শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

ঘরে ঘরে ভুঁইফোড় লীগ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০২১  

#এরা প্রথমে ছবি তোলে, প্রচারণা চালায় পরে আ’লীগার হতে চায় : আব্দুর হাই


#কাউয়া-ব্যাঙ নিমূর্লে আওয়াজ তুলেছি, এবার লাগাম টানতে হবে : আনোয়ার হোসেন


#নিজেদের ব্যানারে প্রতিষ্ঠিত নেতাদের দাওয়াত দিয়ে বৈধতা নিতে চায় : এড. দিপু



প্রায় একযুগ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ। তবে ক্ষমতায় থাকার পরও দারণ কিছু অর্জন ম্লান হতে চলেছে বড় এই রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় গজিয়ে ওঠা কিছু নামধারী লীগের কারণে। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠায় অন্যতম অবদান রাখা নারায়ণগঞ্জেও এর হালচিত্র প্রায় একই রকম।

 

সূত্র জানিয়েছে, জেলা  ও মহানগর আওয়ামী লীগ, যুব লীগ, মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, ছাত্র লীগসহ সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি নিয়মিত আপডেট না থাকায় লীগ নামধারী প্রায় ৭০টিরও অধিক লীগ পরিচয়ধানকারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কারণে কোনঠাসা আওয়ামী লীগের ত্যাগীরা। সূত্র জানায়, লীগ পরিচয়ে এসব ভূঁইভোড় সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা প্রথমে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দল এবং জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগসহ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত ত্যাগীদের সাথে নানা কৌশলে ভিড় জমায়। পরে ছবি তুলে প্রভাববিস্তার করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও এলাকায় ব্যানার ফ্যাস্টুন দিয়ে ভরে ফেলে। এসব ভূঁইভোড় লীগের নেতারা বিভিন্ন এলাকায় নানা অপকর্মে সামনের সারিতে থাকে।

 

তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ খোদ আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা ত্যাগী নেতারা। যদিও এসব ভূঁইফোড় নেতাদের তারা হাই্রব্রীড-কাউয়াসহ নানানামে ডাকেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চেও এসব ভূঁইফোড় লীগ ধারী ব্যক্তিদের উদ্দেশ্য করে নিজেদের আক্ষেপ ব্যক্ত করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বারবার বলেও এসব ভূঁইফোড় লীগ ধারীদের লাগাম টেনে না ধরতে পারায় নিশ্চুপ হয়ে গেছেন  খোদ আওয়ামী লীগের ত্যাগীরা।

 


সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৭০টিরও বেশি লীগ নাম ধারী ভূঁইফোড় সংগঠন তৈরি হয়েছে। অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, এসব ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোর সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই। এসব সংগঠন তৈরি হয়েছে ঝোপ বুঝে কোপ মারার পরিকল্পনা নিয়ে।আর এরাই আওয়ামী লীগকে নানাভাবে বিতর্কিত করার মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। কিছুতেই এসব সংগঠনের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছেনা। এমন সংগঠনগুলো হলো,  ১. জননেত্রী শেখ হাসিনা  কেন্দ্রীয় লীগ,  ২. জননেত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় সংসদ,  ৩. আওয়ামী প্রচার লীগ,  ৪. আওয়ামী সমবায় লীগ,  ৫. আওয়ামী তৃণমূল লীগ,  

 

৬. আওয়ামী ছিন্নমূল হকার্স লীগ,  ৭. আওয়ামী  মোটরচালক লীগ,  ৮. আওয়ামী তরুণ লীগ,  ৯. আওয়ামী রিকশা মালিক-শ্রমিক ঐক্য লীগ,  ১০. আওয়ামী যুব হকার্স লীগ, ১১. আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগ,  ১২. আওয়ামী পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ১৩. আওয়ামী পরিবহন শ্রমিক লীগ,  ১৪. আওয়ামী নৌকার মাঝি শ্রমিক লীগ, ১৫. আওয়ামী ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী লীগ, ১৬. আওয়ামী যুব সাংস্কৃতিক জোট,  ১৭. বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনা গবেষণা পরিষদ,  ১৮. বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, ১৯. বঙ্গবন্ধু একাডেমি,  ২০. বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ,  ২১ ওলামা লীগ,  ২২. বঙ্গবন্ধু লেখক লীগ,  ২৩. বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগ, ২৪. বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদ,  ২৫. বঙ্গবন্ধু ছাত্র পরিষদ,  ২৬. বঙ্গবন্ধু স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ,  ২৭. বঙ্গবন্ধু বাস্তুহারা লীগ, ২৮. বঙ্গবন্ধু আওয়ামী হকার্স ফেডারেশন, ২৯. বঙ্গবন্ধুর চিন্তাধারা বাস্তবায়ন পরিষদ,

 

