জীবনের ডাক দিয়ে যায়
প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর ২০১৯
সময় ধূলো উড়িয়ে চলে। মাথা ও বুকের ভেতর থরে থরে জমে থাকা কথার পরতে পরতে জমে ওঠে ধূলোর আস্তরণ। জীবনের যে কথা স্পর্ধিত, গৌরবের, পাখা ছড়িয়ে ওড়া প্রজাপতির মতো উচ্ছ্বসিত অথবা শায়ক বিদ্ধ পাখির ঝাপটানো ডানায় ছড়িয়ে দেয়া দুঃখের, বেদনার- সব ঢাকা পরে যায়। তবুও মাঝে মধ্যে অথবা কোন কোন দিন সে ধূলো ঠেলে বেরিয়ে আসে বাক্সবন্দী সে আনন্দ অথবা দুঃখের হিরণ্ময় চকচকে স্মৃতির পাথর।
৫ অক্টোবর তেমনি একটি দিন। ত্বকীর জন্মদিন। এক সময় যে দিনটি ছিল আমাদের কাছে লাল নীল ঘুড়ির মতো আকাশে ওড়া বর্ণিল এক অনাবিল উৎসব, সুবাস ছড়িয়ে দেয়া ফুলের সমারোহ; এখন তা বিবর্ণ ধূসর, কেবলি হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগিয়ে তোলার অনুভব। কষ্টটা আরো বাড়িয়ে তুলেছে এ নৃশংসতার বিচার হীনতা, রাষ্ট্রের পক্ষপাত।
ত্বকীর বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জ শহরে। এ শহরে ঐতিহ্য প্রাণ প্রাচুর্যের কমতি ছিল না। শহরের পথ, ফুটপাত, অলিগলি, বৃক্ষ, বন্দর-নদী সব চেনা। সবকিছুর সাথেই রয়েছে এক নিবিড় পরিচয়। কিন্তু নিষ্ঠুরতা আর নৃশংসতা যথন রাজনীতির অনিবার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে সেখানে ঐতিহ্য প্রচুর্য অহংকার মুখ থুবরে পড়ে, মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়ে, সব হারিয়ে কেবলি নিঃসহায় হতে থাকে।
ত্বকী রবীন্দ্রনাথের গান গাইতো, আবৃত্তি করতো, বাংলা ও ইংরেজিতে কবিতা ও ছোট ছোট নিবন্ধ লিখতো। লালনের গান ওর প্রিয় ছিল। টলস্টয়, আইনস্টাইনের প্রতি যেমনি আকর্ষণ ছিল আবার প্রাচ্যের দর্শন ও সুফিবাদের প্রতিও আকর্ষণ ছিল। শিল্প-সাহিত্য, বিজ্ঞান সবকিছুর প্রতি ছিল গভীর অনুরাগ।
নিখোঁজ হবার পরদিন ওর এ লেভেল প্রথম পর্ব পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছিল। পদার্থ বিজ্ঞানে বিশ্বে ও রসায়নে দেশের সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়েছিল। কিন্ত ততক্ষণে ত্বকীর ঠিকানা নিশ্চিৎ হয়েছে শীতলক্ষ্যা নদীতে।
ত্বকীকে যে টর্চার সেলে নিয়ে বন্দী করা হয়েছিল তা শহরের পরিচিত এক আতঙ্কঘর, জল্লাদের আস্তানা। এখানে অসংখ্য তরুণ-যুবককে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়েছিল। প্রশাসনের সবই জানা। তার পরেও টর্চারসেলটি ছিল, বীরদর্পেই মাথা উঁচিয়ে ছিল। ঘাতকরা হয়তো জানতো যে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করার ক্ষমতা বা ইচ্ছে কখনোই রাষ্ট্রের হবে না। কারণ সরকারইতো রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক। অথচ জনগণই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রক হওয়ার কথা ছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধটা এ জন্যই হয়েছিল। কিন্তু তা হয় নি। অর্ধ-শতাব্দীতেও হয় নি।
তদন্ত সংস্থা র্যাবের তথ্য অনুযায়ি নারায়ণগঞ্জের চিহ্নিত একটি ঘাতক পরিবারের ১১জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। প্রথমে তারা গজারির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে তাকে নিস্তেজ করে মাথায় আঘাতের পর আঘাত করতে থাকলে ত্বকী জ্ঞান হারিয়ে যখন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে । তখন ঘাতকরা তার বুকের উপর উঠে গলা চেপে শ্বাস রোধ করে সতের বছরের অপাপবিদ্ধ কিশোরের মৃত্যু নিশ্চিৎ করে। ঘাতকরা তার শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেতলে দেয়, একটি চোখ উপরে আনে। একাত্তরের ঘাতকদের চেয়ে ত্বকীর ঘাতকদের নৃশংসতায় কমতি ছিল না। চল্লিশ বছর পরে সে ঘাতকদের বিচার হলেও ত্বকীর ঘাতকরা থেকেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাদেরকে বিচারের আওতায় আসতে হয় নি। সমস্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরেও আনা হয় নি।
সাত বছর হতে চললো- তবুও তাদের বিচারের আওতায় আসতে হয় নি। অথচ ঘটনার এক বছরের মাথায় তদন্ত সংস্থা তদন্ত শেষ হওয়ার ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছিল কখন, কোথায়, কীভাবে, কেন এবং কারা-কারা মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। তখন যে অভিযোগপত্রটি তারা সংবাদ-কর্মীদের সরবরাহ করেছিলেন তা আজও আদালতে পেশ করা হয় নি। আমারে দেশে বিচার বন্ধ রাখার নজিরের অভাব নেই। কিন্তু সমস্ত তথ্য প্রমাণ প্রকাশের পরে অপরাধীদের দলীয় আনুগত্যের কারণে তা বন্ধ করে দেয়ার নজির হয়তো খুব বেশি পাওয়া যাবে না।
ত্বকীর নদী ও সমুদ্রের প্রতি ছিল গভীর ভালোবাসা। বহু নদীতে ওকে নিয়ে বেরিয়েছি। ২০১৩ সালের ৬মার্চ নিখোঁজ হলে আমরা এখানে সেখানে কতনা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেছি। কিন্তু দু’দিন পর শীতলক্ষ্যাই হয়ে উঠলো তার সলিল-সমাধি। বহুবার এ শীতলক্ষ্যা আমরা এক সাথে পাড়ি দিয়েছি। এ আমাদের সাত পুরুষের ঠিকানা। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের বেড়ে ওঠার সাক্ষী। এখানেই জেনেছি নিজেকে, দুঃখের মুখোমুখি হয়েছি এখানেই। এ নদীই হয়ে রইল ত্বকীর নিষ্ঠুর পরিসমাপ্তির জ্বলন্ত সাক্ষী।
ঘাতকের জবানবন্দিতে জেনেছি, ৬মার্চ রাতেই ত্বকীকে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে রেখে সেই টর্চারসেলে ফিরে গিয়ে তারা বিরিয়ানি খেয়ে উল্লাস করেছিল। জানান দিতে চেয়েছিল সংবিধানে লেখা বাক্যগুলো সবার জন্য সমান ভাবে প্রযোজ্য হয় না, পালনীয়ও না। সরকার বা রাষ্ট্র মুখে যাই বলুক না কেন; এখানে দুর্জনেরে রক্ষা ও দুর্বলেরে আঘাত হানার নিয়ম এখনো প্রচলিত আছে।
আজ তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর জন্মদিন। ২৪বছর পূর্ণ হলো। তবে ত্বকীর বয়স আর বাড়ছে না। সতেরো বছর পাঁচ মাসে আটকে গেল একটি জীবনচক্র। কিন্তু তা না বাড়লেও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে আমাদের রক্তে চৈতন্যে দুঃখের বিষবৃক্ষ, প্রদোষে প্রাক্কালে কেবলি নিষ্ঠুর সান্ত¦না। ত্বকীর জন্মের দিনটি ছিল বিজয়া দশমী। অশুর বিনাশ আর শুভশক্তির উদ্বোধনের একটি বার্তা তখন উচ্চারিত হচ্ছিল। সে বার্তাতো প্রতি বছরই ঘুরে ঘুরে আসে। কিন্তু সে বার্তার টুটি চেপে যদি চলে দুর্বৃত্তদের নির্লজ্জ আস্ফালন তখন রাষ্ট্র নামক যন্ত্রটিকে ফ্রাঙ্কেন স্টাইনের সেই দানবের মতো মনে হয়।
ত্বকী ‘ফিরে এসো বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটি কবিতায় লিখেছে, ‘যুদ্ধের সেই সব নায়করা/ ডাক দিয়ে যায়-/ জাতির জন্য, জেগে ওঠার জন্য/ ওই জাতির জন্য; যারা ধ্বংসের মধ্যেও/ নতুন জীবনের ডাক দিযে যায়;/ তুমি কি শুনতে পাও/ সেই সব শহীদদের কণ্ঠস্বর/ যা প্রতিধ্বনি হচ্ছে বহু দিন ধরে?’ সে কণ্ঠস্বর হয়তো আমরা কেউ শুতে পাই, কেউবা পাই না। কিন্তু ত্বকী তা শুনতে পেয়েছিল। আর তাই নির্ভয়ে বলতে পেরেছিল, ‘ভয় কিসের? দ্বিধা কেন মৃত্যুতে?’
কিন্তু আমরাতো এর প্রতিকার চাই। যুদ্ধের সেইসব নায়কদের, শহীদদের প্রতি প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন চাই। এ পাপ থেকে প্ররিত্রাণ চাই। নয়তো সে পাপে নীলকণ্ঠ থেকেতো উচ্চারিত হতেই থাকবে, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান,/ অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান!/ ...দেখিতে পাওনা তুমি মৃত্যুদূত দাঁড়ায়েছে দ্বারে/ অভিশাপ আঁকি দিল তোমার জাতির অহংকারে।’
রফিউর রাব্বি
লেখক : তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর বাবা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব
- বড় রাজুর শেল্টারে সাল্লু-হীরা
- হিরণে ধ্বংসের পথে বন্দর উপজেলা বিএনপি
- ‘সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন হলে আমি অবশ্যই বিজয়ী হবো’
- মাকসুদের টাকা উড়ছে
- কাজিমউদ্দিনের মৃত্যুর পরে বেকায়দায় চাঁদাবাজ সবুজ সিকদার
- প্রকাশ্যে মানুষ খুন করার হুমকি দিচ্ছে ফেরদৌস-আউয়াল!
- খানপুর হাসপাতালে রোগীদের মধ্যে পানি ও স্যালাইন বিতরণ
- ইউনাইটেড নীটওয়্যারের শ্রমিকদের মানববন্ধন
- দাওয়াত পাননি মহানগর আ’লীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক
- আবহাওয়ার বিপজ্জনক দেশান্তরি
- কালাম-বাবুতে জমজমাট লড়াই
- ‘এই গরমে শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে কিছু টিপস’
- মাওলানা আউয়ালের মতলববাজি
- বন্দর ইউএনও’র বাসভবনের আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’
- মাকসুদকে জয়ী করতে বিএনপি নেতাদের উপর হিরণের চাপ
- তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ কাশিপুরবাসী
- শুনানি হলেও সিদ্ধান্ত আসেনি
- ত্রিমুখী লড়াইয়ে জমজমাট বন্দর
- সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠিত
- তাপপ্রবাহ কমাতে নাসিকের জল কামান
- গরমে চাহিদা বেড়েছে চার্জার ফ্যান-ছাতা-হাতপাখার, দামও চড়া
- অভাব দারিদ্রের কষাঘাতে সাধারণ মানুষ
- প্রতি রাতে তওবা ও নামাজ পড়ে ঘুমান শামীম ওসমান
- রূপগঞ্জে দেদারসে চলছে শতাধিক অবৈধ ইটভাটা” অবাধে পুড়ছে কাঠ
- তীব্র রোদে কাজ করতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষদের
- সদরের ভাগ্য নির্ধারণ আজ
- কালাম-বাবুর খোঁচাখুঁচি
- রূপগঞ্জে পাপ্পা-সেলিম দ্বৈরথ
- সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে মরিয়া সাল্লু ও হীরা বাহিনী
- সুফিয়ান আউট চাপে মাকসুদ-মুকুল
- এমপির সন্তান হুইপের আত্মীয়রাই ফ্যাক্টর
- সুফিয়ানকে চাপে ফেলার কৌশল
- পরিত্যক্ত গুদামে যুবকের লাশ
- বন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সানুর চ্যালা আজমেরীর ঘাড়ে
- চতুর্মুখী গ্যাড়াকলে রশীদ
- আইভীকে হুমকি দেয়ায় ক্ষুব্ধ আ.লীগ
- শামীম ওসমানের কাছে হকার সমস্যার সমাধান
- অনলাইনে কালামের মনোনয়নপত্র জমা
- সদরের ভাগ্য নির্ধারণ আজ
- ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব বুঝে নিলেন চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম
- সোনারগাঁ-রূপগঞ্জ নির্বাচনে আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ
- সুফিয়ান আউট চাপে মাকসুদ-মুকুল
- রূপগঞ্জে পাপ্পা-সেলিম দ্বৈরথ
- কেউ কাউকে ছাড় নয়
- প্রফুল্ল আজাদ-নাজিম
- শুনানি হলেও সিদ্ধান্ত আসেনি
- বিএনপিতে হিমশীতল হতাশা
- বন্দরে অবশেষে উত্তপ্ত হলো নির্বাচনী ময়দান
- একজন নুরুজ্জামান খাঁনের অপেক্ষায় রূপগঞ্জবাসী
- আতাউর রহমান মুকুলকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা
- H2o নিয়ে আমরা হাসি, দিন শেষে আমাদের নিয়ে হাসে তারা!
- একজন তরুন কবির চোখে বঙ্গবন্ধু
- আশীর্বাদ না অভিশাপ কিং মেকার!
- আজ গৌর পূর্ণিমা, শ্রী চৈতন্য দেবের আবির্ভাব তিথি
- একজন বাঙালী মা ও মুক্তিযুদ্ধ
- দীপাবলী শ্যামাপূজা ও বাঙালি নারী
- পরিবেশ সুরক্ষা ও নান্দনিক পরিবেশ বাস্তবায়িততেই -সামাজিকের অগ্রগতি
- সাইফুল্লাহ বাদল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক
- নারী দিবসের তাৎপর্য নেই
- মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুলালকে দাদা’র প্রার্থী ঘোষণা
- শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার বিষয়ক আশ্রয়ণ প্রকল্প
- বায়ুদূষণ রোধে করণীয়
- বসন্তে বাসন্তী পূজার ইতিবৃত্ত
- রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট প্রজা কষ্ট পায়
- পোষ্টার লাগানোর সময় বৈধ, পরে অবৈধ!