শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জাতীয় পার্টি ঘেঁষা হওয়ায় নির্ভার মাসুম

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১০ জুন ২০২১  

বন্দর উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে অনেকটাই সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন ধামগড় ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ। এখন শুধু দলের পক্ষ হতে মনোনয়ন পাওয়ার অপেক্ষায়। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ছাড়াও তার উপর সদয় আছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান। আর তারই প্রেক্ষিতে তিনি সমর্থন পাচ্ছেন বন্দর উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও বন্দর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এমএ রশীদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজিম উদ্দিন প্রধানের।

 

তাই বন্দর প্রশাসনের কোন বিরাগভাজনের শিকার হতে হবে না বলে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। তবে স্থানীয় তৃণমূলের আফসোস, এমএ রশীদ তাদের খুব কাছাকাছি এলাকার হলেও এই এলাকার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কখনো তার কাছে মূল্যায়ন পায়নি। মূল্যায়ন পেয়েছে স্থানীয় হাইব্রীড কিংবা আওয়ামী লীগে যারা নতুন মুখ এরকমের তরুণরা। কারণ হিসেবে এলাকাবাসি মনে করেন, যারা তৃণমূল থেকে উঠে এসেছেন কিংবা যারা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যকে লালন-পালন করেন, তারাতো তাকে সম্মানের বাইরে আর কিছু দিতে পারবে না। তাদেরকে জাতীয় পার্টি কিংবা অন্যদলের সাথে মিশিয়ে হাইব্রীড করতে পারবে না। তাই তিনি কখনো প্রবীণ, ত্যাগী এবং আওয়ামী লীগকে যারা ধ্যান-জ্ঞান মনে করেন তাদেরকে মূল্যায়ন করেন না।

 

স্থানীয় তৃণমূল আওয়ামী লীগ জানায়, ওনি আমাদের এলাকার লোক হয়েও আমাদের কোন কাজ কর্মে ডাকেন না, আমাদের কোন কাজকর্মেও ওনি থাকেন না। প্রকৃত অর্থে তার বাড়ি সিটি করপোরেশন এলাকায় হলেও তিনি ভোটার ইউনিয়ন পরিষদের। আর সূত্র ধরেই তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হয়েছেন বলে জানান স্থানীয়রা। তারা জানান, কিন্তু আমাদের এলাকার লোক হলেও তার কাছে আমরা যারা প্রকৃত অর্থে আওয়ামী লীগকে ভালবাসি তারা কখনো মূল্যায়ন পাই না। ওনি পারলে আমাদের কমিটি থেকে বাদ দিয়ে ওনার পছন্দের লোককে নিয়ে কমিটি গঠন করে ফেলেন। তার চেয়েও বড় কথা ওনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়ে আওয়ামী লীগের নাম ব্যবহার করে ওনি জাতীয় পার্টি কিংবা এমপি সেলিম ওসমানের বাইরে গিয়ে কোন কাজ করতে পারেন না। আর ঠিক এ কারণেই আমাদের এলাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বড় ধরণের কোন অনুষ্ঠানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের কোন স্থান থাকে না। এখানে কর্তৃত্ব করতে দেখা যায় স্থানীয় জাতীয় পার্টি, বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগের নামধারী হাইব্রীড নেতাদের।


 
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, এমএ রশীদের প্রভাবের কারণে ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদও অনেকটাই জাতীয় পার্টি নেতাদের সাথে মিশতে শুরু করেছেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের ধারণা, মাসুম আহম্মেদ পারিবারিকভাবেই আওয়ামী লীগ এবং তিনি তৃণমূল থেকেই উঠে এসেছেন, কিন্তু বন্দর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতৃবৃন্দের রোষানল থেকে বাঁচতেই তিনি এখন অনেকটাই এমপি ভক্ত হয়ে উঠেছেন। আওয়ামী লীগের এই সব প্রভাবশালী নেতাদের খুশি করতে না পারলে কলাগাছিয়া ইউনিয়ন, বন্দর ইউনিয়ন ও মুসাপুর ইউনিয়ন পরিষদের মতো আওয়ামী লীগের কারো পক্ষে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এই সব আওয়ামী লীগ নেতারাই এখানকার আওয়ামী লীগ নেতাদের পরাজিত করতে উঠে পরে লাগবে।

 

এবার ধামগড় ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণে দুইজনের নাম বেশী আলোচনায় আসছে। তারা হলেন বর্তমান চেয়াম্যান মাসুম আহম্মেদ ও আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হক আজিজ। নির্বাচনের বিষয়ে ধামগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলী ভ‚ঁইয়া জানান, আমাদের দলের পক্ষ হতে নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক ভাল। উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও সম্পাদকের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের দুধ মায়ের মতো দেখে। আমাদের কখনো আপন মায়ের মতো দেখতে পারে না। আমি ১৯৯২ সাল থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। আমি চাঁদাবাজিও করি না, চাঁদাবাজির টাকাও খাই না, কিন্তু আমাদের কেউ মূল্যায়ন করে না।

 

তিনি জানান, উপজেলার কমিটিতে বর্তমানে শুধু দুইজনই আছে, তারা দুইজনই সর্বেসর্বা। তারা পুর্ণাঙ্গ কমিটিও গঠন করছেন না। তাদের তিন মাস সময় বেধে দেয়া হওয়ার পর প্রায় দেড় বছর পার হয়ে গেলেও পুর্ণাঙ্গ কমিটি তিনি (এমএ রশীদ) গঠন করেন না। উনার একা যেটা ভাল লাগে সেটাই তিনি করেন। আমাদের কোন মূল্যায়ন করেন না। আমরা হক কথা বলি, তাই আমাদের কোন মূল্যায়ন নেই, আমাদের কোন কাজে ডাকে না। তিনি বলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করি, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ করি। তাই আমাদের দুধ মায়ের মতো দেখে। সবচেয়ে বড় সমস্যা আমাদের দলের কোন এমপি নাই। কাজিমউদ্দিন ভাইকে সম্পাদক করলাম যেন আমাদের যদি একটু মূল্যায়ন হয়। কিন্তু যেই লাউ সেই কদু। আমরা তো এমপি বা মেয়রের দল হিসেবে দল করি না। আমরা আওয়ামী লীগকে ভালবেসে বঙ্গবন্ধুকে ভালবেসে আওয়ামী লীগ করি। আমাদের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোন কার্যালয় নেই। বসার কোন জায়গা নাই।

 

তিনি বলেন, আমি নৌকার মনোনয়ন যে পাবে আমরা তার পক্ষ হয়েই কাজ করবো। আমরা কোন ব্যক্তির হয়ে কাজ করবো না। তিনি জানান, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমরা যে বসে আলাপ করবো সে রকম কোন জায়গাই নেই।  তাই দলীয় কোন আলাপ আলোচনা করতেও আমাদের খুবই অসুবিধা হয়। এবারে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে ধামগড় ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান মাসুম আহম্মেদ জানান, আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো। আল্লাহ যদি চায় তাহলে জয়ী হবো, এটা ভাগ্যের বিষয়। আগে যেহেতু দলের পক্ষ হতে সমর্থন পেয়েছেন এবারও তিনি দলের কাছ থেকে সমর্থন পাবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমএ রশীদ ও সম্পাদক কাজিম উদ্দিন আহমেদের বিষয়ে তিনি বলেন, তারা আমাদের নেতা, তাদের উচিৎ আমাদের সাহায্য সহযোগিতা করা। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছরে এই এলাকায় যে সব কাজ করেছি আমিসহ এলাকাবাসি মনে করেন এরকম কাজ অন্যান্য এলাকায় বিশ বছরেও হয় না, আমার ধামগড়ে ইনশাহআল্লাহ অনেক উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের শুধু পরিবার না আমার পুরো গুষ্টিই আওয়ামী লীগ, সৃতরাং আমার সবার সাথেই ভাল সম্পর্ক আছে।


 

এই বিভাগের আরো খবর