বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জসিমে বিব্রত আ’লীগ, ক্ষুব্ধ স্কুল কমিটি

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২১  

# জসিম উদ্দিনের এমন কান্ড প্রকাশের পর তাকে ঘিরে এই সমালোচনার ঝড় শুরু হয়
 

# স্কুল থেকে লাখ লাখ টাকা পান বলে দাবি জসিমউদ্দিনের 

নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও আসন্ন গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে আগ্রহী জসিম উদ্দিনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা। একই সাথে জসিম উদ্দিনকে নিয়ে বিব্রত হয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।   

 


জানা গেছে, সদর থানাধীন গোগনগর ইউনিয়নে অবস্থিত সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন রেজুলেশন না মেনে বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। দীর্ঘ ৪ মাস অতিবাহিত হলেও অদ্যবধি ফান্ডের টাকা ফেরৎ দেয়নি জসিম উদ্দিন। বিষয়টি দৈনিক যুগের চিন্তা পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর জসিম উদ্দিনকে নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে সর্বত্র। জসিম উদ্দিনের এমন কাণ্ড প্রকাশের পর তাকে ঘিরে এই সমালোচনার ঝড় শুরু হয়।  

 


বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির দাতা সদস্য ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজির ফকির দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানান, ‘গত প্রায় ৪ মাস পূর্বে বিদ্যালয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন ম্যানেজিং কমিটির কাউকে না জানিয়ে অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে ফান্ড থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেন। ফান্ডের ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়ার পর বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ অবগত হলে জসিম উদ্দিন ফান্ড থেকে ওই টাকা হাওলাদ নিয়েছেন বলে জানান এবং দ্রুতই ওই টাকা আবারও ফন্ডে জমা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন।

 

যদিও বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে ম্যানেজিং কমিটির কেউ কোন উপায়ে অর্থ নিতে পারবে না বলে রেজুলেশনে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখ আছে। তাছাড়া, বিদ্যালয়ের কোন কাজে যদি সামান্ন টাকাও ফান্ড থেকে নেয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে টাকা খরচের যথাযথ খাত উল্লেখ করে তা ম্যানেজিং কমিটির সকলের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে নিতে হবে। কিন্তু জসিম উদ্দিন বিদ্যালয়ের সভাপতি হয়েও তা করেননি। এমনকি টাকা ফেরৎ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বিগত ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ফান্ডের টাকা বুঝিয়ে দেয়নি। তা নিয়ে বিদ্যালয়ের অন্যান্য সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।

 


নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক সদস্য দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক কোন বলে সভাপতি জসিম উদ্দিনকে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা দিলো, তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। রেজুলেশনে পরিস্কার বলা আছে, যেদিন যতো টাকা কালেকশন হবে, ঐদিনই তা ব্যাংকে জমা দিতে হবে। হেড মাস্টার কিভাবে ম্যানেজিং কমিটির সাথে মিটিং না করে ফান্ডের টাকা সভাপতিকে ব্যক্তিগত কাজে হাওলাদ দিলেন? হেড মাস্টার ইচ্ছে করলেই ফান্ডের টাকা কাউকে দিতে পারবে না। এক্ষেত্রে হেড মাস্টারও রেজুলেশন ভঙ্গ করেছে।’  

 


নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর এক অভিভাবক সদস্য বলেন, ‘ফান্ডের টাকা এভাবে কেউ নিতে পারে না। ফান্ডের টাকা এভাবে নেয়া উচিৎ হয়নি। ফান্ডের হিসাব নিকাশও আমরা জানি না। তাছাড়া, সম্প্রতি বিদ্যালয়ে অডিটরিয়াম নির্মাণ হলো। এটা নির্মানে সেলিম ওসমান সাহেব কত টাকা দিয়েছেন আর কত টাকা ব্যয় হয়েছে, সেই তথ্যও জসিম উদ্দিন আমাদের দিতে চাচ্ছে না। হিসাব চাইলে উনি বলে যে, এমপি খরচ দিয়েছে তাই হিসাব দিলে এমপিকে দেব, অন্য কাউকে নয়! অথচ, যেকোন মাধ্যমেই সহায়তা আসুক, না কেন বিদ্যালয়ের একটি টিন লাগালেও ম্যানেজিং কমিটির জানা থাকার কথা। আর এতো বড় একটা অডিটরিয়াম হলো, সেই বিষয়ে কোন হিসাব তিনি দিচ্ছেন না।’  

 


এদিকে, বিদ্যালয় থেকে জসিম উদ্দিনের টাকা নেয়ার বিষয়টি প্রকাশ পেলে তাকে ঘিরে এলাকাবাসীর মাঝেও তোলপাড় শুরু হয়। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতারাও তাকে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। নারায়ণগঞ্জ সদর থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল-মামুন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘জসিম উদ্দিন ইতিপূর্বে সদর থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। কিন্তু তিনি বহু বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছিলেন।

 

এরই মাঝে তিনি বিদ্যালয়ের টাকা নিয়েছেন বলে পত্রপত্রিকার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। তিনি যেহেতু আওয়ামী লীগ করেন, সেহেতু তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠায় আওয়ামী লীগের সহযাত্রী হিসেবে আমরাও বিব্রত। কারণ দলিয় কোন ব্যক্তি যদি বিতর্কিত কোন কিছুর সাথে জড়িত থাকে, তাহলে সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগের উপর আঙ্গুল তুলবে। ইতিমধ্যে তার কর্মকান্ডের দ্বারা সেটাই হয়েছে।’

 


এদিকে, জসিম উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমন কোন পরিস্থিতি স্কুলে হয়নি। আমি স্কুল থেকে লাখ লাখ টাকা পাই। স্কুলের আর্থিক অবস্থা খারাপ। আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থ থেকে শিক্ষকদের বেতন দিয়েছি। ফান্ডের টাকা নেয়ার মত কোন বিষয় নেই।’ তবে, জসিম উদ্দিন বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করলেও বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এটা নিয়ে নেগেটিভ কোন সংবাদ প্রকাশ না হলেই ভালো। জসিম উদ্দিন সাহেব ওই টাকা ফান্ড থেকে হাওলাদ নিয়েছেন, আবার তা দিয়েও দিবেন।’  

 


বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘সেলিম ওসমান সাহেবের একটি অনুষ্ঠানের সময় তিনি ওই টাকা নিয়েছিলেন। ফোনে এসব বলার চেয়ে সামনা সামনি কথা বললে ভালো হয়।’ জানা গেছে, জসিম উদ্দিনকে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান। তবে, সেলিম ওসমানের সমর্থিত এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলো বিদ্যালয়ের অর্থ হেরফের করার।
 

এই বিভাগের আরো খবর