শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

চিকিৎসার অভাবে দশ বছর ধরে শিকলবন্দী রূপগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী

রূপগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০ মার্চ ২০২১  

একদিন নয় ২ দিন নয়, টানা দশ বছর একই শিকলে বন্দী হয়ে কেটে গেছে রূপগঞ্জের মুশরী এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে রুহুল আমীনের। মেন্টাল হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেয়ার পর এভাবেই কাঁটছে মেধাবী শিক্ষার্থী রুহুল আমীনের জীবন।

 

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, রুহুল আমীন ৪ ভাইয়ের মধ্যে ৩য়। পড়াশুনা করতো উপজেলার মাঝিনা আলিম মাদ্রাসায়। ২০১০ সালে ওই মাদ্রাসা থেকে বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে ৪.৮১ পয়েন্ট পেয়ে দাখিল পরীক্ষায় পাশ করে। তারপর একই মাদ্রাসায় সে আলিম বিভাগে ভর্তি হয়।

 

এরই মধ্যে একদিন হঠাৎ ক্লাশ শেষে বাড়ি ফিরে তার মাথায় তীব্র যন্ত্রণার কথা জানান। প্রথমে বিষয়টি স্বাভাবিক বলে মনে করেন তার পরিবারের সদস্যরা। ২-৩ দিনের মধ্যেই রুহুল আমীন অস্বাভাবিক আচরণ করতে থাকে। অকারণেই হাসতে থাকেন এবং অস্বাভাবিক ভাবে এদিকে সেদিকে ছুটোছুটি করতে থাকেন। তখন তাকে চিকিসার জন্য নিয়ে যান বেসরকারী ক্লিনিকে। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে নিয়ে আসেন বাড়িতে।

 

সেই থেকে রুহুল আমীন আর স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি। তার বাবা ইদ্রিস আলী জানান, পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। তখন থেকেই ৪ ছেলে ও স্ত্রী নিয়ে মাথা গোজার ঠাঁই ছাড়া আর কোন সহায় সম্পত্তি ছিল না তার। প্রথম দিকে বিভিন্ন ডাক্তার ও হাসপাতালে রুহুল আমীনের চিকিৎসা করান তিনি। সেখান থেকে জানানো হয় তাকে মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে। তাদের কথামত নিয়ে যাওয়া হয় জাতীয় মানসিক হাসপাতালে।

 

সেখানে ১ মাস চিকিৎসার পর বাড়িতে নিয়ে আসা হলেও তার অস্বাভাবিক জীবনযাপন তাদেরকে ভাবিয়ে তোলে। এর মধ্যে রুহুল আমীন সুযোগ পেলেই সবাইকে কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত শুরু করে। আবার কখনও নিজের ঘরের বেড়া ভেঙ্গে ফেলে। এক পর্যায়ে তার পরিবার বাধ্য হয়ে তাকে আলাদা ঘরে শিকল দিয়ে বন্দী করে রাখে। এভাবে ১০ বছর ধরে সে শিকলে বন্দী হয়ে আছে।

 

এরমধ্যে তার মা ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে গ্রামবাসীর সহযোগিতার তার মায়ের চিকিৎসা চলছিলো। কিন্তু চিকিৎসা শেষ হওয়ার আগেই তিনি না ফেরার দেশে চলে যান। একদিকে স্ত্রী হারিয়ে অন্যদিকে আদরের সন্তানের এই বন্দিদশা দেখে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেন তিনি। তার অন্যান্য ছেলেরাও সবাই দিনমজুরের কাজ করেন। ফলে রুহুল আমীনের চিকিৎসা ব্যয় বহণ করা অসহায় এই পরিবারটির পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।

 

স্থানীয় গ্রামবাসী বাদল গাজী, খবির উদ্দিন, ইমরান ভুঁইয়া, মাসুদ রানা, আলমগীর হোসেন, আলমগীর মুন্সি, বাবুল হোসেন জানান, রুহুল আমীনের দরিদ্র পরিবারের পক্ষে আর তার চিকিৎসার ব্যয় বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এতোদিন গ্রামবাসীর কাছ থেকে সাহায্য নিয়েও চিকিৎসা করানো হয়েছে। বর্তমানে তা ও বন্ধ প্রায়। রুহুল আমীনকে উন্নত চিকিৎসা করালে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দরিদ্র এ পরিবারটির পক্ষে আর তা সম্ভব নয়। তাই মেধাবী এ শিক্ষার্থীর উন্নত চিকিৎসার জন্য বৃত্তবানদের কাছে সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছেন অসহায় এ পরিবারের সদস্যসহ গ্রামবাসীরা।

 

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহ্ নুসরাত জাহান জানান, পরিবাররটির পক্ষ থেকে আবেদন করা হলে সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর