শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জেলা বিএনপিতে দালাল ও ভিলেন! 

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২১  

একজন আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত দালাল, অপরজন ঢাকাই সিনেমার ভিলেনের ভূমিকায় পিস্তল উচিয়ে নিজ দলের কর্মীদের উপর গুলি বর্ষণ করে দেশ ব্যাপী সমালোচিত। বলা হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস ও ফতুল্লা থানা বিএনপির সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লার কথা। বিএনপিতে সর্বাধিক বিতর্কিত ওই দুই ব্যক্তিই আছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির কমিটিতে। এর মধ্যে পান্না মোল্লা যুগ্ম আহবায়ক এবং আজাদ বিশ্বাস সদস্য।

 

জানা গেছে, বিতর্কিত ওই দুই ব্যক্তির কাঁধে দেয়া হয়েছিল ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটির দায়িত্ব। ওই কমিটির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাস এবং সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম পান্না মোল্লা। দীর্ঘ এক বছরেও তারা ফতুল্লা থানা বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেনি। কমিটি গঠনের উদ্যোগ তো দুরের কথা, বিগত সময়ে দলীয় কর্মসূচি বা আন্দোলন সংগ্রামেও ছিলেন না কেউ। এই অবস্থায় বিএনপির ৪২ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও দলীয় চেয়ার পার্সন বেগম জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়ার আয়োজন করে ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটি।

 

যা ছিলো ফতুল্লা থানা আহবায়ক কমিটির ব্যানারে প্রথম এবং শেষ কোন কর্মসূচি। তাও আবার আট মাসের মাথায়। এর মধ্যে কোন কর্মসূচিতে দুরে থাক, নেতা কর্মীদের খোঁজ খবরও রাখেননি তারা। তাই ওই অনুষ্ঠানেই তৃণমূলের ব্যপক তোপের মুখে পরে আজাদ বিশ্বাস ও পান্না মোল্লা। থানা কমিটিতে ব্যর্থতার দ্বায় বহন করা ওই দুই ব্যক্তিই এখন জেলা কমিটিতেও এসে রয়েছেন নিষ্ক্রিয়।


বিএনপির একাধিক সূত্র জানায়, আজাদ বিশ্বাস ও পান্না মোল্লা উভয়ে শাহ-আলম অনুসারী। শাহ-আলম স্থানীয় রাজনীতি থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিলেও মূলত তার কারিশমাতেই জেলা কমিটিতে স্থান পেয়েছে আজাদ বিশ্বাস ও পান্না মোল্লা। জেলা কমিটিতে এসেও তারা বরাবরের মতই নিরব ভূমিকায় আছেন। যদিও জেলা কমিটিতে তাদের অর্ন্তভুক্তি নিয়ে শুরু থেকেই সমালোচনার ঝড় উঠেছিলো। এরই মধ্যে আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসকে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের দালাল বলেই ক্ষোভ ঝেরেছেন নারায়ণগঞ্জ মহিলা দলের প্রথম যুগ্ম আহবায়ক ও সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর আয়েশা আক্তার দিনা।

 

নারায়ণগঞ্জের একটি গণমাধ্যমের লাইভ টকশো অনুষ্ঠানে আজাদ বিশ্বাসকে আওয়ামী লীগের দালাল বলে আখ্যায়িত করেন তিনি। একই সাথে পূর্নাঙ্গ কমিটিতে আজাদ বিশ্বাসকে না রাখতে আহবানও জানিয়েছিলেন এই মহিলা নেত্রী। তিনি বলেছিলেন, ‘জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে দালাল হিসেবে আমি এ্যাডভোকেট আজাদ বিশ্বাসকে বুঝিয়েছি। তিনি চিহ্নিত দালাল। এক্ষেত্রে তৈমুর ভাইয়ের উচিৎ হবে দল থেকে এ ধরনের দালালকে দূরে সরিয়ে রাখা। একটি দালালমুক্ত কমিটি গঠন করবে। আমরা আশা করবো তিনি দালাল মুক্ত কমিটি আমাদের উপহার দেবেন।’

 

তবে, শেষতক তা হয়নি। জেলা কমিটিতে এসেও দালালির মাধ্যমে অবস্থান টিকিয়ে রেখেছেন আজাদ বিশ্বাস। তাকে আহবায়ক কমিটিতে রেখেই জেলার থানা ও পৌর কমিটিগুলো গুছানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে জেলা বিএনপি। যদিও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে উপ কমিটির নেতারা থানা ও পৌর কমিটিগুলো গুছাতে পারেননি। এদিকে, আজাদ বিশ্বাসকে আওয়ামী লীগের দালাল বলার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী বলেন, ‘২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আজাদ বিশ্বাসকে প্রকাশ্যে নৌকার পক্ষে শামীম ওসমানের জন্য ভোট চাইতে দেখা গেছে।’

 

সূত্র বলছে, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে মাসদাইর মজলুম মিলনায়তনে একটি সভায় জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদিকা রহিমা শরীফ মায়া আবুল কালাম আজাদ বিশ্বাসের সামনেই তার দিকে আঙ্গুল তুলে বলেছিলেন, ‘এই আজাদ বিশ্বাস আওয়ামীলীগের দালাল। তারা এতটাই আদর্শহীন হয়েছে যে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন পালনে যখন নেতাকর্মীরা পুলিশের লাঠির সামনে ধস্তাধস্তি করছেন তখন তারা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের মুখে মিষ্টি তুলে দিচ্ছেন। শুধু কী তাই?

 

এর আগে আজাদ বিশ্বাসের সামনে একই মঞ্চে জিয়াউর রহমানকে কুকুর বলে গালি দিয়েছিল মহানগর আওয়ামীলীগের প্রয়াত নেতা গোপীনাথ দাস। কিন্তু আজাদ বিশ্বাস সেদিন মুচকি হেসেছিলেন!  সেই আজাদ বিশ্বাসই এখন জেলা বিএনপির কমিটিতে! এদিকে, বিতর্কের দিক থেকে পিছিয়ে নেই পান্না মোল্লাও। যিনি ইতিমধ্যেই ঢাকাই সিনেমার ভিলেন হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছেন। সূত্র বলছে, ২০১২ সালের ৩ নভেম্বর ফতুল্লার কুতুবপুরে যুবদলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষের সময়ে পান্না মোল্লা প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে গুলি করেছিলেন। এতে ৫জন গুলিবিদ্ধ হন। তার ওই গুলি করার ছবি দেশের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়। এ ঘটনায় তুমুল বিতর্কিত হয় পান্না মোল্লা। সন্ত্রাসী খেতাবও পায় সর্বত্র।’

 

এরপরও বিএনপিতে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেয়ে যাচ্ছেন সন্ত্রাসী আখ্যা পাওয়া এই ব্যক্তি। তিনি ছিলেন ফতুল্লার কুতুবপুুর ইউনিয়ন বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি। এক লাফে ২০১৭ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি গঠিত জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে দায়িত্ব পান পান্না মোল্লা। এই কমিটি ২০১৯ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি বিলুপ্ত গোষণা করা হয়। এরই মাঝে গত ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি ফতুল্লা থানা বিএনপির আহবায়ক কমিটিতে সদস্য সচিব পদে দায়িত্ব পায় পান্না মোল্লা। এতে বরাবরের মত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসলেও সেই তিনিই এখন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক বনে গেছেন। 

এই বিভাগের আরো খবর