৩০. বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, ৩১. বঙ্গবন্ধু গ্রাম ডাক্তার পরিষদ, ৩২. বঙ্গবন্ধু নাগরিক সংহতি পরিষদ,৩৩. বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ,  ৩৪. বঙ্গবন্ধু আদর্শ পরিষদ,  ৩৫. আমরা মুজিব সেনা, ৩৬. আমরা মুজিব হব, ৩৭. চেতনায় মুজিব,  ৩৮. বঙ্গবন্ধুর সৈনিক লীগ,  ৩৯. মুক্তিযোদ্ধা তরুণ লীগ, ৪০. নৌকার সমর্থক গোষ্ঠী, ৪১.  দেশীয় চিকিৎসক লীগ, ৪২. ছিন্নমূল মৎস্যজীবী লীগ,  ৪৩. ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী লীগ,  ৪৪. নৌকার নতুন প্রজন্ম, ৪৫. ডিজিটাল ছাত্রলীগ, ৪৬ ডিজিটাল আওয়ামী প্রজন্ম লীগ, ৪৭. ডিজিটাল আওয়ামী ওলামা লীগ,  ৪৮. বাংলাদেশ আওয়ামী পর্যটন লীগ,  ৪৯. ঠিকানা বাংলাদেশ,  ৫০. জনতার প্রত্যাশা,

 

 ৫১. রাসেল মেমোরিয়াল একাডেমি, ৫২. জননেত্রী পরিষদ,  ৫৩. দেশরত্ন পরিষদ, ৫৪. বঙ্গমাতা পরিষদ,  ৫৫. বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব পরিষদ, ৫৬. আমরা নৌকার প্রজন্ম, ৫৭. আওয়ামী শিশু যুবক সাংস্কৃতিক জোট, ৫৮. তৃণমূল লীগ, ৫৯. একুশে আগস্ট ঘাতক নির্মূল কমিটি, ৬০. আওয়ামী প্রচার লীগ, ৬১. সজীব ওয়াজেদ জয় লীগ,  ৬২. বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি লীগ,  ৬৩. আওয়ামী শিশু লীগ,  ৬৪. আওয়ামী তৃণমূল লীগ, ৬৫. আওয়ামী তরুণ প্রজন্ম লীগ,  ৬৬. আওয়ামী চাকরিজীবী লীগ, ৬৭. বাংলাদেশ জনসেবা লীগ,  ৬৮. আওয়ামী শিশু-কিশোর লীগ, ৬৯ অভিভাবক লীগ, ৭০ উদ্যোক্তা লীগ, ৭১. আওয়ামী অনলাইন লীগ এবং  ৭২. বিশ্ব আওয়ামী অনলাইন লীগ।

 


নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোকে আমি হয়তো প্রশ্রয় দিচ্ছিনা কিন্তু অন্যজন দিচ্ছে এভাবেই তারা এতো গজিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে যদি শুদ্ধি অভিযান না চালানো হয় এবং আমাদের কঠিন সিদ্ধান্ত না দেওয়া হয় তবে এসব ভুইফোঁড় সংগঠনগুলোর লাগাম টেনে ধরা বেশ কঠিন হবে। সত্য কথা বলতে আমাদের দলের অনেকেই ব্যক্তিগত শক্তি বৃদ্ধি করতে গিয়ে এসব ভুইফোঁড় সংগঠনগুলোকে পরিচালিত করেন। না হলে এরা কীভাবে চলতে পারে। এসব ভুইফোড়রা যার কাছে প্রশ্রয় পায় তার কথাই বলে। এখন সবাই আওয়ামী লীগ করে। এসব কাউয়া ব্যাঙ নির্মূলে আমাদের শক্ত ভূমিকা নিতেই হবে।’

 


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের অন্যতম সদস্য এড.আনিসুর রহমান দিপু যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জসহ সারা বাংলাদেশেই এসব ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা হচ্ছিল। যার ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সেটি আমলে নিয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ স্পষ্ট বলেছেন, এসব ভূঁইফোড় সংগঠনের সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই। এসব ভূঁইফোড় সংগঠনগুলোই নয়, লীগ নাম ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে সাংগঠনিক পদবী নিয়েছে টাকার বিনিময়ে। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলছে, যারা টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের বিরুদ্ধেও শীঘ্রই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এড.দীপু আরো বলেন, দেখা যায়, ‘এসব ভুইফোড় সংগঠনগুলো তাদের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য দলের দায়িত্বশীল নেতাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাদের ব্যানারে অতিথি করে। এটা করে মূলত তাদের বৈধতা আদায়ের চেষ্টায়। আমাাদের নেতৃবৃন্দ বুঝে হোক কিংবা না বুঝে হোক এসব সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে কথা বলেন, এতে করে সেসব ভুইফোড় সংগঠনগুলোর বৈধতা চলে আসে। এখন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ যেহুতু এই বিষয়ে স্পষ্টভাবে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন আমাদেরও দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।’

 


ভুইফোঁড়দের লাগাম টেনে ধরার ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আয়োজিত পরবর্তী মিটিংয়ে এসব ভুইফোঁড়দের চিহ্নিত করার ব্যবস্থা করা হবে। এসব ভুইফোড়দের সাথে আওয়ামী লীগের কোন সম্পর্ক নেই। মূল দলেও হাইব্রীডদের সমর্থন করিনা। এরা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠিত নেতাদের সাথে ছবি তোলে, প্রচারণা চালায় পরে আওয়ামী লীগার হয়। এদের নির্মূলে কঠোর ভূমিকা না নিতে পারলে আওয়ামী লীগের বদনাম হবে।’  

এই বিভাগের আরো খবর