বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

গোদনাইলে মাদ্রাসা ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ, গ্রেপ্তার ৭

আরিফ হোসেন

প্রকাশিত: ১২ মার্চ ২০২১  

সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলে সাব্বির হোসেন (১৪) নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে নির্মম ভাবে পিটিয়ে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে পরিবারের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মাদ্রাসার শিক্ষক ও   ছাত্রের বন্ধুসহ ৭জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

 

শুক্রবার (১২ মার্চ) সকালে নিহত ছাত্রের বাবা বাদী হয়ে সিদ্ধারগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করলে দুপুরে পুলিশ রসুলবাগ মাঝিপাড়ার রওজাতুল উলুম মাদ্রাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করে। পরে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে শিক্ষকদের আদালতে পাঠানো হয়।

 

নিহত মাদ্রাসা ছাত্র রূপগঞ্জ উপজেলার শান্তিনগর এলাকার জামাল হোসেনের ছেলে। সে রওজাতুল উলুম মাদ্রাসার হিফজ বিভাগের ছাত্র।

 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মাদ্রাসার শিক্ষক শওকত হোসেন সুমন (২৬), জোবায়ের আহম্মেদ (২৬) ও আব্দুল আজিজ (৪২)। ১৮ বছরের নিচে হওয়ায় ৪ সহপাঠীর নাম প্রকাশ করা হয়নি।

 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এএসএম শাহীন বলেন, ১০ মার্চ ১১টার দিকে মাদ্রাসার শিক্ষক জোবায়ের নিহতের পরিবারকে জানায় সাব্বির মাদ্রসার ছাদে উঠার সিড়ির পাশে ফাঁকা রড এর সাথে গলায় গামছা দিয়ে আত্মহত্যা করেছে, লাশ নিয়ে যান। পরে স্বজনরা পুলিশে কোন অভিযোগ না দিয়ে মাদ্রাসা থেকে লাশ নিয়ে রূপগঞ্জে নিজ এলাকায় দাফন করে।

 

তবে দাফনের আগে গোসলের সময় নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়ে নিহতের বাবা অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। পরে ৩ মাদ্রাসার শিক্ষক ও নিহতের ৪ বন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, মারধর করে হত্যা করে আত্মহত্যার নাম দিয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি ময়নাতদন্তের পরই বলা যাবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা। কবর থেকে লাশ তোলা হবে। তিন শিক্ষককে সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। একই সাথে ৪ বন্ধুকে কিশোর আইনে পাঠানো হয়েছে।’

 

নিহত সাব্বির হোসেনের বাবা জামাল হোসেন জানান, ১০ মার্চ সকাল সোয়া ৯টায় আমার ছেলে মাদ্রাসার শিক্ষক জোবায়েরের মোবাইল থেকে তার মাকে ফোন দেয়। ওই সময় সে সুস্থ ছিল। তার মাকে বিভিন্ন বিষয়ে বলেছে। সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ফোন দিয়ে ওর মাকে শিক্ষক জোবায়ের বলে সাব্বির আত্মহত্যা, করছে দ্রুত মাদ্রাসায় আসেন।’

 

তিনি বলেন, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত মাদ্রাসায় যাই। সেখানে যাওয়ার পর আমার সন্তানের লাশ দেখতে দেওয়া হয়নি। তার আগে (মাদ্রাসার শিক্ষক ও পরিচালনা কমিটি) আমাদের একটি আলাদা রুমে নিয়ে বসিয়ে বলে আগে কথা শুনেন পরে লাশ পাবেন। তখন তারা বলেন, ‘আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং আওয়ামীলীগের সভাপতি। তোমরা যদি নিজের ছেলের লাশ নিয়ে যেতে চাও এবং নিজেরা ফাঁসতে না চাও তোমরা একে গোপনে নিয়ে যাও আর গোপনে আলাদা ভাবে মাটি দিয়ে দাও। এমন কোন কিছু করবা না যাতে এ মাদ্রাসার ক্ষতি বা বদনাম হয়।’ এ কথা বলায় আমি ও আমার স্ত্রী ভয় পেয়ে যাই। এরপর তাদের কথায় রাজি হই যে কোন অভিযোগ করবো না। তখন লাশ দেয়।’

 

তিনি আরো বলেন, ‘লাশ এনে বাড়িতে গোসল করানোর সময় মহল্লাবাসী সহ আমরা সবাই দেখতে পাই সাব্বিরের মাথায়, চোখের উপরে কপালে, ঠোঁঠে ও দাড়ির নিচে, গলায় আঘাতের চিহ্ন। আর পায়ে মারধরের চিহ্ন। শরীরটা থেথলানো। তখন এলাকাবাসী বলতে থাকে এটা আত্মহত্যা না হত্যা।’

 

তিনি বলেন, ‘আমার ছেলেকে পিটিয়ে কষ্ট দিয়ে মারা হয়েছে। তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে দিয়েছে। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।’

 

রওজাতুল উলুম মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি হলেন সিটি করপোরেশনের ১০নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন। তাঁর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তার স্ত্রী পরিচয়ে বলেন, তিনি এখন ঘুমিয়ে আছেন। এখন ডাক দেওয়া যাবে না। এ বলে ফোন রেখে দেন।
 

এই বিভাগের আরো খবর