শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গুমোট থমথমে পরিবেশ

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# ডেডলাইন ১০ ডিসেম্বর
# বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে হবে: শাহ নিজাম
# শত মামলা দিয়েও সমাবেশ বাঞ্চাল করতে পারবে না: গোলাম ফারুক

 

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার মহা সামবেশ নিয়ে সারাদেশে আলোচনা ছাড়িয়ে  বিদেশে পর্যন্ত আলোচনা হচ্ছে। এই মহা সমাবেশ ঘিরে রাজনৈতিক দল গুলোতে ব্যপক আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি বলছে ১০ ডিসেম্বরের পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।

 

 

খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমানের নির্দেশে দেশ চলবে। কিন্তু ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছে বিএনপি সমাবেশের নামে নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তা প্রতিহতের জন্য প্রস্তুত আছেন। এছাড়া বিএনপির শীর্ষ নেতারা বলছে ঢাকার মহা সমাবেশকে ভয় পেয়ে সরকার বিভিন্ন ভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। কিন্তু তাদের কোন বাধায় কাজ হবে না।

 

 

দুই দলের নেতাদের পাল্টা পাল্টি বক্তব্যে রাজনৈতিক মহলে টান টান উত্তেজনা কাজ করছে। একই সাথে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠেছে ১০ ডিসেম্বর নিয়ে দেশে এত অস্থিরতা কেন। ওই দিন দেশে কি হতে যাচ্ছে। প্রশাসনই বা বিএনপিকে এতগুলো শর্ত দিয়ে পল্টনে অনুমতি না দিয়ে সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে অনুমতি দিয়েছেন। এই সকল প্রশ্ন উত্তরের জন্য বিএনপি চেয়ে সরকারের দিকে তাকিয়ে আছে।  

 

 


এদিকে ঢাকার মহা সমাবেশকে নিয়ে দুই দলের মাঝে ব্যপক প্রভাব পরেছে নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে। এই সমাবেশ ঘিরে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বিভিন্ন ভাবে হুঙ্কার দিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি কোন নৈরাজ্য সৃষ্টি হলে তা প্রতিহতের জন্য নেতা কর্মীদের সজাগ থাকার আহবান জানিয়েছেন। প্রয়োজনে বাশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

 

 

তবে বিএনপি নেতারা বলছে ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ বাঞ্চাল করার জন্য নানা ভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। এমনকি নারায়ণগঞ্জ হাজার খানিক বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার আতঙ্ক তৈরী করে রেখেছে প্রশাসন। এই মামলা হামলায় কোন কাজ হবে না বলে দাবী করেন বিএনপি নেতারা।  

 

 

অপরদিকে ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ করতে চেয়েছে বিএনপি। দলটি এরই মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে নয়াপল্টনে কর্মসূচি করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে। নয়াপল্টনের পরিবর্তে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়ে এবং মিছিল নিয়ে না যাওয়াসহ ২৬ শর্তে অনুমতি দিয়েছে ঢাকা পুলিশ কশিনার (ডিএমপি) ।

 

 

এছাড়াও বিএনপির সমাবেশ ঘিরে এরইমধ্যে মাঠে থাকার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচি নেই। তবে তাদের সতর্ক অবস্থান থাকবে। পাড়া-মহল্লায় তারা শক্ত অবস্থান নেবে। ঢাকার প্রবেশ দ্বারেও থাকবে মহড়া।

 

 

দুই দলের এই মুখোমুখি অবস্থায় সংঘাত হবে কি না, এই প্রশ্ন করলে উত্তরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা সংঘাত চান না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করতে চান। তবে কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে সমুচিত জবাব দেবে হুঁশিয়ারি দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।

 

 

এ নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তারা বলছেন, সংঘাতের বিষয়টি অগ্রিম বলা যায় না। তবে প্রত্যেক দলকেই দায়িত্বশীলতার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে ১০ ডিসেম্বর ঘিরে দুই দলের রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের মাঝে এক উত্তেজনা কাজ করছে।

 

 

এক দল প্রতিহতের ঘোষনা দিয়েছে। আরেক দল শত বাধার মাঝেও তা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। এছাড়া এই সমাবেশ ঘিরে স্থানীয় দুই দলের নেতারা পাল্টা পাল্টি বক্তব্য দিয়ে রাজপথ গরম করে যাচ্ছে। এমনকি দুই দলই রাজপথ দখলে রাখতে চায়। তবে বিএনপি নেতাদের দাবী সরকারের মাঝে পতনের আতঙ্ক তৈরী হয়ে আছে।

 

 

আবার কেউ কেউ বলছে ক্ষমতাসীনরা পলানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত ১৩ দিনের ব্যবধানে নারায়ণগঞ্জ বিনপি নেতাদের নামে যে ভাবে একের পর এক মামলা হচ্ছে তারা সমাবেশ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না তা নিয়ে জটিলতা তৈরী হয়ে আছে। আর এতে করে দুই দলের নেতাদের মাঝে গুমোট ভাব তৈরী হয়ে আছে।

 

 

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন বলেন, সরকার ভয় পেয়ে ১০ ডিসেম্বর সমাবেশকে বাঞ্চাল করার জন্য পায়তারা করছে। তারই অংশ হিসেবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা গায়েবী মামলা দিচ্ছে। যাতে করে বিএনপি নেতা কর্মীরা অংশ গ্রহন করতে না পারেন।

 

 

