শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

গায়ের জোরে জমি দখল নিতে যায় পিজা শামীমের গুন্ডাবাহিনী

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ মার্চ ২০২৩  

 

# আদালতের নিষেধাজ্ঞাকেও আমলে নেয়নি সন্ত্রাসীরা
# কঠোর শাস্তির দাবী ভুক্তভোগী পরিবারের,
# এক মাস আগে জিডি হলেও নীরব ভূমিকায় ছিল প্রশাসন

 

 

নারায়ণগঞ্জের বন্দর ফরাজিকান্দা এলাকায় নাসিম ওসমান ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু সংলগ্ন হোন্ডাবাহিনী নিয়ে জায়গা দখলের ঘটনায় লঙ্কাকাণ্ড হয়েছে। যা নিয়ে উত্তপ্ত শহর-বন্দর। ওই ঘটনায় বাজারের জমি দখলে বাধা দেওয়ায় সন্ত্রাসী বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। একই সাথে ভুক্তভোগি পরিবারের একাধিক সদস্য গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়ে আছেন। বন্দরের এই জায়গা দখল নিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনায় টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়েছে। তবে এই হোন্ডাবাহিনীর বিরুদ্ধে এর আগেও নানা অপকর্মসহ জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু তখন তাদের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় এখন তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

 

এদিকে জানা যায়, বন্দরের জায়গা নিয়ে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে পিটিশন মোকদ্দমা নং ১৭১/২৩ মামলা রয়েছে। এই মামলা ১৪৫ ধারায় আদেশে মামলার বাদী মাইনুল হক পারভেজ এবং বিবাদী নুর মোহাম্মদ গংদের শান্তি শৃঙ্খলা ও স্থিতিবস্থায় বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হয়। অর্থাৎ আদালতের নির্দেশ নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষই অশান্তি পরিবেশ করতে পারবে না। এছাড়া নিম্ন তপসিল বর্ণিত সম্পত্তি নিয়ে ২৬৪নং নামচর মৌজাস্থিত, সি.এস ২৬ নং, এসএ ৫.আর এস ৩ নং খতিয়ানভুক্ত .সি এস ও এস এ২০ নং দাগ, আর এস ০৩ ও ৪ নং দাগে মোট ৬৬ শতাং কাতে ৫৬ শতাংশ জায়গা দখল নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়া ১ম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দেওয়ানী মোকদ্দমা মামলা রয়েছে। যার মামলা নম্বর ৩০/২৩।

 

অপরদিকে ভুক্তভোগী পরিবার বন্দর কলাগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত রাইসুল হকের ছেলে মাইনুল হক পারভেজ জানান, এই জায়গার বিষয়ে ঘটনার এক মাস আগে বন্দর থানায় জিডি করেন। যার জিডি নম্বর ৮৮২। তখন ওই জিডিতে আহত মাইনুল হক উল্লেখ করেন, সেকেন্দার আলীর ছেলে নুর মোহাম্মদ, রায়হান জাদা রবি, মো. রাব্বি, আল আমির ও মো. সায়েম মিয়া এসে আমাকে এই জায়গা ছেড়ে দেয়ার জন্য হুমকি দিয়ে যায়। আমি তাদেরকে কাগজপত্র নিয়ে বসার কথা বললে তারা বসবে না বলে জানান। তখন থেকে আমি এবং আমার পরিবার আতঙ্কে রয়েছি। পরে আমরা প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে বন্দর থানা গিয়ে জিডি করি। কিন্তু এই জিডির বিষয়ে প্রশাসন তৎপর না হওয়ায় আজকে আমাদেরকে পরিবারের সদস্যদেরকে মৃত্যুর সাথে লড়াই করতে হচ্ছে। আমার স্ত্রী আবিদা সুলতানা সুমা আমাকে রক্ষা করতে গিয়ে সে অনেক গুরুতর রক্তাক্ত হন। আজকে সে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছেন।

 

এসময় তার ভাই তানভীর বলেন, পিজা শামীমের গুন্ডাবাহিনী নিয়ে যেভাবে আমাদের জায়গা দখল করতে আসছে তাতে পুরো এলাকাবাসী আতঙ্কে ছিলেন। এমনভাবে  অর্ধশতাধিক হোন্ডা নিয়ে তারা যে জায়গা দখল করতে আসছে তাও অনেকে বুঝতে পারে নাই। আমরা এই পিজা শামীমসহ তার গুন্ডাবাহিনীদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবী জানাই। মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৬ মার্চের বন্দরের জায়গা দখলে গোলাগুলির ঘটনায় তার পরের ১৭ মার্চ বন্দর থানায় ১১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩১ জন অজ্ঞাত করে তানভীর আহম্মেদ বাদী হয়ে মামলা করেন। যারা মামলা নম্বর ৩৬। শহরের চিহ্নিত ভুমিদস্যু সেকেন্ড ইন কমান্ড নামে পরিচিত আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমকে প্রধান আসামী করে বন্দর থানায় মামলা করা হয়।

