শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

ছেলে-মেয়েগুলোকে মানুষ করবে কে?

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৩ জুলাই ২০২১  

নিখোঁজ নাজমা বেগমের স্বামীর শ্বাস কষ্ট তাই কোন কাজ করতে পারেনা। যাই টুকটাক করতো কিন্তু লকডাউনের কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছিলো না। এ দিকে নাজমা বেগমকে দুই ছেলে মেয়েকে নিয়ে পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিলো। উপায়ন্তর না পেয়ে ৬ মাস আগে ১৩ বছরের ছেলে হোসেন আহমেদকে নিয়ে ছয় হাজার টাকা বেতনে রূপগঞ্জের সেজানের নুডলস্ সেকশনে কাজ নেয়।

 

ঘটনার দিন ভাগ্য বশতো কাজ না থাকা হোসেন ৪ টায় বাসায় ফিরে আসে। এর ঠিক ১ ঘন্টা পর খবর পায় সেই ফ্যাক্টরিতে আগুন লেগেছে। হোসেন আহমেদ বিকাল ৪টায় বাসায় চলে আসলে তার খালা মনোয়ারা বেগম  জিজ্ঞেস করেন, “কিরে বাজান, তুই এত্তো আগে আইসা পরসোস কেন?” মা আইজকা আগে ছুটি দিয়া দিছে।

 

(আমারে মা ডাকে) এমন সময় ফ্যাক্টরিতে আগুনের কথা শুনতে পাইলে আমরা সবাই ঐ খানে দৌড় দেই। “আমাগো বাঁচান, আমাগো বাঁচান” বলে ভিতর থেকে চিৎকার আসা শুরু হয়। অনেকেই বাঁচার জন্য বোতল মারছিল, জুতা মারছিল, তারা চাইলেই সবাইরেই বাঁচাইতে পরতো কান্নাজড়িত কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন মনোয়ারা বেগম। কিন্তু তারা কিছুই করতে পারছিলেন না।

 

তিনি আরও জানান, আগুন লাগার পর বোনকে ফোন করি তখন রিং হয় কিন্তু ফোন ধরছিল না। এভাবে রাত দশটা পর্যন্ত ফোন খোলা পেয়েছিলাম এর পর ফোন বন্ধ পাই। তিনি অনেকটা অভিযোগের সুরে বলেন, গেটে তালা থাকার কারণে কেউ বাইরে আসতে পারছিল না। ৪ তলা পুরাটা তালা মারা ছিল তাই ঐ তলার কোনো শ্রমিকই বের হতে পারে নাই।

 

বাচ্চা দুইটা এতিম হয়ে গেলো বিলাপ করে বলছিলেন তার বোন। ছোট হোসেন আহমেদ বেধনা বিধুর কন্ঠে বলে উঠলো "মা আমারে কইছিল তোর বেতনের টাকা ভাঙ্গমু না এই টাকা জমাইয়া তোরে বিদেশ পাঠামু। আর আমার টাকা দিয়া সংসার চালামু। নাজমা বেগমের মেয়ে পাখি। তিনি কাজে থাকলেও মেয়ের জন্য মনটা ঘরেই পড়ে রইতো।

 

গত পরশু দিন তিনি পাখিকে বলছিলেন, “তোর বাবার যদি ভালা একটা কাজ থাকত তাইলে আমি আর কারখানায় কাজ করতাম না”। আফজাল হোসেনের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটে। তিনি বলেন, এই পোলাপাইনগুলো আমি এখন কেমনে মানুষ করমু? আমার সব শেষ হইয়া গেল।
 

এই বিভাগের আরো খবর