বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ছিনতাইকারীদের চেনাতেই খুন হন সিয়াম

রাকিবুল ইসলাম

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২২  

# সিয়াম হত্যার প্রধান দুই আসামী গ্রেপ্তার
# সিয়ামকে হত্যার পর আসামীরা টাকা ভাগাভাগি করে
# পিতার পাশে দাঁড়ানো হলো না ছেলের

 

করোনার সময়ে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনেকে শিক্ষার্থী পড়ালেখা থেকে ঝরে পড়ে। তারই ধারাবাহিকতায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের ডিক্রিরচর এলাকার আবুল কালাম সরদারের ছেলে সিয়াম সরদার করোনার আগেও স্কুলে পড়া শুনা করলেও করোনা কালীন সময় কর্মজীবনে জড়িয়ে পরে। কিন্তু করোনার সময় দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগিতা করার জন্য অটো চালানো শুরু

 

করেন সিয়াম সরদার। এই সিয়ামের অটোতে দুস্কৃতিকারীদের নজর পরায় বেশিদিন টিকতে পারে নাই সে। যখনি করোনার দুঃসময় কাটিয়ে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তখনি তাকে  পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য করে কিছু দুস্কৃতিকারি।

 

সিয়ামে বয়সের অনেকে এই বছর এস এসসি পরীক্ষা দিবে। কিন্তু সে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়ায় তার পক্ষে আর পরীক্ষা পর্যন্ত যাওয়া হয় নাই। তার পিতার পাশে থেকে পরিবারকে সাপোর্ট দিতে চাইলে তাও বেশিদিন দিতে পারে নাই। অল্প সময় তাকে পৃধিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যেতে বাধ্য করে সিয়ামের হত্যাকারীরা। আর এতে করে এক অসহায় মা তার সন্তানকে হারান। পিতার কাধে ছেলে লাশ বহন করতে হয়। যা এই পৃথিবীর সবচেয়ে বেদনাদায়ক।


খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৩ মে সিয়াম সরদার অটো রিকশা নিয়ে তার জীবিকার তাগিদে বের হন। কিন্তু এই বের হওয়া যে তার জীবনের শেষ বের হওয়া তিনি নিজেও জানতেন না। ১৩ তারিখে বের হওয়ার পর সে সারা দিনেও তার বাড়িতে ফেরে নাই। এমনকি ওই দিন দুপুরের বেলা খাবার খেতেও যান নাই। সে বাড়িতে না ফেরায় এতে তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে খোঁজাখুজি করেও পান নাই। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় সিয়াম সরদারের পিতা নিখোঁজ জিডি করেন।

 

পরে সকল জল্পনা কল্পনা শেষে ১৭ মে রাতে আলীরটেক ইউপির ডিক্রিচর এলাকার আবুল কালাম সরদারের ছেলে সিয়াম সরদারের লাশ উদ্ধার করে সদর থান পুলিশ।


এলাকাবাসী জানান, ১৭ মে বিকেলে তৈলখিরা চর আতাউর ও বাদলের মালিকাদিন ইটভাটায় কয়েকজন ছেলে খেলতে যায়। খেলার এক পর্যায় তাদের বল ইটভাটার এক কোনায় যায় তখন বলতে আনতে গিয়ে তারা গন্ধ পান। ইট সরিয়ে দেখেন কোন এক লোকের মাথা দেখা যায়। পরে তারা ইট সরিয়ে এই নিহত সিয়ামের লাশ দেখতে পান। পুলিশকে খবর দেয়া হলে সদর থানা পুলিশ সিয়ামের লাশ উদ্ধার করেন। এবং ১৮ মে সিয়ামের পিতা সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন যার মামলা নম্বর ২২।