একই সাথে প্রশাসেনর লোকজন বিএনপি নেতাদের বাসায় বাসায় তল্লাশীর নামে হয়রানি করছে। তাদের এই কর্মকান্ডের নিন্দা জানাই।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন বলেন,  শেষ রক্ষা পেতে এবং অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখতে সরকার আবারো সেই পুরোনো খেলা শুরু করেছে।

 

 

নিশিরাতের মাফিয়া সরকার পতনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে ১০ ডিসেম্বর বিএনপির কর্মসূচিকে নিয়ে ‘পোড়া মাটি নীতি’ অবলম্বন করেছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিরোধী দলীয় কর্মসূচিকে বানচাল করতে নানা ষড়যন্ত্র করেছে। বিএনপির নেতাকর্মীদের হত্যা-নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

 

 

অসংখ্য ককটেল ফাটানোর অভিযোগে পুলিশের মামলা দায়ের, কিন্তু কেউ ককটেল ফুটতে দেখেনি বা শোনেনি। নারায়ণগঞ্জে পুলিশের মামলায় জাপানে থাকা প্রবাসী ছাত্রদল নেতা গায়েবি মামলার আসামি। সেই পুরোনো কায়দায় সারা দেশে আবারও গায়েবি মামলার হিড়িক চলছে।

 

 

তবে আমরা তাদের এই মামলা হামলাকে ভয় পাই না। কয়েক হাজার মামলা দিয়েও তারা বিএনপি নেতা কর্মীদের দমাতে পারবে না। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের পরে সরকার টিকে থাকতে পারবে বলে তারা এখন মামলা দিয়ে নেতা কর্মীদের দমাতে চাচ্ছেন। কিন্তু এতে করে কোন কাজ হবে না।

 

 

মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন জানান, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশকে সরকারে নিজেদের পতনের ইঙ্গিত মনে করছেন। মূলত আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে নেতাকর্মীদের ঠেকাতেই সরকারি দল আওয়ামী লীগের পক্ষে মিথ্যা ঘটনা সাজিয়ে গায়েবি মামলা দায়ের করেছে।

 

 

নারায়ণগঞ্জে এ ধরণের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। একই সঙ্গে এই মিথ্যা সাজানো গায়েবি মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানাই। তাছাড়া কোনো ষড়যন্ত্র করেও ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশে নেতাকর্মীদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।

 

 

অপরদিকে বিএনপি নেতাদের হুঙ্কার দিয়ে গতকাল এক সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা বলেন,  বিএনপি আজ সমাবেশের নামে দেশে একটি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। ওরা ১০ ডিসেম্বর পল্টনে সমাবেশ করে ঢাকা শহরকে আগুন লাগিয়ে দিতে চায়।

 

 

জননেত্রী শেখ হাসিনা বেঁচে থাকতে আমরা ওদের (বিএনপি) এই অপকর্ম করতে দিবো না। বাংলার জনগণ নিয়ে ওদের প্রতিরোধ করবো। আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা বাক স্বাধীনতা বিশ্বাস করি তার মানে এই না যে, ওরা যা ইচ্ছা তাই করবে যা ইচ্ছা তাই বলবে।

 

 

মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম বলেন, (বিএনপি) নাকি ১০ তারিখের পর দেশ চালাবে। কিন্তু আমার প্রশ্ন হলো কে চালাবে খালেদা নাকি তারেক? দুজনই তো আসামী। একজন এতিমের টাকা মাইরা খাইছে, আরেকজন বাংলাদেশের মানুষের টাকা মাইরা খাইছে। খাম্বা তারেক নামে পরিচিত।

 

 

হাওয়া ভবনে বসে খাম্বা বিক্রি করে লাখ লাখ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। সেখানে ডিস্কোতে যাচ্ছেন, নাচ গান করছে আর বোকারা বাংলাদেশে বসে বড় বড় কথা বলছেন। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা, মুক্তির কথা বলেন।

 

 

বাংলাদেশের মানুষ এতো বোকা না, খায় না (মূল্যহীন কথা) এগুলা। তাদের নৈরাজ্যকে প্রতিহত করার জন্য বাঁশের লাঠি নিয়ে প্রস্তুত থাকার আহবান জানান তিনি। সব কিছু মিলিয়ে তাদের পাল্টা পাল্টি বক্তব্যে মানুষের মাঝেও আতঙ্ক তৈরী হচ্ছে। সেই সাথে রাজনীতিতে টান টান উত্তেজনা হচ্ছে। তবে ১০ ডিসেম্বর কি হবে তা ওই দিন মানুষের কাছে পরিস্কার হবে।  

 

 

মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমান বলেছেন, তারেক রহমান বিদেশে আছেন তারতো কোন অসুবিধা হচ্ছে না। দেশ থেকে পাঠাচ্ছেন আর তিনি আরাম আয়েশে খাচ্ছেন। আগুন সন্ত্রাস করলে আপনাদের নামে মামলা হবে। তিনিতো আপনাদের পাশে থাকবেন না।

 

 

তিনি আরও বলেন, ১০ তারিখের সমাবেশে নাকি খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন এবং তারেক জিয়ার নির্দেশে নাকি দেশ চলবে। দেশটা কি মগের মল্লুক। ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরমান বলেন, দেশের মধ্যে একটা অরাজকতা সৃষ্টি করার জন্য বিএনপি জামাত চেষ্টা করছে।

 

 

আপনারা সবাই সর্তক থাকবেন। আমাদের জামাত বিএনপির থেকে রক্ষা পেতে হলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এবং তাদের প্রতিহত করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর