারলে তাদের মালামাল কেড়ে নেয়। এভাবে চাঁদা দিতে দিতে আমরা ঋনী হয়ে যাচ্ছি। সরকারী জায়গায় ব্যবসা করেও শান্তি নেই। কান্না জড়িত কন্ঠে তারা বলেন, এদেশে গরীবের কেউ নেই।

 


এ ব্যপারে ভূলতা ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজিম উদ্দিন মজুমদার বলেন, আমরা চেষ্টা করি ফুটপাত তুলে দেয়ার জন্য। কিন্তু একদিকে উঠিয়ে দেই অপর দিকে বসে যায়। আমরা কি করব। গত কয়েকদিন আগে ময়লার ভাগাড় আমার নিজ টাকা দিয়ে পরিস্কার করেছি। এখন আবার সেই অবস্থা। আমরাও এখন নিরুপায়। রাজনৈতিক প্রভাবের কারনে ফুটপাত সরানো যাচ্ছেনা জানিয়ে তিনি বলেন এখানে চাঁদাবাজি হয় শুনেছি কিন্তু এ টাকা কে বা কাহারা নেয় আমার জানা নেই। 
 

এই বিভাগের আরো খবর