স্থানীয়রা জানান, সিয়াম সরদার অল্প বয়স হলেও এলাকার সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন। সে ছোট হওয়ায় তাকে সবাই আদর করত। কিন্তু তাকে যে এত অল্প সময় হায়েনার দল মেরে ফেলবে তা কেউ ভাবতে পারে নাই। কিন্তু বাস্তবতা এতটাই নিষ্ঠুর তার চলে যাওয়া মেনে নিতে হচ্ছে সিয়ামের পরিবারের সদস্যদের। সিয়ামের অটো ছিন্তাই করে বিক্রি করাই ছিল হত্যাকারীদের মূল উদ্দেশ্য। আর সে হত্যাকারীদের চিনে ফেলায় হত্যাকারীরা তাকে মেরে ইটভাটায় রেখে যায়।

 

এলাকাবাসি সহ পরিবার হতে সিয়াম হত্যাকারীদের বিচারের দাবী জানান। কিন্তু কতটুকু বিচার পাবেন তা বুঝা যাবে আদালতের বিচারিক কার্যক্রম দেখে। এদিকে সিয়াম সরদারের পরিবার থেকে দাবী উঠেছে সিয়াম হত্যাকারীদের ফাসি চান তারা। তাদেরকে যেন কঠোর শাস্তি দেয়া হয়।  যাতে করে এই ধরনের অপরাধ আর কেউ করতে না পারেন। আর কোন পিতা মাতাকে যেন সন্তান হারা হতে না হয়।    


এদিকে সিয়ামের লাশ উদ্ধার হওয়ার পর থেকে তৎপর র‌্যাব ১১। গত কয়েক দিন অভিযান চালিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেকের অটো রিকশাচালক সিয়াম হত্যা মামলায় দুই আসামিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১১। গত শুক্রবার (২০ মে) আলীরটেক এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দ্জুন হলেন- মো. ইয়ামিন (১৯) ও মো. নবী হোসেন (১৮)।


এঘটনায় র‌্যাব-১১ এর উপপরিচালক মুনিরুল আলম জানান, গত ১৭ মে আলীরটেকের তৈলখিরার চরের এক পরিত্যক্ত ইটভাটায় সিয়ামের অর্ধগলিত লাশ পাওয়া যায়। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। গত ২০ মে আলীরটেক এলাকা থেকে এই হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।


র‌্যাবের এই কর্মকর্তা আরও জানান, নিহত সিয়াম একজন অটো রিকশাচালক। প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৩ মে অটো রিকশা নিয়ে বের হয়ে আর বাসায় ফেরেনি। এতে তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে খোঁজাখুজি করতে থাকে। খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে আলীরটেকের তৈলখিরাার চরের জনৈক আতাউর রহমান ও বাদলের পরিত্যক্ত ইটভাটায় সিয়ামের অর্ধগলিত লাশ ইটের ভেতর লুকানো অবস্থায় পাওয়া যায়।

 

এই ঘটনায় গ্রেফতার আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গত ১৩ মে আসামিরা সিয়ামের অটো রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাকে পূর্ব পরিচিতির জের ধরে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যায়। সারাদিন তার অটো রিকশা নিয়ে ঘোরাঘুরি করে সন্ধ্যায় তাকে ইটভাটায় নিয়ে যায়। সেখানে তারা সিয়ামকে মাটিতে ফেলে কয়েকজন মিলে হাত-পা শক্ত করে ধরে এবং ধৃত আসামি ইয়ামিন অটোচালক সিয়ামকে গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে।

 

পরে লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ইট দিয়ে ঢেকে রাখে ও অটো রিকশাটি বিক্রি করে পরস্পর টাকা ভাগাভাগি করে নেয়। আসামিদের সদর মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। স্থানীয় সচেতন মহল জানান, আলীরটেক বক্তাবলীতে পরগনায় একটি চক্র আছে যারা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে অটো ছিন্তাই করে নিয়ে যায়। এই চক্রটি সরল সোজা এবং ছোট ছেলেদের টার্গেট করে। আর এতে করে তাদের মিশন সফল হয়।

এই বিভাগের আরো খবর