মঙ্গলবার   ১৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ৫ ১৪৩০

জসিমের পকেটে বিদ্যালয়ের টাকা!

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৬ জুন ২০২১  

নারায়ণগঞ্জ সদর থানাধীন গোগনগর ইউনিয়নে অবস্থিত সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা জসিম উদ্দিন। যাকে গোগনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে সমর্থন করেছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের জাতীয় পার্টির সাংসদ সেলিম ওসমান। তবে, সেলিম ওসমানের সমর্থিত এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে বিদ্যালয়ের অর্থ হেরফের করার। শুধু কী তাই? গত ৪ বছর ধরে বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকার হিসেব দেয়া নেয়ার বিষয়ে রহস্যজনক কারণে থাকছেন নিরব! এমন অভিযোগ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সদস্যদের।

 

 
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির একাধিক সূত্র দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানায়, গত প্রায় ৪ মাস পূর্বে বিদ্যালয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন ম্যানেজিং কমিটির কাউকে না জানিয়ে অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদের মাধ্যমে ফান্ড থেকে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। প্রথমে অধ্যক্ষ তোফায়েল আহমেদ ফান্ডের টাকা দিতে অনীহা প্রকাশ করলেও পরবর্তীতে জসিম উদ্দিন অধ্যক্ষকে ওই টাকা দিতে বাধ্য করেন বলে ম্যানেজিং কমিটির সূত্রটি জানিয়েছে। ফান্ডের ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা নেয়ার পর বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটির সদস্যগণ অবগত হলে জসিম উদ্দিন ফান্ড থেকে ওই টাকা হাওলাদ নিয়েছেন বলে জানান এবং দ্রুতই ওই টাকা আবারও ফন্ডে জমা দিবেন বলে প্রতিশ্রুতিও ব্যক্ত করেন সদস্যদের কাছে। কিন্তু ৪ মাস অতিবাহিত হলেও এখনো পর্যন্ত ফান্ডের টাকা বুঝিয়ে দেয়নি বলে ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন।  


বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য ও সদর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজির ফকির দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানান, ‘ফান্ডের টাকা কেউ হাওলাদ নেয়া বা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করতে পারবে না। জসিম উদ্দিন আমাদের কাউকে কিছু না জানিয়ে হেড মাস্টারকে চাপ প্রয়োগ করে ওই টাকা নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছি। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তা ফান্ডে জমা দিচ্ছেন না।’   


তিনি আরো জানান, ‘বিগত ৪ বছর ধরে জসিম উদ্দিন বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকার কোন হিসেব দিচ্ছে না। কমিটির সদস্যরা হিসেব নিয়ে বসতে চাইলেও তিনি নানা অযুহাতে সময়ক্ষেপন করছেন।’ জানা গেছে, বছর খানেক আগে বিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম নির্মাণের কাজ শুরু হয়ে গত ৩-৪ মাস আগে তা সম্পন্ন হয়। অভিযোগ উঠেছে, ওই অডিটরিয়াম নির্মাণের অর্থের বিষয়েও কোন হিসেব বুঝিয়ে দিচ্ছে না সভাপতি জসিম উদ্দিন।  

 

এই বিষয়ে নাজির ফকির দৈনিক যুগের চিন্তাকে জানান, ‘বিদ্যালয়ের অডিটরিয়াম নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমান ১ কোটি টাকা দিয়েছেন। স্কুলে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে সেলিম ওসমান সাহেব নিজেই তা প্রকাশ্যে বলেছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্য সদস্যদের ধারণা, অডিটরিয়াম নির্মানে ৮০ লাখ টাকার মত ব্যায় হয়েছে। বাকি ২০ লাখ টাকার মত জসিম উদ্দিন হেরফের করেছেন বলে ম্যানেজিং কমিটির অন্যান্যরা বলছেন।

 

