শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জনতার বাধ ভাঙা উচ্ছাসে সিক্ত চাচা-ভাতিজা

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৮ জানুয়ারি ২০২২  

সর্বস্তরের মানুষের নিরঙ্কুশ সমর্থনে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃতীয় বারের মত হ্যাট্টিক জয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন শাহজালাল বাদল। অপরদিকে, প্রথম বারের মত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছেন হাজী মো: নুর উদ্দিন মিয়া। তাঁরা দু’জন সম্পর্কে চাচা-ভাতিজা। চাচা-ভাতিজার বিজয়ে এ দু’টি ওয়ার্ডের হাজার হাজার মানুষ উল্লাস করেছেন। ওয়ার্ডবাসী বলছেন, এতে মিথ্যার পরাজয় আর সত্যের জয় হয়েছে। জয় হয়েছে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার। বিতারিত হয়েছে অমানুষিকতার।

জানা যায়, ১৬ জানুয়ারী রবিবার অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোটাররা উৎসব মূখর পরিবেশে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এ নির্বাচনে ৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ঠেলাগাড়ী প্রতীকে শাহজালাল বাদল ৬,৩২০ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়। এ নিয়ে তৃতীয় বারের মত শাহজালাল বাদল হ্যাট্টিক জয় পেয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি তোফায়েল হোসেন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২,৬০১ ভোট। অপরদিকে, ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ঠেলাগাড়ী প্রতীক নিয়ে ৩,৭৮১ ভোট পেয়ে বেসরকারী ভাবে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন হাজী মো: নুর উদ্দিন মিয়া। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি নজরুল ইসলাম ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২ ,৭৫৫ ভোট। এছাড়াও বিতর্কিত কর্মকান্ডের কারণে ছিটকে পরেছেন জাতীয় শ্রমিকলীগের সাবেক সভাপতি আব্দুল মতিন মাষ্টারের ছেলে বর্তমান কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান। তিনি লাঠিম প্রতীক নিয়ে পেয়েছেন ২,৬৭০ ভোট।
 
ওয়ার্ডবাসীর মতে, দীর্ঘদিন পর আবারো শিমরাইল টেকপাড়া চেয়ারম্যান বাড়ীতে জনতার ঢল নামে। এসময় বিশেষ করে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আপামর জনসাধারণ তাদের মনোনীত বিজয়ী কাউন্সিলরকে অভিনন্দন জানাতে ফুলের মালা ও তোড়া নিয়ে দলে দলে ছুটে আসে চেয়ারম্যান বাড়ীতে। এসময় নবনির্বাচিত কাউন্সিলর নুর উদ্দিনকে জড়িয়ে ধরে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত জনগণকে কান্নায় ভেঙ্গে পরতে দেখা গেছে। তারা বিজয়ের আনন্দে স্বস্থি প্রকাশ করেছেন। এতে, আবারো প্রমানিত হয়েছে সাবেক সিদ্ধিরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের দুই বারের নির্বাচিত সফল চেয়ারম্যান ও নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর নুর হোসেন এখনও তাঁর এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয়। কোন অপ-প্রচার চাচা-ভাতিজার বিজয়ে ওয়ার্ডবাসীর হৃদয়ে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারেনি। বরং এ দু’টি ওয়ার্ডের সাধারণ জনগণকে আরো বেশী উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ করেছে। একটি অপশক্তির বিরুদ্ধে জনগণ গরীব, দু:খী মানুষের আস্থার প্রতীক নূর হোসেন চেয়ারম্যানের পরিবারকে তাদের সেবক হিসেবে বেছে নিয়েছে।
ওয়ার্ড বাসী বলছেন, নূর হোসেন চেয়ারম্যান একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষ। তিনি সব সময় সিদ্ধিরগঞ্জের গরীব, দু:খী মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন। নিজ অর্থায়নে রাস্তা-ঘাট নির্মান, অসহায় মানুষের পাশে সহায়তা, ন্যায় বিচারসহ নানাবিধ মানবিক কর্মকান্ডের কারণে এখনো নূর হোসেন চেয়ারম্যানের জন্য মানুষ রোজা রেখে হাত তুলে দোয়া করছেন যেন তিনি আবারো তাদের মাঝে ফিরে আসে। তেমনি ভাবে নুর উদ্দিন মিয়া যাতে বিজয়ী হয় সেজন্য ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ঘরে ঘরে সাধারণ মানুষ রোজা রেখে তাঁর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছেন যেন তাকে বিজয়ী করেন। আল্লাহ গরীব-দু:খী মানুষের আর্তনাদ শুনেছেন। একজন অসভ্য জানোয়ারের কবল থেকে ওয়ার্ডবাসীকে রক্ষা করেছেন। নূর হোসেন চেয়ারম্যান যেমন পরোপকারী ও গরীবের বন্ধু ছিলেন তাঁর ছোটভাই নুর উদ্দিন ও ভাতিজা শাহজালাল বাদলও ইতিমধ্যে তাদের কর্মকান্ড দিয়ে আপামর জনসাধারণের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। তাঁরা চাচা-ভাতিজা এখন দুই ওয়ার্ডের জনতার আস্থার প্রতীক।

এ ব্যাপারে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর হাজী মো: নুর উদ্দিন মিয়া বলেন, এ জয় ৪  নম্বর ওয়ার্ডবাসীর কাঙ্খিত জয়। এ জয় ৪ নম্বর ওয়ার্ড বাসীর জয়। এ ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগণের আন্তরিক প্রচেষ্টার কারণে আজকে এ বিজয় এসেছে। আমি ওয়ার্ডের সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে তাদের কল্যাণে কাজ করবো। আমার ভাই যেভাবে ওয়ার্ডবাসীকে মনে-প্রাণে সেবা দিয়েছে আমিও তাদেরকে নিয়ে একটি বাসযোগ্য আধুনিক ওয়ার্ড হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করবো। সকল বাঁধা বিপত্তি ও অপ-প্রচারকে জয় করে যারা আমার ও আমার পরিবারের জন্য নিরলস ভাবে কাজ করেছে আমি তাদেরকে আন্তরিক ভাবে অভিনন্দন জানাই। আমি সব সময় ওয়ার্ড বাসীর সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখবো।

৩ নম্বর ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল বলেন, জনগণের ভালবাসাকে কেউ কোনদিন পরাজিত করতে পারেনা। ১৬ তারিখ জনতার জয় হয়েছে। আমি ওয়ার্ড বাসীর প্রতি চির কৃতজ্ঞ। তাদেরকে কাঙ্খিত সেবা দিতে পেরেছি বলেই তারা আমাকে তারা আমাকে তৃতীয় বারের মত বেছে নিয়েছে। আমি গত ১০ বছর ধরে আমার ওয়ার্ডের জনগনের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। ২০১১ সালে এবং ২০১৬ সালে ওয়ার্ডবাসী আমাকে ভালবেসে টানা দুইবার তাদের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করেছেন। আমার ওয়ার্ডে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা এবং আমার মেয়র ডা. সেলিনা হায়ৎ আইভীর আন্তরিক সহযোগিতায় ওয়ার্ডের উন্নয়নে ৩০০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। আমি আমার ওয়ার্ডের রাস্তা-ঘাট-ড্রেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নের কাজ করেছি।

তিনি আরো বলেন, করোনা মহামারীকালীন সময়ে প্রত্যেক অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে করোনার সামগ্রী পৌছে দিয়েছি। সিটি কর্পোরেশন থেকে ত্রান সহযোগিতা, প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিল, নিজস্ব তহবিল, রিলিফ কার্ড, বয়স্কভাতা, বিধবা ভাতা, মাতৃদুগ্ধ ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, জন্ম নিবন্ধন, মৃত্যু সনদ, মশক নিধন সহ নানাবিধ সুযোগ সুবিধা প্রধান করে ওয়ার্ডবাসীর দেয়া অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছি। এছাড়াও স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসার  উন্নয়ণে কাজ করেছি। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য কর্মী নিয়োগ এবং রাতের বেলায় রাস্তার লাইটিং ব্যবস্থা করেছি। সমাজ থেকে মাদক, কিশোরগ্যাং ও সন্ত্রাস মুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যে ওয়ার্ডের প্রত্যেকটি এলাকায় পঞ্চায়েত কমিটি ও মসজিদ কমিটি তৈরী করে সবাইকে নিয়ে কাজ করেছি। এখন আমার ওয়ার্ডে মাদকের দৌরাত্ব অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এসব বিষয়গুলোকে ওয়ার্ড বাসী বিবেচনা করেছে বলেই আমি আবারো তাদের ভালবাসায় সিক্ত হয়েছি। পাশাপাশি ৪ নম্বর ওয়ার্ডে জনগণ আমার চাচাকে নির্বাচিত করায় ওয়ার্ড বাসীর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদের সেবায় আমরা চাচা-ভাতিজা আমৃত্যু করে যেতে চাই। সেজন্য সকলের সহযোগিতা চাই।
 

এই বিভাগের আরো খবর