শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

চাচা-ভাতিজাদের একচ্ছত্র আধিপত্য

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৪ জুন ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪ নং ওয়ার্ডের অর্ন্তভুক্ত নন্দিপাড়া ও উকিলপাড়াসহ এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় এখন, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান ও তাঁর ভাতিজাদের একচ্ছত্র আধিপত্য চলছে। মূলত বহু আগে থেকেই নগরীর নন্দিপাড়া ও উকিলপাড়া হোসিয়ারী ব্যবসার জন্য প্রসিদ্ধ। ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ৮’শ হোসিয়ারী রয়েছে এখানে। সেইসঙ্গে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের বসবাসও।

 

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে এসব এলাকার মধ্যে চষে বেড়াচ্ছেন কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান ও তাঁর দুই ভাতিজা দর্পণ আর অর্পণ। একাধিক সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এরা এই এলাকার বিশাল ঝুট সেক্টর, জেনারেটর (জরুরী বিদ্যুৎ সরবরাহ), ওয়াইফাই (ইন্টারনেট সরবরাহ) ছাড়াও ডিস লাইনের ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করছেন। এদিকে নিজেদের গন্ডির বাহিরের অন্য কোন সদস্য তাঁদের এই সা¤্রাজ্যে প্রবেশ করতে চাইলে, তাঁদের কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা হয় বলেও খবর পাওয়া গেছে।

 


স্থানীয় এলাকাবাসী ও একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, উকিলপাড়া ও নন্দিপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় কমপক্ষ্যে ৮’শ হোসিয়ারী কারখানা আছে। যার প্রতিটি কারখানা থেকে ১০ কেজি করে, পুরো এলাকার সকল হোসিয়ারী থেকে প্রতিদিন সর্বমোট ৮ হাজার কেজির মতো ঝুট বের হয়। কিন্তু কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের ভাতিজা বিএনপি নেতা দর্পই নায্য মূল্য না দিয়েই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এসব ঝুঁট ক্রয় করছে। তবে চাচার প্রভাব আর ছোটভাই (অর্পণ) মহানগর ছাত্রলীগের নেতা হওয়ায় দর্পনের ঝুট সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে উকিলপাড়ার কোনো ব্যবসায়ী প্রতিবাদ করতে পারেনা।

 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উকিলপাড়ার এক হোসিয়ারী ব্যবসায়ী যুগের চিন্তাকে বলেন, এখানে হাজী কলিমুল্লাহ মার্কেট, সোনারগাঁ মার্কেট ও দেলোয়ার মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি বড় বড় মার্কেটে ৫’শ হোসিয়ারী প্রতিষ্ঠান আছে।  পাশাপাশি অন্যান্য স্থানে আরো ৩’শ টি হোসিয়ারী আছে। কাউন্সিলরের ভাতিজা দর্পণের নিয়ন্ত্রিত একাধিক সিন্ডিকেট এসব হোসিয়ারী থেকে ঝুট নামায়। কিন্তু এরা ঝুট কিনতে এসে আমাদের প্রতি কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা কম দিচ্ছে। সেই হিসেবে এরা শুধু ঝুট ব্যবসা থেকেই দিনে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করছে।  

 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের এখানে যেই কাটিং ঝুট বের হয়, সেটার প্রকৃত বাজার মূল্য প্রতি কেজি ১২ থেকে ১৫ টাকা। কিন্তু উকিলপাড়ায় কাউন্সিলরের ভাতিজা দর্পনের যেই সিন্ডিকেট তাঁদের কাছে আমাদের ঝুট বিক্রি করতে হয়, ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি। অন্যরা বেশি দামে ক্রয় করতে চাইলেও তাঁদের এখানে প্রবেশ করতে দেয়া হয়না। যেমন আগে জালকুড়ি থেকে অসংখ্য মহিলারা উকিলপাড়ায় ঝুট কিনতে আসতো। তাঁদের কাছে আমরা ন্যায্য মূল্যেই ঝুঁট বিক্রি করতাম। তবে এখানকার সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের কাছে মারধরের শিকার হয়ে সেই মহিলারা এখন আর উকিলপাড়ায় ঝুট ক্রয় করতে আসেনা। তাই আমরাও বাধ্য হয়ে দর্পণের সিন্ডিকেটের কাছে ঝুট বিক্রি করছি।

 

অন্যদিকে আরো জানা যায়, উকিলপাড়া ও এর আশপাশের বেশ কয়েটি এলাকায় কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের আরেক ভাতিজা ছাত্রলীগ নেতা অর্পণের নিয়ন্ত্রণে চলছে জেনারেটর (জরুরী বিদ্যুৎ সরবরাহ), ওয়াইফাই (ইন্টারনেট সরবরাহ) ও ডিস লাইনের ব্যবসা। আর অর্পণের এই ব্যবসাগুলো নিয়ন্ত্রণেও একাধিক সিন্ডিকেট কাজ করছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে এলাকায় প্রায় সময়ই এসব সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে প্রতিপক্ষ শিবিরের লোকজনের সাথে বিতর্কেরও সৃষ্টি হয়। কিন্তু দিনশেষে এর পিছনে স্থানীয় কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধানের যোগসাজশ থাকায়, সেই বিতর্ক সেখানেই থেকে যায়। স্থানীয়রা জানায়, উকিলপাড়া এবং নন্দিপাড়ার হোসিয়ারী সেক্টরের ঝুঁট ব্যবসা, ওয়াইফাই, ডিস লাইন ও জেনারেটরের ব্যবসার জন্য ১৪ নং ওয়ার্ডের প্রয়াত কমিশনার মহিউদ্দিন প্রধানের দুই ছেলে দর্পণ আর অর্পণের সম্পৃক্ততা থাকলেও মূলত এর পেছনে বড় গুরুদায়িত্ব পালন করছেন তাঁদের চাচা শফিউদ্দিন প্রধান।   


 

এই বিভাগের আরো খবর