বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

চিন্তিত সাধারণ মানুষ

লতিফ রানা

প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০২২  


 
# সহনশীল পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধি করলে সুবিধা হতো : ভাইস প্রেসিডেন্ট বিকেএমইএ

# সবকিছু একতরফা হয়ে গেছে : এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম
 
একটি দেশের যেকোন পণ্য কোন-না-কোন পরিবহনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। হোক তা সড়ক পথ, নৌ-পথ কিংবা আকাশ পথ। আর এসব পরিবহন চালানোর জন্য প্রয়োজন হয় জ্বালানীর। তাই প্রত্যেকটি পণ্যের সাথেই জ্বালানীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক বিদ্যমান। 

 

বর্তমান বাজারের দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্ব গতি নিয়ে যখন মানুষের মধ্যে নাভিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের মধ্যে যখন এক ধরণের ক্ষোভের সৃষ্টি হওয়ায় অনেক আন্দোলন সংগ্রামের পথ অবলম্বন করছে। সে সময় জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধি করে এই ক্ষোভের আগুন আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে বলে অভিমত প্রকাশ করছেন জনগণ। 

 

কেননা যখন কোন একটি নির্দিষ্ট পণ্যের দাম বেড়ে যায় তখন জনসাধারণের ভোগান্তিও বেড়ে যায়। কিন্তু জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের প্রায় সকল পণ্যের মূল্যই বৃদ্ধি পাবে এমন একটি অশণী সংকেতের শঙ্কায় তাই মানুষের ক্ষোভ ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করছে। 

 

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। কোন একটি পণ্যের দাম বাড়লে বর্তমান আয়ের উপর ভিত্তি করে মধ্যবিত্ত, নিন্ম-মধ্যবিত্ত ও নিন্ম আয়ের মানুষের একটি নির্দিষ্ট হিসেবের উপরে মাস চলতে হয়। এমতবস্থায় জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে এর প্রভাবে যদি অন্যান্য পণ্যের মূল্যও বৃদ্ধি পায় তাহলে বিষয়টি তাদের জন্য মরার উপর খারার ঘায়ের মতো অবস্থা হয়ে দাঁড়াবে। 

 

বর্তমানে শহর, বন্দর কিংবা গ্রাম, অলি-গলির চায়ের দোকান এবং কর্মক্ষেত্রসহ প্রায় সর্বত্র যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা চলছে তা হলো জ্বালানী তেলের আকস্মিক এবং মূল্য বৃদ্ধির হার নিয়ে।


 
অন্যদিকে জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রথম প্রভাব পড়েছে গণপরিবহনে। এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকার পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে। জনপ্রতি ৪৫ টাকার ভাড়া থেকে ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে এখন ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যান্য পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোরও প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়টিও অনেক সুযোগের সদ্ব্যবহার বলে মনে করছেন জনগণ।

 

কেননা নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকাগামী যানবাহনগুলো নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকার জেনারেল পোস্ট অফিস বা জিপিও হয়ে বায়তুল মোকারম মসজিদ এলাকা পর্যন্ত জায়গা অতিক্রম করে। যার দুরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। পরিবহন সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্যমতে নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে কিংবা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফিরতে প্রতিবার ডিজেল খরচ হয় প্রায় ৬ লিটারের মতো। ডিজেলের নির্ধারিত নতুন মূল্য অনুযায়ী প্রতি লিটারে বেড়েছে ৩৪ টাকা। 

 


অর্থাৎ একবার ঢাকা যেতে কিংবা ঢাকা থেকে নারায়ণগঞ্জে ফিরতে জ্বালানী বাবদ খরচ বেড়েছে ২০৪ টাকা। অন্যদিকে এসব গণ পরিবহনের সিট বা আসন হিসেবে যাত্রী থাকবে প্রায় ৪০ জন। সে হিসেব অনুযায়ী জনপ্রতি বাড়তি খরচ পড়ে ৫ টাকা ১০ পয়সা। আনুসাঙ্গিক খরচ মিলে তা ১০টাকা বৃদ্ধি করে ৫৫ টাকা করা যেতো বলে জনসাধারণের অভিমত।


 
এই বিষয় কথা বললে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেন, কোন সরকার এরকমভাবে রাতের বেলা তেলের মূল্য বৃদ্ধি করা, কোন গণশুনানি নাই, আনুষ্ঠানিকতা নাই, কোন প্রকার জানানো হয়নি। সবকিছু একতরফা হয়ে গেছে। সরকার যদি জোর করে এভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়, এই সুযোগে আবার মালিকরা আবার গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে মানুষকে ভোগান্তির মধ্যে ফেলবে, এটা বোধ হয় ঠিক না। 

 

এইখানে জ্বালানী মন্ত্রনালয় চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। পৃথিবীর কোন রাষ্ট্রেই এমন কোন নজীর নাই। বাস ভাড়া যেভাবে বৃদ্ধি পাইছে তা-ও বে-হিসেবী। জেলা পর্যায়ের প্রশাসনকে এই বিষয়ে কঠোর হতে হবে। না হলে জনগণের মধ্যে যে ক্ষোভ ও ঘৃণা বৃদ্ধি পাবে তারে ভবিষ্যত ফলাফল খুব একটা ভাল হবে না। জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে দেখা গেছে প্রায় সব ধরণের জিনিসেরই দাম বৃদ্ধি পেয়ে যাবে। 

 

শিক্ষার্থী, চাকরীজীবীসহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষেরই পরিবহন খরচ ডাবল হয়ে যাবে, তাহলে এইসব পরিবার  সংসার চালাবে কেমন করে। আমরা যেন ভিক্ষুকে পরিণত না হই, স্বয়ং সম্পন্ন হতে পারি, নাহলে আগামী দিনগুলো ভাল আসবে না। সরকার শুধু বলবে, আমরা শুনব এটা কিন্তু ঠিক না।  


 
বাংলাদেশ নীটওয়্যার মেনুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)’র ভাইস প্রেসিডেন্ট (ফাইন্যান্স) এবং আরএস কম্পোজিট এর স্বত্ত্বাধিকারী মোর্শেদ সারওয়ার সোহেল বলেন, জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে যে সকল কারখানাগুলো ডিজেলে চলে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে। তাছাড়া আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব পরিবহনসহ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট এর মালামাল আনা নেওয়ার জন্য যে পরিবহন ব্যবহার করা হয় সেগুলোর সবই চলে ডিজেলে। তাই এগুলোর পরিবহন খরচও অনেক বৃদ্ধি পাবে।

 

 তিনি বলেন, পরিবহন খরচ যখন বাড়ে তখন তা প্রতিটা জিনিসের উপরই প্রভাব পড়ে। তবে আমাদের ব্যবসা যেহেতু আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে জড়িত। আন্তর্জাতিক ভাবে যদিও জ্বালানীর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তা বেড়েছে একটি সামঞ্জস্য রেখে ধাপে ধাপে। আমাদেরও যদি একসাথে এত টাকা না বেড়ে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেত তাহলে ভাল হতো। 

 

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে যেহেতু আন্তার্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমেছে সেখানে হয়তো সরকার ভর্তুকি দিয়েও কাভার করতে পারছে না। সেক্ষেত্রে একসাথে এতটা মূল্য বৃদ্ধি না করে একটি সহনশীল পর্যায়ে করলে সবার জন্যই সুবিধা হতো। এখন প্রতিটা জিনিসের দাম যেভাবে জাম্প করবে আমরা বায়ারের কাছে চাইলেই দিবে না। শুধুমাত্র এই ক্ষেত্রে না, আমাদের লোকাল যা আছে তার প্রতিটা জিনিসের সাথেই অতিরিক্ত খরচ যুক্ত হবে। 

 

তবে সবচেয়ে যে জিনিসটা বেশি কষ্টের হবে যারা চাকরীজীবী, মাস শেষে নির্দিষ্ট একটি আয়ে হিসেব করে চলতে হয়। আয়ের প্রতিটা টাকার, প্রতিটি ব্যয়ের একটি হিসেব থাকে।তাদের যদি মাসে একহাজার টাকাও বৃদ্ধি পায় তাহলেও তাদের জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। আমাদের শুধু ব্যবসার চিন্তা করলেই হবে না। শ্রমিক থেকে শুরু করে স্টাফ অর্থাৎ প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত প্রত্যেকটি বিভাগের কথাই ভাবতে হয়। ছোট-বড় যে ব্যবসাই হোক, তাদের দিয়ে আমাদের ব্যবসা। 

 

এক সময় যে পরিমাণ গার্মেন্টস কারখানা ছিল এখন অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে গেছে, সংখ্যায় কমে গেছে। কারণ সবচেয়ে বেশি এফেক্টেড হয় ছোট কারখানাগুলো। যাদের নাকি একেবারে ছোট বিষয়েও হিসেব করে চলতে হয়। তাছাড়াও বড় কারখানাগুলোর তুলনায় ছোট কারখানাগুলোর ব্যাংক লোন পেতেও ঝামেলা বেশি হয়। এন.এইচ/ জেসি

এই বিভাগের আরো খবর