ছিনতাইকাণ্ডে গ্রেফতার হওয়া দুই ছাত্রলীগ নেতার শেল্টারদাতা বিরু

যুগের চিন্তা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:২৫ পিএম

সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজু মোবাইল ছিনতাইয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে। গত রোববার মধ্যরাতে সোনারগাঁ পৌর এলাকার রয়্যাল রিসোর্টের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আগেও এই দুইজনের নামে তাদের বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও হামলা ভাংচুরের অভিযোগে আরো ১৫টি মামলা রয়েছে। কিভাবে এই দুইজন এতো দুর্ধর্ষ হয়ে উঠলো তার কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে সোনারগাঁয়ে এক আওয়ামীলীগ নেতার নাম।
সূত্র জানিয়েছে, সাবেক স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর শেল্টারেই দিনকে দিন এতো বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলো পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজু।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের বেশ কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থীতা নিয়ে বেশ সরব ছিল ডা.আবু জাফর চৌধুরী বিরু। কিন্তু স্থানীয়দের তার উপর আস্থার কমতি থাকায় নেতাকর্মী শুন্য হতে থাকে বিরুর বলয়। এদিকে যে কোন মূল্যে দাপট টিকেয়ে রাখতে বিতর্কিত এই দুই ছাত্রলীগ নেতাকে শেল্টার দিয়ে নিজের বলয় ভারী করার পথ বেছে নেন বিরু।
বিরু সোনারগাঁয়ে যেসব কর্মসূচি পালন করতে সেসবগুলোর অগ্রভাগে থাকতো এই বিতর্কিত দুই ছাত্রলীগ নেতা। মূলত জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্ষমতা দেখাতে অপকর্ম করে বেড়ানো ব্যক্তিদের দলে ভেড়ানোর পথ বেছে নেয় বিরু। আর তার শেল্টার পেয়েই দুর্ধর্ষ হয়ে উঠেছিল এই দুই ছাত্রলীগ নেতা। গ্রেফতার হওয়ার পর বিরুর সাথে এই দুই ছাত্রলীগ নেতার ঘনিষ্ঠতার বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। চলছে তুমুল সমালোচনা।
ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার হওয়া সোনারগাঁ পৌরসভার দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বিরুর শেল্টার দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান এড. সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া। তিনি যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘কুকর্ম করে পার পাওয়ার সুযোগ নেই। এরা বিরুর বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশ নিত। আসলে এদের নিজের বলয় ভারী করতেই কিছু নেতা কাছে টেনে শেল্টার দেয় আর যা ফলে দলের বদনাম হয়।
আমাদের সভানেত্রী বলেছেন, দল ভারী করার জন্য কোন খারাপ লোক আওয়ামীলীগে দরকার নেই। কিন্তু দলে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে অনেকে এই কথাটি ভুলে যান। তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়েই বদ লোক দলের বদনাম করে। গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের মতো আরো কেউ থাকলেও তাদের নিজের বলয় থেকে ছেটে ফেলার আহ্বান জানান এই আওয়ামীলীগ নেতা।’
গ্রেফতার হওয়া দুই ছাত্রলীগ নেতার সাথে ঘনিষ্ঠতার বিষয়টি জানতে সাবেক স্বাধীনতা চিকিৎসা পরিষদ (স্বাচিপ) নেতা ও জেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. আবু জাফর চৌধুরী বিরুর মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এদিকে মোবাইল ছিনতাইয়ের সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজুকে গতকাল সোমবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠিয়েছে পুলিশ। এর আগে গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় একটি প্রাইভেটকার থেকে ২৮৩টি মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগ দায়ের করা হয়।
মোবাইল ফোন গুলো ফেরত না দেওয়ায় ১১দিন অপেক্ষা করার পর গত রোববার দুপুরে কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী থানার বাসিন্দা মোবাইল ব্যবসায়ী মোঃ সুমন মিয়া বাদি হয়ে সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজুসহ ৩ জনকে আসামী করে সোনারগাঁ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
গ্রেপ্তারকৃত মাহবুবুর রহমান রবিন পৌরসভার খাসনগর দিঘিরপাড় এলাকার মৃত মুজিবুর রহমানের ছেলে ও শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজু গোয়ালদী এলাকার নাসিরউদ্দিন খাঁনের ছেলে। সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, কুমিল্লার কোতয়ালী থানার রাইস গ্রামের বাসিন্দা মোবাইল ব্যবসায়ী মো. সুমন মিয়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে ২৮৩টি মোবাইল সেট নিয়ে একটি প্রাইভেটকার যোগে ঢাকায় যাচ্ছিলেন। পথে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মোগরাপাড়া চৌরাস্তা এলাকা অতিক্রমকালে র্যাব পরিচয়ে প্রাইভেটকারটি গতিরোধ করে। পরে ওই ব্যবসায়ীকে মারধর করে ২৮৩টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়।
ওই সময় তাদের পরিচয় জানতে পেরে তাদের কাছে মোবাইলগুলো ফেরত নেওয়ার জন্য ধরণা দেয় মোবাইল ব্যবসায়ী মো.সুমন মিয়া। মোবাইল ফোন গুলো ফেরত না দেওয়ায় ১১দিন অপেক্ষা করে গত রোববার দুপুরে ওই ব্যবসায়ী সোনারগাঁ থানায় মাহবুবুর রহমান রবিন ও শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজুসহ ৪জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর ওই রাতেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে পৌরসভার খাসনগর দিঘিরপাড় রয়্যাল রিসোর্টের সামনে থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে। পুলিশ ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে গতকাল সোমবার দুপুরে তাদের আদালতে পাঠায়।
সোনারগাঁ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) পঙ্কজ কান্তি সরকার বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগে সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজুকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে পাঠানো হয়েছে। মোবাইল ফোন উদ্ধার না হওয়ায় ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে মাদক, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা ও হামলা ভাংচুরের অভিযোগে আরো ১৫টি মামলা রয়েছে।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ের ঘটনায় মোঃ সুমন মিয়া নামে এক মোবাইল ব্যবসায়ী একটি মামলা দায়ের করেছেন। ওই মামলায় সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিন ও সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজুকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আজিজুল হক ও সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসমাইল রাফেল দাবি করেছেন, মোবাইল ছিনতাই মামলায় গ্রেফতার হওয়া সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হাসান খাঁন সাজুকে দণ্ডবিধি অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত থাকার কারণে ১৮/০১/২০১৯ তারিখে অব্যহতি দেওয়া হয়।
এছাড়া গত ১১/০৭/২০২১ তারিখে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপে জড়িত থাকায় সোনারগাঁ পৌরসভা ছাত্রলীগের সভাপতি মাহবুবুর রহমান রবিনকে অব্যহতি দেওয়া হয়েছে। তবে গতকাল ২৫/০৯/২০২৩ তারিখে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন এবং সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে সোনারগাঁ পৌর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করেন। এস.এ/জেসি