শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জেলা আওয়ামী লীগের প্রশ্ন ফাঁস

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ অক্টোবর ২০২২  


# আদিনাথকে ভিপি বাদল জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার জানি কী পোষ্ট ?



অবশেষে  জেলা আওয়ামী লীগ নিয়ে নেতাকর্মীদের আক্ষেপ ঘুঁচাবার সুযোগ এসেছে তৃণমূল কর্মীদের। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুদল হাই  ও  সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদল একত্রিত হয়ে কমিটি গঠনের পর থেকে যে স্বেচ্ছাচারিতা, কমিটি বাণিজ্য এবং তৃণমূলের কর্মীদের আবেগ নিয়ে যে খেলা শুরু করেছেন তারও ইতিটানার সময় হয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

কমিটির ৬৮ সদস্যের মতামতকে অবমূল্যায়ন করে এমনকি ধার না ধরে গতবছর ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচন করেছেন তারা। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিগুলো নিয়ে একপ্রকার ছেলে খেলা করেছেন। যার দরুণ  জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হয় এছাড়া কমিটির নেতাদের গুরুত্বও তৃণমূলে হ্রাস পায়।

 

 

 

 

 

 

 

গতকাল  ২নং রেলগেটে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভাতেও বিষয়টি প্রকাশ পায়।  জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাইয়ের সভাপতিত্বে সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ মো. বাদলের সঞ্চালয় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

 

 

 

 

 

 

 

যদিও সভায় জেলা আওয়ামী লীগের কমিটির নেতাদের মনের ক্ষোভ প্রকাশের সুযোগ দেয়া হয়নি, তবে দুই একটি ঘটনায় জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান চিত্র মির্জা আজমের কাছে পরিষ্কার করা হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি নতুন নয়। 

 

 

 

 

 

 

 

 

নারায়ণগঞ্জে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যতজন হয়েছেন সবচাইতে বেশি অভিযোগ কেন্দ্রে জমা পড়েছে আবদুল হাই ও ভিপি বাদলের বিরুদ্ধে। শুধু কমিটি বাণিজ্য কিংবা ইউপি নির্বাচন নয় যে কোন সিদ্ধান্ত গঠনে জেলা আওয়ামী লীগের অন্য কোন নেতার মতামতকেই তোয়াক্কা করেননি তারা।

 

 

 

 

 

 

 

অবস্থা এমন হয়েছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ভুলেই গেছেন জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে কে কোন পদে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, গতকালের বর্ধিত সভা সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক ভিপি বাদল। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের  কমিটিতে থাকা সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য দেয়ার জন্য আহবান করছিলেন।

 

 

 

 

 

 

 

এক পর্যায়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আদিনাথ বসুকে তিনি বক্তব্য দেয়ার জন্য বলেন। কিন্তু এর আগে আদিনাথকে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, তুমি জানি কোন পদে আছো, তোমার পোস্ট টা কি জানি? ভিপি বাদলের এমন প্রশ্নে হতচকিত হয়ে উঠেন আশেপাশের জেলা কমিটির নেতারা।

 

 

 

 

 

 

 

 

এমনকি মির্জা আজমও হতভম্ব হয়ে উঠেন। পরে মাইক নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আদিনাথ বসু মির্জা আজমের উদ্দেশ্যে বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান চিত্র কি তা একটু আগের ঘটনাই তার প্রমাণ করে। সাধারণ সম্পাদক জানেন না  জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে কে কোন পদে আছে। এই কথা বলার পরপর উত্তপ্ত হয়ে উঠে বর্ধিত সভা।

 

 

 

 

 

 

 

 

এমনকি ভিপি বাদলও রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। তখন হাউজের অবস্থা উত্তপ্ত দেখে মির্জা আজম ভিপি বাদলকে বলেন, আপনি সেক্রেটারি আপনি চিৎকার করেন কেন? এরপর ঠাণ্ডা হন ভিপি বাদল। কিন্তু এরপরেও জেলা কমিটির নেতারা মিনমিন সুরে বলাবলি করেন, স্বেচ্ছাচারিতা করতে করতে সভাপতি ও সেক্রেটারির অবস্থা এমন হয়েছে কে কোন পদে কতদিন ধরে আওয়ামী লীগের আছে সেটাই তারা ভুলে যান।
 

 

 

 

 

 

 

 


পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে বক্তব্যে আদিনাথ বসু বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বসিত। তবে আবার সংশয়ও রয়েছে। কেননা  সবাই বলাবলি করছে, জেলা আওয়ামীলীগের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে। জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যারা সভাপতি ও সেক্রেটারি  হিসেবে আছেন তারাই নাকি আবারো একই পদে থাকবেন। 

 

 

 

 

 

 

 

 

এটা সবার কাছে কারা ছড়িয়ে দিলো আগের কমিটিই থাকছে। সম্মেলনের আগে এমন কথা ছড়ানো প্রশ্ন ফাঁস কতটা যোক্তিক। তবে  জেলা আওয়ামী লীগের এমন প্রশ্ন ফাঁস হওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম তার বক্তব্যে বলেছেন, যে যত প্রশ্নই ফাঁস করুক না কেন, জেলা আওয়ামীলীগ কিংবা মহানগর আওয়ামী লীগের  নেতৃত্ব কার কাছে দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

 

 

 

 

 

 

 

এখানে আমাদেরও কিছু করার নেই। সম্মেলনে নেত্রী যাকে দায়িত্ব দিবেন তাকেই সবার মেনে নিতে হবে। তবে ২৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। তবে সম্মেলনের ভেন্যু নির্ধারণের জন্য ৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের কমিটিকে কার্যকরী সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেন মির্জা আযম।

 

 

 

 

 

 



মির্জা আজমের বক্তব্যের আগে সম্মেলনের ভেন্যু নিয়েও উত্তপ্ত  হয়ে উঠে জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা। বর্ধিত সভা  নিয়ে একটি অংশ প্রস্তাব করেন দেওভোগে শেখ রাসেল পার্কের খোলা মাঠের সম্মেলনের যাতে আয়োজন করা হয়। তবে বেশ কয়েক নেতা প্রস্তাব করেন  মাসদাইরে ওসমানী পৌর স্টেডিয়াম কিংবা খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে।

 

 

 

 

 

 

 

 

তবে জেলা আওয়ামী লীগের আগের কার্যকরী সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরের সভা রূপগঞ্জে আয়োজনের কথা থাকায় সেখানেও সম্মেলন করার কথা অনেকে প্রস্তাব করেন। তবে এব্যাপারে কোন সিদ্ধান্ত বর্ধিত সভায় হয়নি। ফলে ৩ অক্টোবর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী সভার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেন মির্জা আজম।

 

 

 

 

 

 

 

 

সম্মেলনের ভেন্যু নির্ধারণের পর ডিসি ও এসপিকে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য অবহিত করার কথাও বলেন তিনি। এরআগে বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী সম্মেলনের ভেন্যু নিয়ে বক্তব্যে বলেন, যেখানেই সম্মেলন করা হোক না কেন আমরা যেতে ভয় পাইনা।

 

 

 

 

 

 

 

তবে নেতাকর্মীদের যে আক্ষেপ ও ক্ষোভ রয়েছে তা কেন্দ্রীয় নেতারা শুনে শান্তনা ও আশ্বাস দিতে পারেন। এতে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত হন। এরআগে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাই ও সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহীদ বাদল মির্জা আজমের সামনে কার্যকরী সভা আয়োজন করা নিয়ে বেকায়দায় পড়েন। সভায় যেহুতু তাদের স্বেচ্ছাচারিতার প্রশ্ন নিয়ে উত্তাপ ছড়ায়।

 

 

 

 

 

 

 

সেখানে মির্জা আজমও বলেন, এই ৫ বছরে মাত্র ১১টি কার্যকরী সভা আয়োজন করলো কেন জেলা আওয়ামী লীগ।  এসময়ে অনেকে পাশ থেকে বলে উঠলো মূল হিসেব হবে মাত্র ৪/৫টা কার্যকরী সভা। তখন মির্জা আজম বলেন,  প্রতি মাসে একটি কার্যকরী সভা হলে ৩০টার বেশি অন্তত কার্যকরী সভা হওয়া উচিৎ ছিল।

 

 

 

 

 

 

 

এছাড়া প্রতি ৩ মাস পর পর বর্ধিত সভা, বছরে অন্তত একটি জনসভা করার কথা ছিল জেলা আওয়ামীলীগের। আমিই মাত্র ৫ বছরে একবার এই জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় আসতে পারলাম। মির্জা আজমের বক্তব্যের পর মুখে কুলুপ আটেন আবদুল হাই ও ভিপি বাদল। বর্ধিত সভায় যে কেন্দ্রীয় নেতারা সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের কাজকর্মের বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এটাই স্বার্থকর্তা।

 

 

 

 

 

 

 

 

তাছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারাতো বটেই আওয়ামী লীগ সভানেত্রীও নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের অবস্থা অজানা থাকার কথা নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক নেতাকর্মীই বলেন, কার্যকরী সভা, বর্ধিত সভাই যেখানে হয়না তার মধ্যে সম্মেলনের আগে বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় কেন্দ্রীয় নেতা এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেবেন এমন প্রত্যাশাই নেতাকর্মীদের।

 

 

 

 

 

 

 

দল ক্ষমতায় থাকার পর ত্যাগী নেতাদের অবমূল্যায়নে কী ধরণের রক্তক্ষরণ হয় সেটি খুব ভালোভাবেই বুঝবেন আওয়ামীলীগ সভানেত্রী এমনটাই আশা তৃণমূলের। জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ও সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও নাসিক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনের সাংসদ ও সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু, সাবেক সাংসদ ও সদস্য  কায়সার হাসনাত।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা,  জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, আবদুল কাদির, আরজু রহমান ভূঁইয়া, আদিনথ বসু, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য এড. আনিসুর রহমান দিপু, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, আবু জাফর চৌধুরী বীরু, ইকবাল পারভেজ, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম আবু সুফিয়ান, মীর সোহেল, দপ্তর সম্পাদক এমএ রাসেল, সদস্য শহীদুল্লাহ , হেলো সরকারসহ জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।   এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর