বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ছাদে আড্ডা মারতেন দুইজন 

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৪ মে ২০২১  

সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে করোনা বীর কাউন্সিলর মাকছুদুল আলম খন্দকার খোরশেদ বলেছেন এক নারী তার ও তার পরিবারের জীবন অতিষ্ট করে ফেলেছে। তিনি দাবি করেন, ফেসবুকে কথা বললেই তাকে বিয়ে করতে হবে কিনা। আসলে ঘটনাটি ঠিক উল্টো। প্রেমের ফাঁদে ফেলে ওই নারীকে বিয়ে করে তার জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিলেন খোরশেদ। সায়েদা শিউলি নামের ওই নারীর চরিত্র হনন করতেও এতোটুকু পিছপা হননি তিনি। পারিবারিক সম্পর্ককেও রাজনীতিকরণের অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন খোরশেদ।

 

কিন্তু থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসায় খোরশেদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে পড়ছে। সূত্র জানায়, পেশায় প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, এফবিসিসিআই ও বিজিএমইএ’র সদস্য, বাংলাদেশ সিএনজি অনার্স এসোসিয়েশন নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সিগঞ্জের সভাপতি সায়েদা শিউলিকে ‘পিছ অব হার্ট অর্থাৎ কলিজার টুকরা বলে কাছে টানেন, এছাড়া দিনে হাজারো বার কখনো পাগলী, কখনো নিশু বলে প্রেমের জালে ফেলেন। মজার বিষয় এই প্রেম ১৯৯০ সালের দিকের। তখন ওই নারীর ভাইয়ের বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক করেন খোরশেদ।

 

১৯৯৩ সালে ওই নারীর বিয়ে হয়ে গেলে খোরশেদ হারিয়ে যান। সূত্র জানিয়েছে, ২০১৫ সাল পর্যন্ত সায়েদা শিউলি তার স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করেন। ব্যবসায়ে পুরোদস্তুর নজর দিয়ে সফল ওই নারীকে গতবছর খুঁজে বের করে আবারো প্রেমের প্রস্তাব দেন। নানা ছলকলায় ওই নারীর সাথে ঘনিষ্ট হয়ে বিয়ে করেন। টিম খোরশেদের ব্যানারে যেসব চ্যারিটি খোরশেদ করছেন এনিয়েও নানা অনিয়ম রয়েছে। লিন্ডা নামক কোম্পানির কাছ থেকে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের ব্যবস্থা খোরশেদকে করে দেন সায়েদা শিউলি।

 

সূত্র জানায়, অবস্থা এতোটাই বেগতিক হয়ে দাঁড়িয়েছিল ওই নারীর ব্যবসায়িক কাজ রেখে খোরশেদকে সময় দিতে হতো। এছাড়া নানা ছুতোয় খোরশেদ তার পিছন পিছন লেগে থাকতো। এটা এই পর্যায়ে গিয়েছিল যে ওই নারীর বাড়ির আশেপাশের লোকজন খোরশেদের দ্বিতীয় বউয়ের কথা হিসেবেই জানতো। এছাড়া মাসদাইর কবরস্থান এলাকা, মুন্সিগঞ্জসহ নানাজায়গার মানুষ এসবের চাক্ষুষ স্বাক্ষী।শুধু এখানেই শেষ নয়, কাজ-কর্ম ফেলে ওই নারীকে নিয়ে ছাদে সময় কাটাতেন খোরশেদ।

 

মজার বিষয় হলো, খোরশেদ ফেসবুক লাইভে এসে দাবি করেছেন, তিনি শুধু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেই ওই নারীর সাথে যোগাযোগ করতো। কিন্তু বাস্তবিক কাহিনী উল্টো। সূত্র জানায়, ওই নারী খোরশেদের মুঠোফোনে আরো কয়েকজন নারীর সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্কের ছবি দেখতে পান। এনিয়ে প্রশ্ন করলে খোরশেদ তার পিতা-মাতার কসম কেটে ভালো হয়ে যাবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেন। সূত্র জানায়, খোরশেদের এলাকার কয়েকজন জানিয়েছে, আর্থিক অনটনের জন্য কেউ সাহায্যের জন্য গেলে খোরশেদ সেই সুযোগ কাজে লাগাতেন। প্রথমে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দিয়ে রাতে ভিডিও কল কিংবা কল দিয়ে কুপ্রস্তাব দিতেন। এমন কয়েকজন খোরশেদের বিয়ে তথ্য ফাঁস হওয়ার পর অভিযোগ করছেন।

 

খোরশেদের দ্বিতীয় স্ত্রী পরিচয় দেয়া সায়েদা শিউলির ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, খোরশেদ শিউলির জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছিলেন। তার কাছে প্রথম স্ত্রী লুনার বদনাম করতেন। লুনার নাম দিয়েছিলেন ডাকাত আর দ্বিতীয় স্ত্রী শিউলির নাম দিয়েছিলেন চুন্নী। খোরশেদ সায়েদা শিউলির কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এই দুই স্ত্রী ব্যতিত আর অন্য কোথাও তিনি যাবেননা। কিন্তু সেটি রাখতে পারেনননি তিনি। ধরা খেয়ে যান শিউলির কাছে। শায়েদা শিউলির সাথে কাউন্সিলর খোরশেদের একান্ত কথাবার্তায় প্রথম স্ত্রীসহ পরিবারের ছবি পাঠিয়ে তিনি শিউলিকে বলেন, ‘এই ফ্যামিলি পিকে কিছু মানুষ বাড়বে, শুধু এটাই বাকি।’ খোরশেদের পরিবার ও সায়েদা শিউলির পরিবারের অন্য সদস্যদের সম্মানের কথা বিবেচনা করে ছবিটি প্রকাশ করা গেলনা।

 

তবে ওই কথোপকথোনের এক পর্যায়ে দেখা যায়, সায়েদা শিউলিকে খোরশেদ জিজ্ঞাসা করছেন, ‘ছাদে যাবো কবে।’ সূত্র জানিয়েছে, খোরশেদ এবং শিউলি স্বামী-স্ত্রী হিসেবে ছাদে যাওয়ার বিষয়টি নতুন নয়, এমন কয়েকজন দাবি করে বলেন, তারা স্বামী-স্ত্রী ছাদে যাবেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।  মাকছুদুল আলম খোরশেদের একটি লেখা বই ‘ছড়ায় ছড়ায় বাংলাদেশ’। সেখানে তিনি ‘বন্ধুর দেয়া বিষ’ নামক একটি কবিতায় লিখেছেন, ধান মাছ সব গেছে, বেঁচে থাকাই দায়, হাওর এখন বিষের ডিপো, জীবন বুঝি যায়। ভেসে গেছে হাওর-বাওর, ভেঙে গেছে বাধ, উঠলো না ধান গোলা ভরে, মিটলো না আর সাধ। কথা ছিল পানি দিবে, দিয়েছে বন্ধু বিষ, জুটলো কপাল মরা মাছ আর কাঁচা ধানের শীষ। পড়শি বন্ধুর বিষে নীল, আমার দেশের জমি, বন্ধু নয়তো ভণ্ড জালিম, খুনি বন্ধু তুমি। কেউবা বলেন ভালোই হয়েছে, ইউরেনিয়াম অনেক দামী, চেয়েছি পানি দিয়েছ ইউরেনিয়াম, দাদার মনটা বড় জানি।

 

এভাবে কাউন্সিলর খোরশেদ কাবু করেন ওই নারীকে। একই সাথে ঠকান প্রথম স্ত্রী লুনাকে।  সংশ্লিষ্ট সূত্র ও সায়েদা শিউলি নামের ওই নারীর ভাষ্য অনুযায়ী, গত ২ আগস্ট কাঁচপুরে শিউলির মালিকানাধীন এসএস সিএনজি ফিলিং স্টেশনে সাথে কাজী নিয়ে গিয়ে ওই নারীকে বিয়ে করেন খোরশেদ। এদিকে খোরশেদের অপকর্ম বেরিয়ে আসায় অনেকেই মুখ খুলতে শুরু করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এবং কাউন্সিলর খোরশেদের অত্যন্ত ঘনিষ্ট একজন মন্তব্য করেছেন, খোরশেদের খারাপ দিকগুলো নিয়ে মিডিয়ায় বলার মতো কিছু নেই, এটা সকলেই জানে।

 

তবে এবার খোরশেদ অন্যের সম্ভ্রম ও মানহানি করতে গিয়ে নিজের থলের বিড়ালই বের করে দিয়েছে। পাপ মাত্রাতিরিক্ত হয়ে পড়লে সেটি আর নিজের ভেতর থাকেনা। খোরশেদ ওই নারীর যে পরিমাণ কুৎসা রটনা করেছেন, তাতেও খোরশেদ তার অপরাধ ঢাকতে পারছেননা। খোরশেদের এমন অমানবিক আচরণের জন্য দুটি পরিবারের সদস্যদের অচিন্তনীয় মানসিক কষ্টে পড়তে হয়েছে। মানবিক খোরশেদকে অমানবিক এবং মুখোশ পড়া অবস্থায় দেখতে পেয়ে হতবাক সারা দেশের মানুষ।
 

এই বিভাগের আরো খবর