 

১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০৭/৩২৫/৩২৬/৪৩৬/৪২৭/৫০৬ পেনাল কোডে বন্দর থানায় মামলা হয়। মামলার আসামীরা হলেন, মৃত রোস্তম আলীর ছেলে আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম, সেকান্দার মিয়ার ছেলে নুর মোহাম্মদ, রায়হান জাদা রবি, মামুন, মনির হোসেন মনা, কবির, আমির হোসেন, উৎসব, মুকিত, মুহিদ, পাঠান রনিসহ অজ্ঞাত ৩০ জনের মত। তার মাঝে ইতোমধ্যে পুলিশ প্রশাসন ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন, রায়হান জাদা রবি, মামুন, কবির, মনির হোসেন, সিয়াম, রনি গ্রেপ্তার হন। ভুক্তভোগী পরিবারের চারজন আহত : এই ঘটনায় মামলার বাদি তানভীর আহম্মেদ এর বড় ভাই মাইনুল হক পারভেজ, পাভেজের স্ত্রী আবিদা সুলতানা সুমা আক্তার গুলিবিদ্ধ জীবন মরণের সাথে লড়াই করছেন।

 

এদিকে এই ঘটনায় টান টান উত্তেজনার পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ সদর বন্দরের মানুষের মাঝে আতঙ্ক চলমান রয়েছে। পুরো বন্দর যেন থমথমে বিরাজ করছে। এছাড়া মামলার প্রধান শহরের সন্ত্রাসী খ্যাত পিজে শামীম গ্রেপ্তার না হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবার ভয়ে আছে বলে জানান তারা। অভিযোগ রয়েছে, পিজা শামীমের পক্ষে জায়গা দখলের জন্য তার প্রধান সহযোগী মুকিত ও মনির কন্ট্রাক্ট করে থাকেন। তারাই বিভিন্ন এলাকাতে তাদের অনুসারীদের হোন্ডাবাহিনী নিয়ে এই ধরনের জায়গা দখলে অপারেশন চালান। তাদেরকে এর আগে  দুই জন জনপ্রতিনিধি হোন্ডাবাহিনী নামে অবহিত করেন। সেই সাথে এই হোন্ডাবাহিনীর লাগাম টেনে ধরার জন্য আহ্বান জানা প্রশাসনের প্রতি।

 

মামলা সূত্রে জানা যায়, ১৬ মার্চ বন্দরে জাতীয় পার্টির নেতা আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে নাসির, মুকিত, ডালিম, সিজারসহ ৪০-৫০ জন সন্ত্রাসী হামলায় অংশ নেয়। তারা অন্তত ১৫-২০ রাউন্ড গুলি ছোড়েন। ঘটনার সময় পুলিশও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ফরাজিকান্দা এলাকার প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হকের ছেলে মঈনুল হক পারভেজ (৪২), তার স্ত্রী  আবিদা সুলাতানা সোমা আক্তার (৩২), মা মাহফুজা হক (৬৫) এবং বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

 

জেলা পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল জানান, এজহারনামীয় পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

মামলার বাদি তানভীর আহমেদ বলেন, ‘একমাস আগে পিজা শামীমের নেতৃত্বে আমাদের জায়গায় একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেওয়া হয়। পরে কে বা কারা সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলে। দুইদিন আগে রাত ১টায় পিজা শামীম ও তার হোন্ডা বাহিনী আমাদের বাড়িতে এসে সাইনবোর্ড খুলেছি কেন জানতে চেয়ে হুমকি-ধমকি দেয়। এক কোটি টাকা চাঁদাও দাবি করে। ১৬ মার্চ সকালে সাড়ে ১০টার দিকে এসে তারা বাজারের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিতে থাকে। চারদিকে তাদের হোন্ডা-বাহিনী। পরে আমার ভাই ৯৯৯ এ পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আইসাও তাদের থামাতে পারেনি। পুলিশের সামনেই সোয়া ১টার দিকে তারা হামলা করে। গুলি লাগে আমার ভাইয়ের বা পায়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ভাবীসহ আরও কয়েকজন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’

 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তসলিম উদ্দিন বলেন, এই ঘটনায় বন্দর থানায় মামলা হয়েছে। মামলার এজহার ভুক্ত আসামীদের ১১ জনের মাঝে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামীরা হলেন, রায়হান জাদা রবি, মামুন, মনির হোসেন মনা, কবির। এছাড়া অজ্ঞাত নামা আসামীদের মাঝে সিয়াম, পাঠান রনি নামের আরও দুজন গ্রেপ্তার করা হয়।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর