বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জিম্মি দশায় বন্দরে সামসুজ্জোহা উচ্চ বিদ্যালয় 

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৯ মে ২০২১  

বন্দরের সামসুজ্জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে চরম দু:চিন্তায় রয়েছে অভিভাবক মহল। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলমের দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা এখন ওপেন সিক্রেট হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্কুলে প্রাক্তন অভিভাক ও বর্তমান অভিভাবকরা তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অভিভাবক জানান, তিনি স্কুলের সাথে দীর্ঘদিন জড়িত থেকে এ স্কুলের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রত্যক্ষ ভাবে অবলোকন করেছেন।

 

তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালে সহকারী শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ হয়। তখন নিয়োগ বোর্ডে ছিল এমন একজন শিক্ষক বলেন, ১০ নম্বর পেয়ে অনুত্তীর্ণ হলেও এলাকার ছেলে হিসেবে নম্বর বাড়িয়ে সাইফুল আলমকে প্রথম করা হয়। তাকে অনিয়মের মাধ্যমে বিদ্যালয়ে চাকুরি দেয় তৎকালিন কমিটি। চাকুরি পাওয়ার পর সাইফুল আলমের শিক্ষাগত যোগ্যতায় এইচএসসি ও বিকম পরীক্ষায় দুটিতে তৃতীয় বিভাগ থাকায় তার এমপিও করা যাচ্ছিল না। পরবর্তীতে বিদ্যালয়ের ধর্মীয় শিক্ষক মাওলানা আসাদুজ্জামান এর সহযোগিতায় ৪০ হাজার টাকা ও বিশ হাজার টাকার মাছ ঘুষ দিয়ে একজন দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তার মাধ্যমে সে এমপিওভুক্ত হন।

 

এ বিষয়ে মাওলানা আসাদুজ্জামান স্বীকার করে বলেন, আমি তাকে এমপিওভুক্ত হওয়ার জন্য সাহায্য করেছি মাত্র। তাকে এমপিও করার জন্য স্কুলের দাফতরিক কাজ করেছি। তাকে এমপিও করেছেন জেলা শিক্ষা অফিসার। কয়েক বছর পর বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য হলে নিয়ম ভেঙ্গে সিনিয়র শিক্ষকদেরকে পাশ কাটিয়ে অবৈধভাবে ভারপ্রাপ্ত সহকারী প্রধান শিককের পদ দখল করেন তৎকালিন কমিটিকে ম্যানেজ করে। স্কুলের একটি সূত্র জানায়, তখন সাইফুল আলম কমিটিকে ম্যানেজ করে পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ বাগিয়ে নেন। ঐ সময় কোন সিনিয়র শিক্ষককে সে প্রভাব খাটিয়ে আবেদন করতে দেয়নি। দূর্নীতির মাধ্যমে তিনজন মাদ্রাসা শিক্ষক ভাড়া এনে কোরাম পূরন করে নাম মাত্র পরীক্ষা নেয়া হয়।

 

এ বিষয়ে সকল কলকাঠি নেড়েছে সাবেক সভাপতি বোরহান উদ্দিন। অভিযোগ আছে তিনি পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে তাকে নিয়োগ দিয়েছেন। এবিষয়ে বোরহান উদ্দিন বলেন, আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এসে শিক্ষদের তৃতীয় বিভাগ পাশের বিষয়টি শিথিল করায় আমরা সাইফুলকে নিয়োগ দেই। প্রয়াত এমপি নাসিম ওসমানের ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল অনুরোধ করে ছিলেন, সায়মা নামক শিক্ষিকাকে নেয়ার জন্য। মেয়ে মানুষ হওয়ায় আমরা নেইনি। যেহেতু সাইফুল স্থানীয় লোক তাই তাকে নিয়োগ দিয়েছি। এছাড়া স্কুলের কিছু শিক্ষকের অত্যাচারে নাজমুন নাহার নামের এক শিক্ষিকা আমাদের বিদ্যালয় থেকে চাকুরি ছেড়ে চলে যান।

 

তিনি আরো বলেন, বর্তমান স্কুলের সভাপতি মাকসুদ চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক এরশাদ উল্লাহ স্কুলের অনেক টাকা ঘাপলা করেছে। হিসাবে অনেক গড়মিল রয়েছে। আমি স্কুলে এসে মাকসুদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে তাকে বহিস্কার করি। এই বিদ্যালয়ের তিনজন নারী শিক্ষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার অশ্লীল আচরণের কারনে তারা স্কুল ছেড়েছেন। একজন শিক্ষার্থী দুঃখ করে বলেন, সাইফুল স্যার এর আচরণ জঘন্য। তিনি ক্লাসের ভিতর জসিমউদ্দীন স্যারকে লাঞ্চিত করেছেন। সাবেক সভাপতি মরহুম মহিউদ্দিন এর সামনে মরহুম মোশাররফ হোসেন স্যারের গায়ে হাত তুলেছেন। মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে মোশাররফ হোসেন স্যারকে কমিটির কাছে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। এই অপমান সইতে না পেরে মোশারফ স্যার বিদ্যালয়ে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান।

 

প্রক্তন শিক্ষার্থীরা জানান, মোশারফ স্যারের মৃত্যুর জন্য সাইফুল মাষ্টার দায়ী। জানা যায়, শামসুজ্জোহা স্কুলকে সাইফুল মাষ্টার এতই বেপরোয়া তার সাথে কোন শিক্ষকের একমত না হলেই তার উপর চলে মানুষিক নির্যাতন। শিক্ষকদের গালাগাল চলে নিয়মিত। পছন্দের শিক্ষকদের ভালো ক্লাস ও টিউশনি দিয়ে মাসে মাসে হাদিয়া নেন। কয়েকজন খÐকালীন শিক্ষক অভিযোগ করেন, সভাপতি আমাদের বেতন ঠিকমত দিতে চাইলেও সাইফুল আলম স্যার বাধা দেন। কিছুদিন আগেও শিক্ষক মিলনায়তনে আমাদের সাথে খুব বাজে আচরণ করেছেন তিনি। একজন অভিভাবক বলেন, এই স্কুলের সকল নষ্টের মূলহোতা সাইফুল মাষ্টার। ওনার কারনে অনেক ভালো ভালো শিক্ষক অন্যত্র চলে গেছেন। বাকিরাও অন্যত্র চলে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আমরা চাই এমপি মহোদয় নিজে স্কুলের বিষয় খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করুক। সাইফুল আলম সরকারের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে স্কুলেই কোচিং বাণিজ্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে কয়েকজন কমিটির সদস্য নিয়ে আত্মসাত করেছেন।

 

স্কুলের সাবেক এক ছাত্র জানান, সাইফুল আলম স্যারের বিষয়ে দুদক তদন্ত করলে অনেক কিছু বেরিয়ে আসবে। এমনও শোনা যাচ্ছে, স্কুলের নতুন ভবন নির্মাণের সময় ইট, বালি, রড ও পাথর রাতের আঁধারে চলে গেছে তার বাড়িতে। সে সমস্ত মাল তার বাড়ি নির্মানের কাজে লাগিয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিভাবক বলেন, সাইফুল আলম মাষ্টারের দূর্নীতি, অসদাচরণ, ও কোচিং বানিজ্যও ভাউচার বানিজ্যের কারনে গত ২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর এমপি সেলিম ওসমান তাঁকে বরখাস্ত করেছিলেন। বর্তমান সভাপতি তাকে সাড়ে ৩ মাস পর বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনেন। তারপরও তার স্বভাবের কোন পরিবর্তন হয়নি। বরং বর্তমান কমিটিকে ম্যানেজ করে প্রধান শিক্ষক এরশাদ উল্লাহকে বহিষ্কার করায়। এর পর সে কৌশলে প্রধান শিক্ষকের পদ দখল করে।

 

এ বিষয়ে বরখাস্তকৃত প্রধান শিক্ষক এরশাদ উল্লাহ বলেন, এমপি মহোদয় সহকারী প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি ও অসদাচরণ ও কোচিং বানিজ্যের জন্য বহিষ্কার করলেও আমি এমপি মহোদয়কে অনুরোধ করি যাতে তাঁকে ফিরিয়ে আনা হয়। আমি মাকসুদ চেয়ারম্যানের মাধ্যমে এমপি মহোদয় এর সাথে ফোনে কথা বলি এবং তাঁকে বিনীত অনুরোধ করি সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলমের চাকুরী ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এমনকি সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলমের বেতন আমি স্বাক্ষর করে বেতন ভাতা বিদ্যালয়ের পিয়ন সাবিনা ইয়াসমিনের মাধ্যমে বাড়ি পাঠিয়ে দিতাম। এবং তাঁকে সকল রকম সহযোগিতা ও আশ্বাস দেই। এমনকি এমপি মহোদয় এর অনুমতি ছাড়াই বর্তমান সভাপতি মাকসুদ হোসেন তাঁকে রাতের আঁধারে সারে তিন মাসের স্বাক্ষর করান। আমি কোন বাধা দেইনি। কিন্তু এই সাইফুল আলম ষড়যন্ত্র করে আমাকে মিথ্যা অভিযোগে অবৈধভাবে কমিটিকে ভুল বুঝিয়ে বরখাস্ত করিয়েছে। আমি কোন টাকা আত্মসাত করিনি।

 

আমার বাড়ি মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া হওয়ার কেউ আমাকে সাহায্য করেনি। এমনকি সাইফুল আলমের প্ররোচনায় সভাপতি স্কুলের সভা কক্ষে আমাকে লাঞ্চিত করেছে। তখন ভয়ে একজন শিক্ষকও আমার পাশে দাঁড়ায়নি। এ বিষয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলমের মোবাইলে একাধিকবার কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। স্থানীয় লোকজনের দাবি আমরা সাইফুল মাস্টারের জিম্মিদশা থেকে স্কুলকে মুক্ত করতে চাই এ জন্য এমপি সেলিম ওসমানের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
 

এই বিভাগের আরো খবর