বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চলতি বছর ফুলের রাজ্যে আয়ের চেয়ে খরচই বেশি

মেহেরিন জারা

প্রকাশিত: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  



ভালোবাসা ও পবিত্রতার প্রতিক হলো ফুল। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসার দিবসকে কেন্দ্র করে ব্যাপক ব্যস্ততার মধ্যে কাটাচ্ছেন ফুল ব্যবসায়ীরা। নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা সাবদি এলাকা এ যেন এক ফুলের রাজ্য, যেদিকে দু’চোখ যায় কেবল ফুল আর ফুল। ফুলের সুবাস যেন মন ভরিয়ে দেয়।

 

 

কিন্তু এবার যেন পুরোই অন্যরকম দৃশ্য। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে সাবদিতে ফুল প্রেমিদের ভিড় জমে উঠে। সেখানে ডালিয়া, মাম, কেলেনডোরা, গাধাঁ, সূর্যমূখী , জিপসি ও বেলি এই সাত ধরনের ফুলের চাষ বেশি হচ্ছে। গোলাপের চাষ এখানে খুবই কম। মাটির উর্বরতা কম বলে এবার সাবদিতে গোলাপ ফুলের চাষ একেবারিই হয়নি বলে জানিয়েছেন ফুল চাষিরা।

 

 

এখন যেন তাদের ব্যস্ততা বেড়েছে অনেক বেশি। আর এ বছর তাদের ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকায়। একেকবার একেক টাকায় বিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন ফুল ব্যবসায়িরা।

 

 

ফুলচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বছরজুরেই নারায়ণগঞ্জ বন্দর উপজেলায় সাবদিসহ কয়েকটি এলাকায় ফুলচাষ হয়ে থাকে। বর্ষা মৌসুমের পর এগুলো চাষ করা হয় বেশি। দেশের অন্যন্যা এলাকাতেও এখান থেকে ফুল সরবরাহ করা হয়। সাভার, সিলেট, নোয়াখালি এ অঞ্চলগুলোতে তাদের ফুল গুলো সরবরাহ হয় বেশি।

 

 

সেখানকার এক ব্যবসায়ী নয়ন মোল্লা বলেন, তিনি বিদেশ থেকে আসার পর তার বাবার উৎসাহে তাদের গ্রামে ২০ বিঘা জমি কিনে সেখানে ফুল চাষ করা শুরু করেন। ছয় বছর যাবৎ ফুলচাষ করছেন তিনি। তবে আগের তুলনায় বর্তমানে তিনি ফুল চাষ করে তেমন লাভবান হতে পারছেন না।

 

 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফুল চাষে পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারাও জড়িত রয়েছে। তারা প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফুল বাগানে ডালা ভরে ফুলের কলি তোলে যার যার বাড়িতে ফিরে আসে। ফুলের দোকানে কাজ করেন আফসানা তিনি বলেন, প্রতি বছরই ফেব্রুয়ারি মাসে ফুল বিক্রি হয় ভালো। আশা করি এবারও বিক্রি ভালো হবে।

 

 

ফুলের মধ্যে ডালিয়া ১৫ টাকায়, মাম ফুল ৫ টাকায়, কেলেনডোরা ফুল ৩ টাকায়, জিপসি ফুল এক মুঠো বিক্রি হয় ২০০ টাকা দরে ও সূর্যমূখী ফুল বড়টা ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তারা। সিফাত হোসেন নামে এক ফুলচাষী বলেন, প্রতিবছরই এখানে ইজারায় ৪৪ শতাংশ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে থাকি।

 

 

ফুল চাষে প্রায় লাক্ষ টাকার মতো খরচ হয়। অন্য বছরের তুলনায় এবারের ফলন ভালো হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতারা এখানে এসে খুচরা ফুল কেনেন, প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকার ফুল এখন বিক্রি করছি। জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় এখন ফুলের দামও দ্বিগুন হয়েছে।

 

 

এবার পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসার দিবস উপলক্ষে ফুলের ব্যবসা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফুলের দাম বেশি তাই কাষ্টমার কেমন আসে তার উপর নির্ভর করছে বিক্রি।

 

 

সেখানে এক ক্রেতা আবজাল যুগের চিন্তাকে জানান,আগে যে দামে ফুল নিতো তারা সেই দামে এখন বিক্রি হচ্ছে না। অনেক দাম ফুলের। এখন দাম বেশিই দিয়েই কিনতে হচ্ছে আমাদের। অনামিকা নামের এক দর্শনার্থী বলেন, প্রতি বছরই এখানে আসা হয়। পরিবারের সদস্যদেরও নিয়ে এসেছি ফুল দেখার জন্য। এখানে আসলেই মন ভালো হয়ে যায়।

 

 

ফুল ব্যবসায়ী সমিতির মালিক নকুল হাওলাদার জানান, আমাদের এখানে মোটামোটি ১০০ বিঘা জমিতে ৮০% ফুল ঢাকায় যায় ও ২০% নারায়ণগঞ্জে যায়। এখানে চাহিদার মধ্যে আছে বেলি,মাম,কেলেনডোলা। এগুলোর সিজন যাওয়ার পর আবার কাঠবেলি, গোলাপ, স্টার ফুল হবে। আমরা তো বারো মাসই ব্যবসা করি। এই বছরে তেমন বিক্রি বাট্টা ভালো যাচ্ছে না।

 

 

বাগানে ৪০ থেকে ৫০ জন চাষি দ্বারা ফুল চাষ করা হয়। সাহাবাগ থেকে ঢাকার বাহিরে অনেক জায়গায় যেমন- নয়াখালি, লক্ষিপুর, সিলেট, চিটাগাং। ১৪ই ফেব্রুয়ারির জন্য এখন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। ফুল না ফুটলে কিভাবে প্রস্তুত হবো। বাগানে তো ফুলই ভালোভাবে ফুটে নাই। আর আয় থেকে খরচই বেশি হয়। এখন ফুল ব্যবহার করে কম,জিনিসপত্রের দাম বেশি হওয়ায় এমন অবস্থা।

 

 

এ ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, এ বছর ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আশা করছি গত বছরের চেয়ে এবার ১-২ লাখ টাকা বেশি আয় করতে পারি।  এন.হুসেইন/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর