শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

গ্রেপ্তারে অনীহা পুলিশের, অভিযোগ শুভ্রত’র পরিবারের

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২২  

# মনিরর গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়ে এলাকা জুড়ে পোষ্টার
# শুভ্রত হত্যার আসামীদের ফাঁসি চান নিহতের বোন

 

নগরীর দেওভোগ দিঘিরপাড় এলাকায় শুব্রত ২২ নামের এক যুবককে বাসা থেকে ঢেকে নিয়ে রাতের আঁধারে নির্যাতন করে বাসার সামনে রেখে যায়। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত রোববার মারা যায়। নিহত শুভ্রত’র পরিবারের অভিযোগ নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের নিদের্শে খুন হওয়ায় পুলিশ প্রশাসন নিরব ভূমিকা পালন করছে।

 

এখনো আসামীদের গ্রেপ্তার করতে পারে নাই। এতে বুঝা যায় পুলিশ টাকার কাছে নিরব হয়ে যা। এছাড়া পরিবারের সাথে কথা বলে জানা যায়, শুভ্রত হত্যার নির্দেশ দাতা মনির সন্ত্রাসবাহিনীর হুমকির ভয়ে আমরা এলাকা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি। নিহতের পরিবারে দাবী হত্যাকারী দের গ্রেপ্তার করে তাদের যেন কঠোর শাস্তি দেয়া হয়। সেই সাথে কাউন্সিলরের গ্রেপ্তারের দাবী জানান।

 

এদিকে এলাকা গিয়ে মানুষের সাথে কথা হলে তারা যুগের চিন্তার প্রতিবেদককে জানান, এইভাবে কোন মানুষ এক জন আরেকজনকে মারতে পারে। শুভ্রত’র হত্যাকারীদের  ফাঁসি হওয়া উচিৎ যাতে করে আর কোন কিশোরগ্যাংয়ের জন্ম এলাকা না হয়। একই সাথে এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যেন শেল্টার দিয়ে কিশোরগ্যাং তৈরী করতে না পারে।

 

১৪ নম্বর  ওয়ার্ড এলাকার দিঘিরপাড় ঘুরে দেখা যায় পুরো এলাকা জুড়ে শুভ্রত’র খুনিদের ফাঁসি চেয়ে পোষ্টারিং করা হয়। পোষ্টারে লেখা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনির এর হুকুমে তার লালিত-পালিত সন্ত্রাস বাহিনী শুভ্রত মণ্ডলকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীদের ফাঁসি চেয়ে পুরো এলাকা জুড়ে পোষ্টার টানানো হয়। অপরাধীদের নিয়ে এলাকায় সমালোচনা চলছে। অপরাধীদের যেন কঠিন শাস্তি দেয়া হয়।

 

নিহত শুভ্রত’র বোন শম্পা মণ্ডল বলেন, আমার ভাইয়ের উপর যখন হামলা হয় তখন আমরা সদর থানায় কাউন্সিলরের মনিরের নাম দিয়ে অভিযোগ দায়ের করি। কেননা কাউন্সিলর মনিরের নির্দেশে তার সন্ত্রাসবাহিনী আমার ভাই শুব্রতকে নির্যাতন করে হত্যা করে। আমার ভাই যখন হাসপাতালে মূমুর্ষ অবস্থায় থাকে তখন আমরা সদর থানার এস আই নুরে আলমকে ফোন দিয়ে বলি আমার ভাইয়ের অবস্থা খারাপ। আপনিতো কোন আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন না।

 

শুব্রত মারা যাওয়ার আগে তাকে যাারা নির্যাতন করে হত্যা করেছে তাদের নাম বলে গেছে। শম্পা মণ্ডল ভাই হত্যার বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, আমার ভাইকে মেরে একজন সন্ত্রাসী কাউন্সিলর মনিরকে ফোন দিয়ে বলেছে ভাই ওকেতো মেরেছি এখন কি করবো। তখন ফোনের ওই পাশ থেকে কাউন্সিলর মনির তার সন্ত্রাসবাহিনীর সদস্যকে বলে ছিনতাইকারী বলে রাস্তায় ফেলে দে।

 

এখন জনপ্রতিনিধি হয়ে তিনি কি করে এই ধরণেই কথা বলতে পারেন। আমার ভাই মারা যাওয়ার আগে তাকে যে কাউন্সিলর মনিরের নির্দেশে মেরে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আমরা এজহার কপিতে কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান মনিরের নাম দিছি। পুলিশ তার নাম বাদ দিয়ে দিছে।


পুলিশ প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে নিহতের বোন বলেন, আমরা অভিযোগ দেয়ার পর থেকে পুলিশের কোন তৎপরতা দেখতাছি না। একই সাথে তাদের কাছে কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না। তারা উল্টো আমার ভাইয়ের নাম্বার চায় অথচ কাউন্সিলর মনিরের মোবাইল নাম্বার চেক করলে আমার ভাইয়ের খুনিরা যে তার সাথে কথা বলেছে তা পেয়ে যাবে।

 

মামলার তদন্তকারী এস আই নূরে আলম কাউন্সিলর মনিরের কাছ থেকে টাকা খেয়ে আসামীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে কোন তড়িৎগতি দেখতাছি না। অথচ আসামীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় দেদারছে গুরে বেরাচ্ছে। কিন্তু তাদের গ্রেপ্তার করা হনা। আমরাও পুলিশ প্রশাসন থেকে কোন সহযোগিতা পাচ্ছি না।


ভাই হত্যার বিচারের দাবী জানিয়ে লিপি মণ্ডল বলেন, আমরা আমাদের ভাইয়ের হত্যার নির্দেশ দাতা কাউন্সিলর মনিরের গ্রেপ্তারের দাবী জানাই। সেই সাথে তার নামে কেন বাদ দেয়া হলো  তা জানতে চাই। পাশা পাশি আমার ভাই শুভ্রত হত্যার মনিরের সন্ত্রাসবাহিনীর গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাদের ফাঁসি চাই। কাউন্সিলর মনিরের কিশোরগ্যাং সন্ত্রাসবাহিনীর হুমকি ধমকির ভয়ে আমরা দীঘিরপার এলাকার বাসা ছেড়ে নন্দী পাড়া বাসা নিয়েছি।

 

আমার মা এখন একা হয়ে গেছে। তাদের ভয়ে আমরা বাড়ী থেকে বের হতে পারছি না। আমার ভাইকে যেভাবে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে এইভাবে যেন কোন মায়ের সন্তানকে হারাতে না হয় তার জন্য আমরাপ প্রশাসনের কাছে তার সঠিক বিচার চাই। আমার ভাইয়ের খুনিরা যদি পার পেয়ে যায় তাহলে এখানকার মনিরের সন্ত্রাসবাহিনীর অত্যাচারে মানুষ এলাকায় থাকতে পারবে না। আমরা আমার ভাই হত্যাকারীদের কঠিন বিচার চাই।


উল্লেখ্য রোববার (২২ মে) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুভ্রত মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে ১৬ মে রাতে তাকে বাসা থেকে ঢেকে নিয়ে কাউন্সিলরের মনিরের লোকজন নির্যাতন করে বলে জানান নিহত শুব্রত। যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সহ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে।


শুভ্রত হত্যার মামলার তদন্তকারী এস আই নুর আলম সিদ্দিকী জানান, ইতিমধ্যে আমরা এই হত্যা মামলার মানিক নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তার করার জন্য জেলা পুলিশ সুপার কঠোর নির্দেশ দিয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে র‌্যাব, ডিবি, পুলিশ সাবই মিলে কাজ করছি।

এই বিভাগের আরো খবর