মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৩ ১৪৩১

গিয়াসউদ্দিন ত্রিমুখী ষড়যন্ত্রের শিকার

পরিচয় প্রকাশ গুপ্ত

প্রকাশিত: ২৮ জুন ২০২২  

 


# তারেক রহমান গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট


দু’মাস আগে (২৫ এপ্রিল) ঢাকার পল্টনে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএপির সদস্য সচিব অধ্যাপক মামুন মাহমুদ ছুরিকাহত হন। পরবর্তিতে এ ঘটনার সঙ্গে সাবেক বিএনপি এমপি ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ও তার কনিষ্ঠপুত্র গোলাম মুহাম্মদ রিফাতকে জড়ানোর চেষ্টায় একটি বহুমুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়। ষড়যন্ত্রকারীদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল, মামুন মাহমুদকে হত্যা চেষ্টার অভিযোগ তুলে গিয়াসউদ্দিনকে বিএনপি থেকে বহিষ্কারকরন।

 

ঘটনার পর পর এ অভিয়োগে বেশ ক’জন নেতা কেন্দ্রে ছুটে যান। এদের সমন্বয় করে আড়াইহাজারের একজন নেতা, যিনি নিজেকে জেলা বিএনপির নিয়ন্ত্রক দাবী করেন। কিন্তু বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের বিচক্ষণতায় সে ষড়যন্ত্র ভেস্তে গেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সময়েচিত অভ্যন্তরীন তদন্তে বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়াল তথা প্রকৃত সত্য।


সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের বহিষ্কারের আবদার নিয়ে পূর্বোক্ত নেতৃবৃন্দ ঢাকা গেলে ক্দ্রেীয় যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহাম্মদ সহ শীর্ষ নেতারা তাদের জানিয়ে দেন, এ মুহুর্তে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার বা অব্যাহতি প্রদান করা হবে না। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহন করেন এবং বলেন, এ ব্যপারে অভ্যন্তরীন তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। অভিযোগ সত্য প্রমান হলে গিয়াসউদ্দিনকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।

 

এদিকে, গত সপ্তাহে চেয়ারপারসন গঠিত একটি তদন্ত টিম তাদের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে। তদন্ত টিম ঘটনার পারিপার্শ্বকতা যাচাই, থানার মামলা ও তার অগ্রগতি জানার চেষ্টা করেন এবং গিয়াসউদ্দিন ও মামুন মাহমুদের সঙ্গেও কথা বলেন। এ তদন্তে দলের অভ্যন্তরে বিরোধের ব্যপারটিও উঠে এসেছে। উঠে এসেছে নারায়নগঞ্জ-৪ আসনে আগামী নির্বাচনের ব্যপারটি। ২০০৮ সালে এ আসনে মনোনয়ন পাওয়া বিএনপি নেতা শিল্পপতি শাহ আলম ইতিমধ্যে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমানের সঙ্গে লড়তে ভয় গেয়ে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তিতে সম্মিলিত বিরোধী জোট নেতা হিসেবে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম নেতা মনির হোসাইন কাসেমীকে এ মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু নির্বাচনের দিন কাসেমী ভোটের ময়দান থেকে পালিয়ে যান। এ সব কারণে এবার এ আসনে গিয়াসউদ্দিনের দলীয় মনোনয়ন পাবার অনুকুল অবস্থা বিরাজ করছে। 


এদিকে, মামুন মাহমুদেরও নির্বাচন করার খায়েস রয়েছে। কিন্তু সামনে বাঁধা গিয়াসউদ্দিন। তাকে সরাতে না পারলে তার কপাল খুলবে না। ওদিকে, এ আসনে বর্তমান আওয়ামী লীগ এমপি শামীম ওসমানও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কিন্তু তিনি গিয়াসউদ্দিনকে কঠিন পাল্লা মনে করেন। তিনি গিয়াসউদ্দিনকে এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ চান। কারণ, ইতিপূর্বে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে তিনি গিয়াসউদ্দিনের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন এবং সে পরাজয়ের পর তাকে সপরিবারে দলবল সহ দেশত্যাগ করতে হয়েছিল। ওদিকে, সিদ্ধিরগঞ্জের ত্রাস সাত খুনের আসামী নূর হোসেন বর্তমানে জেলে থাকলেও  তার ভাই-ভাতিজারাই এখনো সিদ্ধিরগঞ্জ নিয়ন্ত্রন করছে। তারা চায় না গিয়াসউদ্দিন বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে আবার এমপি হোক। অতীতে নূর হোসেন তার ছোটভাই নূরউদ্দিনকে মামুন মাহমুদের সঙ্গে ভিড়িয়ে দিয়েছিল। অভিযোগ রয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জে নূর হোসেনের টাকায় বিএনপি কার্য্যালয় ছিল।

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের অধিবাসীরা জানিয়েছেন,২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত এমপি থাকাকালীন গিয়াসউদ্দিন কাশীপুর সেতু, আলীরটেক সেতু, বক্তবলিতে গণহত্যা স্মৃতিস্তম্ভ, মাসদাইরে প্রতিরোধ স্মৃতিস্তম্ভ, চাষাঢ়ায় বিজয়স্তম্ভ এবং এক ডজন কালভার্ট নির্মান করেছেন। তাছাড়া, ফতুল্লা এলাকায় তিনি অনেক কর্মী, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ী সৃষ্টি করেছেন। এ কারণে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে, ভোট কারচুপি ঠেকাতে ও ক্ষমতাসীনদের রুখে দাঁড়াতে তার কর্মীর কোন অভাব হবে না।


রাজনৈতিক মহলের মতে, শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে গিয়াসউদ্দিনকে মনোনয়ন দিলে তিনি অন্তত মনির হোসাইন কাসেমীর মতো যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যাবেন না। বরং, সেই ভোটযুদ্ধ হবে বাঘ-সিংহে লড়াইয়ের মতো।এমই/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর