শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জনগণ তাঁর উদ্ভট কথা সম্পর্কে জানে

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১ মার্চ ২০২৩  

 

# সামনে নির্বাচন, তাই সে কী করবে তা ভেবে বিচলিত
# ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়ার মতো বাচ্চাদের সামনে মিথ্যাচার করছে
# আমার ওই বিজয়ে মোহাম্মদ আলী ভাইয়েরও অবদান আছে

 

 

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শামীম ওসমান ও এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের বাকযুদ্ধে সরগরম গোটা নারায়ণগঞ্জের রাজনীতি। আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতার পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে গোটা নারায়ণগঞ্জে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতার গতিও অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুইদিন যাবৎ শামীম ওসমান বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গিয়াসউদ্দিনের কাছে হারের বিষয়টি টেনে এনেছেন। এছাড়া তিনি জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মোহাম্মদ আলীকেও তার বক্তব্যে টেনে এনেছেন।

 

শামীম ওসমান ফতুল্লায় এক স্কুলের অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে  দাবি করেন, ২০০১ সালে তার সাথে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন জয়ী হননি। শামীম ওসমান বলেন, ‘গিয়াস ভাই এমপি হয়নি। তাকে মোহাম্মদ আলী ভাই এমপি বানিয়েছিল। তিনি বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছিল। আমাকে ৩৬ হাজার ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রে তার পোলিং এজেন্ট ছিল না বিভিন্ন জায়গায়। রাতে ফলাফল পাল্টে দেয়া হল। সেই সময় আমি বলেছিলাম মোহাম্মদ আলী ভাই সবার আগে আপনাকেই কামড় দিবে, হয়েছেও তাই।’ তিনি একই অনুষ্ঠানে সেখানে একটি কলেজের নামকরণ মোহাম্মদ আলীর নামে করার ঘোষণা দেন শামীম ওসমান। 

 

তবে শামীম ওসমানের এসব বক্তব্যকে লাইমলাইটে নিজেকে নিয়ে আসার কৌশল হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন। যুগের চিন্তার সাথে দেয়া এক স্বাক্ষাৎকারে জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনটি তো দিনের বেলায় ভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্বচ্ছভোটের ওই নির্বাচনের দিনও সকাল ১০টার মধ্যে ১৭টা কেন্দ্র থেকে তার সন্ত্রাসীবাহিনী আমার নির্বাচনী এজেন্ট বের করে দিয়েছিলো। এরপরেও জনগণ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিপুল ভোটের মাধ্যমে আমাকে বিজয়ী করে। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর তিনি দেশে পালিয়ে যায়। তার অনুসারী হিসেবে দীর্ঘদিন সার্ভিস দেয়া কর্মীদের কথাও তিনি চিন্তা করেননি, নিজের পরিবার-পরিজন নিয়ে দেশ ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে যান।

 

বিএনপির নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন ওই নির্বাচন প্রসঙ্গে আরো বলেন, দিনের ভোট যে রাতে হয়, তা তো মানুষ আগে জানতোই না, ২০১৪ সাল আর ২০১৮ সালের রাতের ভোটের পর মানুষ সেটি বুঝতে পেরেছেন। রাতের ভোটের নির্বাচনের কথা মানুষ ২০০১ সালে স্বপ্নেও চিন্তা করতে পারেনি। আমি ভাগ্যবান মানুষ আমাকে ভালোবেসে ওই সময় জয়ী করেছিল। আরেকটু বলতে চাই স্পষ্ট করে, কোন ব্যক্তি আমাকে এককভাবে নির্বাচিত করার প্রশ্নই আসেনা। মোহাম্মদ আলী ভাই আমার পক্ষে ছিলেন। তাকে যারা ভালোবাসে তারা আমার নির্বাচনটা সেই সময় করেছিলেন, তাদের সকলের সহযোগীতা আর পরিশ্রম একত্রিত হয়ে কাজ করার পর জনগণের ভোটে আমি বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়েছিলাম। 

 

সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন শামীম ওসমানের বর্তমান বক্তব্যগুলো প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আজকে কেন এসব কথা বলা হচ্ছে। সামনের নির্বাচনকে টার্গেট করে এতোবছর পর এসব উদ্ভট, বানোয়াট, মিথ্যা কথা এতোবছর পর কেন রটানো হচ্ছে। ২০০১ সালো নির্বাচন করার পর এই প্রথম এসব কথা তিনি বললেন। এসব কথা তিনি এই প্রথমবার বলছেন। সামনে যে নির্বাচন, তাই আমার পক্ষে যারা কাজ করেছেন আমার প্রতি বিষেদগার করে তিনি তার পক্ষে নেয়ার চেষ্টা করছেন। তবে তার জন্য দুঃখের খবর এটা যে, জনগণ আমাকেও চেনে আবার তাকেও চেনে। সে তো জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে অনেক আগে থেকেই। সে নারায়ণগঞ্জে বসবাস করেনা।

 

বহু লোক তার জন্য পরিশ্রম করলেও ২০০১ সালে নির্বাচনে হারার পর সে তাদের ফেলে রেখে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিল। এই সরকার ১৪ বছর ক্ষমতায়, বিনাভোটে গত দুইবার ডিক্লায়ার করা এমপি কতদিন জনগণের কাছে গেছে। জনগণের কাছে সে অনেক আগেই প্রত্যাখ্যিত হয়েছে। জনগণ তার কথাকে আমলে নেয়না। আর তাই সে এখন মিথ্যাচার করার জন্য বিভিন্ন স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিশুদের বেঁছে নিয়েছে। এখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাচ্চাদের সামনে, অভিভাবকদের সামনে সে রাজনৈতিক মিথ্যাচার ও উদ্ভট কথা বলার ক্ষেত্র হিসেবে দাঁড় করিয়েছে। তবে জনগণ জানে তার উদ্ভট কথা সম্পর্কে।

 

গিয়াসউদ্দিন শামীম ওসমানের জনপ্রিয়তা নিয়েও কথা বলেন। তিনি বলেন, গণবিচ্ছিন্নতার কারণ তার দলের অনুগত টেন্ডারবাজ, চাঁদাবাজ যারা ফুটপাত চাঁদাবাজি করে, মাদকবিক্রি করে, গরীব মানুষ অটোচালক, ভ্যানচালক খেটে খাওয়া লোকদের কাছ থেকেও চাঁদাবাজি করে। তার লোকজন তো বটেই তার পরিবারের অনেকে ডিসব্যবসাসহ নানা ভাগ-বাটোয়ারায় নিয়োজিত। এসব অপকর্মের কারণে তার জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে বহু আগেই। রাজনৈতিক মাঠ তো বটেই, সকলক্ষেত্রে তার পরিমণ্ডল ছোট হয়ে এসেছে।

 

এখন কোথাও ঠাঁই না পেয়ে ছোট ছোট ছাত্রদের সামনে দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক কথা বলে। অনেকটা ‘ধান ভানতে শিবের গীত’ গাওয়ার মতো। বাচ্চাদের অভিভাবকদের সামনে মিথ্যাচার করে। মানুষ তার কথা এখন আর শোনেনা, তার সংগঠনের লোকেরা তাদের অনুষ্ঠানে তাকে কথা বলার সুযোগ দেয়না। তাই সে এখন স্কুলে স্কুলে গিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সামনে গিয়ে মিথ্যাচার করে। তার স্ট্যান্টবাজি আর আমাদের রাজনৈতিক কৌশলের মধ্যে অনেক পার্থক্য। জনগণ তাকে খুব ভালো করে চেনেন। 

 

তিনি শামীম ওসমানের বক্তব্যের রেশ ধরে বলেন, দেখবেন, তিনি (শামীম ওসমান) বক্তব্যে বলেন, ঈদের পর থেকে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য নামবেন। এটা কেমন কথা, আমরা তো জন্মের পর থেকেই নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য আছি। নারায়ণগঞ্জের মাটি ছেড়ে থাকিনা। জনগণের সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছি। এই ভালোবাসা নিয়েই আমি এই মাটিতেই মরতে চাই। যতদিন বেঁচে থাকি দেশের মানুষ, নারায়ণগঞ্জের মানুষের কল্যাণেই কাজ করে যেতে চাই। তার মতো ডাকঢোল পিটিয়ে আমাদের বলতে হয়না, এই নারায়ণগঞ্জের মাটিতে রাতে ঘুমাতে আসবো, সামনে অমুক দিন থেকে মাদক নির্মূল করতে মাঠে নামবো, এই করবো, ওই করবো। তাহলে এতোদিন করলেন টা কী? মূল কথা হচ্ছে, সামনে নির্বাচন, তাই সে কী করবে তা ভেবে বিচলিত। তাই এসব আজগুবি কথা বলে নিজেকে আলোচনায় আনার চেষ্টা করছে।

 

নারায়ণগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী প্রসঙ্গে সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, মোহাম্মদ আলী ভাই ২০০১ সালের নির্বাচনে আমার পক্ষে কাজ করেছেন। তিনি তার যোগ্যতা, সুনাম, গুণ, তার শুভাকাঙ্খী, অনুসারীসহ সবকিছু দিয়েই আমাকে ওই নির্বাচনে সহযোগিতা করেছেন। আর আমি এজন্য সবসময় বলি, আমার ওই বিজয়ে মোহাম্মদ আলী ভাইয়েরও অবদান আছে। জেলা বিএনপির আহবায়ক গিয়াসউদ্দিন মোহাম্মদ আলী প্রসঙ্গে আরো বলেন, ক্ষমতায় এসে মোহাম্মদ আলী ভাইয়ের ব্যবসা-বাণিজ্য কারা শেষ করে দিয়েছে, কারা ওগুলোর পেছনে কাজ করেছেন, তাদের কর্মের মধ্য দিয়েই সেগুলো প্রকাশিত হয়েছে।
এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর