বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গাছের গুঁড়ি শ্রমিকদের কোলাহলে পূর্ণ থাকে চারারগোপ

নুরুন্নাহার নিরু

প্রকাশিত: ১৭ জুন ২০২২  

 

মানুষের মৌলিক চাহিদার অন্যতম একটি উপাদান বাসস্থান। আর বাসস্থানের জন্য আমাদের দেশে যে পণ্যটির অধিক ব্যবহার হয় তা হলো কাঠ। কাঠ শুধু যে বাড়ি-ঘর বা বাসস্থান তৈরিতেই ব্যবহার হয় তা নয়। বাড়ি-ঘর, অফিস আদালত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সৌন্দর্য্য বাড়াতেও কাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই প্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ এই পেশার সাথে জড়িত হন। এই কাঠের প্রকারভেদ ও গুনাগুন অনুযায়ী এর দামেরও অনেক পার্থক্য হয়ে থাকে। আর কাঠ যে উপাদান থেকে তৈরি তা হলো গাছের গুড়ি।

 

অর্থাৎ গাছগুলোকে ব্যবহারের উপযোগী কাঠে পরিণত করার জন্য বিভিন্ন আকার অনুযায়ী গাছগুলোকে কাটা হয়। গাছের এই কাটা অংশগুলোকেই গাছের গুড়ি বলা হয়। বর্তমানে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় বিভিন্ন মানের কাঠের সরবরাহ পাওয়া গেলেও কাঠের মূল উপাদান এই গাছের গুড়ির সবচেয়ে বড় আড়ৎ শহরের কালির বাজারের চারারগোপের খাল এলাকায়।

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে এই গাছের গুড়ি নিয়ে আসেন এখানে। এখানকার আড়ৎদারগণ তাদের কাছ থেকে সে সব গুড়ি কিনে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকার স্ব-মিল মালিকদের নিকট বিক্রি করেন। সেখান থেকে বিভিন্ন উপজেলা ও আশে পাশের এলাকার আসবাবপত্রের ব্যবসায়ীসহ অন্য ক্রেতারা কাঠ কিনে নিয়ে যান তাদের প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহারের জন্য। বাড়ির দরজা জানালা কিংবা বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরিতে প্রয়োজনীয় সব ধরনের কাঠের জন্যই গুড়ি মিলবে নারায়ণগঞ্জের কালির বাজারের চারারগোপ খাল এলাকায়।


 
চারারগোপ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শীতলক্ষা নদীর পার ঘেঁষেই গড়ে ওঠেছে এই কাঠের গুড়ির আড়ৎ। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে কাঠের গুড়ির বেপারীরা এখানে আসেন দেশীয় কাঠ কেনা-বেচা করার জন্য। এখানকার কাঠ গুলোর বেশিরভাগই বরিশাল থেকে আসে বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। প্রায় দু-তিন দিন পর-পরই বরিশাল ও কুয়াকাটাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেসব এলাকার বেপারীরা নানা পরিবহনেরে মাধ্যমে কাঠের গুড়ি নিয়ে আসেন এখানে। কড়ই, চাম্বুল, রেন্ডি, আম, মেহগনি, তুলা, গাব ও বাদামসহ বিভিন্নজাতের কাঠের গুড়ি পাওয়া যায় এখানে।

 

কাঠের এই গুড়ি ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য নদী পথে ট্রলার ও কার্গো এবং সড়ক পথে ট্রাকসহ বিভিন্ন পরিবহন ব্যবহার করা হয়। যারা এই গুড়িগুলো বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয় করে এখানে মজুদ করে রাখেন তাদেরকে বলা হয় গাছের গুড়ির বেপারী। একজন বেপারীর সাথে কাজ করছেন প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন শ্রমিক। এখানকার শ্রমিকরা কেউ গাড়ি থেকে গুড়িগুলো নামাচ্ছেন (আনলোড করছেন), কেউ পরিবহনে তুলে দিচ্ছেন (লোড করা), আবার কেউবা মজুদ করার জন্য সারি সারি করে রাখছেন সাজিয়ে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কাজ করে শ্রমিকরা। শ্রমিকেরা প্রতি ঘনফুট কাঠ ট্রলার থেকে নামাতে পারিশ্রমিক পান ১২ টাকা। একজন শ্রমিক রোজ হিসেবে উপার্জন করতে পারেন প্রায় ৩ থেকে ৫শত টাকা। অর্থাৎ এখানকার শ্রমিকরা প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকার মতো টাকা আয় করতে পারেন।

 

এখানকার বেপারীরা এগুলো কিনছেন লট হিসেবে। এখানে থাকা ট্রলারগুলো ভাড়া আসে প্রায় আড়াই হাজার টাকার মতো এবং ট্রাক প্রতি আভ্যন্তরীন হিসেবে ভাড়া প্রায় ৬শত টাকা মতো। এখানে কাজ করা শ্রমিকদের এক সর্দার জানান, আমাদের এখানে শ্রমিকদের নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই। যখন যার ইচ্ছে হয় আসে কাজ করে।এমই/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর