বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৩  

 

# ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে নিয়ে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন রূপগঞ্জের এই চিহ্নিত সন্ত্রাসী
# পালানোর আগেই সীমান্ত এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোশাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব
# জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোশা ও তার সহেযোগীর ৭ দিন রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

 

 

রূপগঞ্জে আতঙ্কের রাজত্ব কায়েম করা মোশা বাহিনীর প্রধান শীর্ষ সন্ত্রাসী মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া ওরফে মোশা অবৈধভাবে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে পালাতে চেয়েছিলেন। সম্প্রতি আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকার বাসিন্দা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ওপর মোশা বাহিনীর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হওয়ায় গ্রেপ্তার এড়াতে দেশ ছাড়ার পায়তারা করছিলেন মোশা। এজন্য নিজের অন্যতম সহযোগী দেলোয়ারকে নিয়ে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে যান তিনি।

 

সময় ও সুযোগের অপেক্ষায় আত্মগোপনে ছিলেন সীমান্তবর্তী ওই এলাকায়। কিন্তু ভারতে পালানোর আগেই গত বুধবার রাতে যৌথ অভিযান চালিয়ে হত্যা-ধর্ষণ-চাঁদাবাজিসহ ৪০টিরও বেশি মামলার আসামি মোশাকে তার সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। পরে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোরে নাওড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গুলি জব্দ করা হয়।

 

গতকাল দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। র‌্যাব জানায়, মোশারফ ওরফে মোশা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। মাত্র ২০ বছর বয়সেই অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে সে। পরে রূপগঞ্জসহ নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধের রাজত্ব কায়েম করে। অর্থের বিনিময়ে ভাড়াটে সন্ত্রাসী হিসেবে বিভিন্ন পক্ষের হয়ে কাজ করতো মোশা। এজন্য গড়ে তুলেছিলো সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী।

 

মোশা বাহিনী হিসেবে পরিচিত ওই বাহিনীর সদস্যরা দেশি-বিদেশি অস্ত্রের মুখে স্থানীয়দের ভয়ভীতি দেখিয়ে অপরাধ কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। মোশার নেতৃত্বে তার বাহিনীতে সক্রিয় রয়েছে ৭০-৮০ জন সন্ত্রাসী। গত ২৫ মে এই বাহিনীর সদস্যরা রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকার বাসিন্দা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। ঘটনাস্থল থেকে মোশাকে গ্রেপ্তার করা হলে তার বাহিনীর সদস্যরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপ, গুলি বর্ষণ ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোশাকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পর থেকেই গ্রেপ্তার আতঙ্কে ছিল মোশারফ। এজন্য দেশ ছেড়ে পালানোর পরিকল্পনা করেছিল সে।

 

গতকালের সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, মোশার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, অস্ত্র, বিস্ফোরক দ্রব্য, চাঁদাবাজি, মাদক, প্রতারণাসহ ৪০টির বেশি মামলা রয়েছে। এসব মামলায় একাধিকবার কারাভোগও করেছে সে। গত ২৫ মে রূপগঞ্জে মোশারফের নেতৃত্বে তার বাহিনীর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ ২০ থেকে ২৫ জন গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায় রূপগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করে। হামলার বিষয়টি প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় প্রচারের পর এ নিয়ে দেশব্যাপী চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।

 

অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে তাৎক্ষণিকভাবে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে র‌্যাব। তারই ধারাবাহিকতায় সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখার সহায়তায় গত বুধবার রাতে কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গামারীতে যৌথ অভিযান চালায় র‌্যাব-১১ ও র‌্যাব-১৩। অভিযানে সহযোগী দেলোয়ারসহ গ্রেপ্তার হয়েছে মোশা। গ্রেপ্তারের পর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে রূপগঞ্জের নাওড়া এলাকা থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

 

মোশার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে কমান্ডার মঈন বলেন, মোশা তার বাহিনী নিয়ে রূপগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় হত্যা, হত্যাচেষ্টা, ধর্ষণ, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, জমি দখল, মাদক কারবারসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। মূলত অর্থের বিনিময়ে ভূমিদস্যুদের সহযোগীতা করার জন্য এই বাহিনী গড়েছে মোশা। বাহিনীতে ৭০ থেকে ৮০ জন সদস্য রয়েছে। এই সন্ত্রাসী দলের সদস্যরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তার, অবৈধভাবে জমি দখল, হুমকি, ছিনতাই ও মাদক ব্যবসাসহ অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করত।

 

কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখাতো। অবৈধভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং অন্যান্য সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তারা দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করত। এলাকায় আতঙ্ক ছড়াতে তিনজন সশস্ত্র বডিগার্ড নিয়ে চলাফেরা করতেন মোশা। তার ও তার বাহিনীর অত্যাচারে এলাকার সাধারণ জনগণ সবসময় আতঙ্কে থাকতো।

 

রাজধানীর সন্নিকটে একটি এলাকায় কীভাবে এতো দীর্ঘদিন ধরে নিজের অপরাধের রাজত্ব চালিয়ে আসছে মোশা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে খন্দকার আল মঈন বলেন, মোশা যে কখনো আইনের আওতায় আসেনি তা কিন্তু না। সে কমপক্ষে পাঁচবার গ্রেপ্তার হয়েছে। বিভিন্ন মামলায় কারাভোগও করেছে। এরপর আইনানুগ প্রক্রিয়ায় জামিনে জেল থেকে বেরিয়ে পূণরায় অপরাধে জড়িয়েছে। মোশারফের কোনও রাজনৈতিক পরিচয় আছে কিনা জানতে চাইলে র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, সে একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে হত্যা, ধর্ষণ, ছিনতাই, অস্ত্র, মাদকসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা রয়েছে।

 

২০ বছর বয়স থেকে গ্যাং বানিয়ে অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে সে। আধিপত্য বিস্তারের জন্য মোশা গড়ে তুলেছে এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী বাহিনী। অর্থের বিনিময়ে অনেকেই এই বাহিনীকে ব্যবহার করে থাকে।

 

মোশার সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া দেলোয়ার সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, সে মোশার ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত। মোশা বাহিনীর সদস্য হিসেবে রূপগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত সে। তার বিরুদ্ধে পাঁচটির বেশি মামলা রয়েছে। দেলোয়ারও একাধিকবার কারাভোগ করেছে। মোশা ও দেলোয়ারকে পাঁচদিনের রিমান্ডে চেয়েছে পুলিশ গ্রেপ্তারের পর মোশা ও তার সহযোগী দেলোয়ারকে জব্দকৃত অস্ত্রসহ রূপগঞ্জ থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।

 

রূপগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আতাউর রহমান জানান, মোশারফ হোসেন মোশা ও তার সহযোগী দেলোয়ার হোসেনকে র‌্যাব সদস্যরা চার রাউন্ড গুলি ভর্তি ম্যাগজিন ও একটি পিস্তলসহ রূপগঞ্জ থানা পুলিশে সোপর্দ করেছেন। এই ঘটনায় র‌্যাবের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। পুরানো মামলার রেফারেন্সসহ ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে আসামী মোশা ও দেলোয়ারকে নারায়ণগঞ্জের বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান জানান, গতকাল বিকেলে শুনানি শেষে রিমান্ড বিষয়ে আদেশের জন্য আগামী ৪ মে দিন ধার্য করে আসামিদের কারাগারে পাঠিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা সারোয়ার।এস.এ/জেসি

 

এই বিভাগের আরো খবর