কারণ, ওই অডিটরিয়াম নির্মাণে এক কোটি টাকা ব্যয় হওয়ার কথা নয়। আমরা তার কাছে অডিটরিয়াম নির্মাণের হিসেব চাইলে তিনি হিসেব না দিয়ে উল্টো সেলিম ওসমান সাহেবের নাম ভাঙ্গিয়ে বলছেন, এটা সেলিম ওসমানের টাকা। এটার বিষয়ে আপনাদের হিসেব দেয়ার প্রয়োজন নেই। ৩-৪ মাস আগে অডিটরিয়াম নির্মাণ হলেও এখনো তিনি হিসেব দিচ্ছেন না। টালবাহানা করছেন। তার কর্মকান্ড নিয়ে ধোয়াশা রয়েছে। বিদ্যালয় কমিটির সকলের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। কিন্তু এরপরও তিনি ফান্ডের টাকার হিসেব নিয়ে বসছেন না।’  

 

এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ মো. তোফায়েল আহমেদ এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘এটা নিয়ে নেগেটিভ কোন সংবাদ প্রকাশ না হলেই ভালো। জসিম উদ্দিন সাহেব ওই টাকাটা হাওলাদ হিসেবে নিয়েছেন, আবার তা দিয়েও দিবেন।’ বিদ্যালয়ের ফান্ডের টাকা ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করা যাবে কিনা- ‘এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সেলিম ওসমান সাহেবের একটি অনুষ্ঠানের সময় তিনি ওই টাকা নিয়েছিলেন। ফোনে এসব বলার চেয়ে সামনা সামনি কথা বললে ভালো হয়।’

 

এদিকে, বিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন সভাপতি জসিম উদ্দিন! এই বিষয়ে জসিম উদ্দিন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘এমন কোন পরিস্থিতি স্কুলে হয়নি। আমি স্কুল থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা পাই। স্কুলের আর্থিক অবস্থা খারাপ। আমি আমার ব্যক্তিগত অর্থ থেকে শিক্ষকদের বেতন দিয়েছি। ফান্ডের টাকা নেয়ার মত কোন বিষয় নেই। অডিট কমিটি প্রতিমাসে মাসে অডিট করে যদি কোন ভুল পায়, তাহলে তা রিপোর্ট আকারে হেড মাস্টারের মাধ্যমে আমার কাছে আসবে। আমি এটার সমাধান করবো বা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেব। সভাপতি কখনো হিসেব দেয় না।’

 

যেহেতু স্কুলের ফান্ডের হিসেব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, ‘সেহেতু আপনি কখনো প্রধান শিক্ষক ও ক্যাশিয়ারের কাছে হিসাব চেয়েছিলেন কিনা? এমন প্রশ্নের সরাসরি কোন উত্তর না দিলেও তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই এই ব্যপারে সচেষ্ট এবং সচেতন। তবে, এটা সম্পূর্ন মনিটরিং করে ক্যাশিয়ার আর হেড মাস্টার। আর স্কুলের প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিনেই ব্যাংকে জমা হয়। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলন করতে হলে রিকোজিশনের মাধ্যমে বলতে হবে যে, কোন খাতে বা কোন কাজে টাকা ব্যয় হবে। এটা সিস্টেম। এই সিস্টেম আমরা ম্যান্টেন করি।’

 

অডিটরিয়ামের কাজের বিষয়ে উত্থাপন হওয়া অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সেলিম ওসমান মহোদয় ১ কোটি টাকা দিয়েছেন বলে যারা বলাবলি করছেন, সেটাও ভুল ধারণা। সেলিম ওসমানের কাছেই জানুন তিনি কত টাকা দিয়েছেন। অডিটরিয়ামের কাজে এক কোটি টাকার বেশি ব্যায় হয়েছে।’ যদিও অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন,‘অডিটরিয়াম হয়েছে এমপি মহোদয়ের নিজস্ব অর্থায়নে। টাকায়। কারও ব্যক্তিগত অর্থায়নে অডিটরিয়াম হয়নি।’
 

এই বিভাগের আরো খবর