বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

জেলা বিএনপির সম্মেলনে আসছে চমক

লিমন দেওয়ান

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৩  

 

# ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামছে এক ঝাঁক নেতা
# গিয়াসউদ্দিনকে ছাড় দিয়ে সদস্য সচিবে প্রতিযোগিতা

 

 

দীর্ঘ দেড় যুগ ক্ষমতার বাহিরে থাকা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল হচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। সারা দেশেই রয়েছে তাদের সমর্থন ও কর্মীবাহিনী। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা বিগত দিন থেকে বর্তমানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে দফায় দফায় দলীয় কর্মসূচি ও স্বচ্ছ রাজনীতির মাধ্যমে অনেকটাই গর্জে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতি।

 

এছাড়াও জেলা বিএনপির আওতাধীন সকল থানা, উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়নের কমিটিগুলো গঠনের মাধ্যমে নেতাকর্মীরা আরো উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে। যার পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটিকে আরো শক্তিশালী হিসেবে গড়ার লক্ষে। দীর্ঘ দেড় যুগেরও বেশি সময় পড়ে জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোন বেন্যু নির্দিষ্ট করা হয়নি। তার পাশাপাশি কোন তারিখের ও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আর বর্তমানে এই কাউন্সিল নিয়ে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের মাঝে একটি আলাদা জোস কাজ করছে।

 

জানা গেছে, গত ৩০ মে জেলা বিএনপির আহবায়ক ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন এই কাউন্সিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। জেলা বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি  বলেন, খুব শিঘ্রই জেলা বিএনপির কাউন্সিল হবে। সেখানে আনন্দ উদ্দীপনা ও তরুণ নেতৃত্বের একটা চমক থাকবে বলে আমি বিশ্বাস করি। দীর্ঘ ২২ বছর পর এই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। আমি আপনাদের সাহায্য চাই। অনেক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে যেনো সম্মেলন করা না হয়। যেকোনো কিছুর মূল্যে এটা প্রতিহত করতে হবে।

 

তিনি আরও বলেন, কে নেতা হবে তা জানি না। বিএনপি করে এমন কেউ প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি হবে। তাই যে কেউ নেতা নির্বাচিত হোক না কোনো তাকেই আমরা মেনে নিবো। দলে নিজের স্বার্থের জন্য দয়া করে কেউ কোনো গ্রুপিং করবেন না। তার এই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা অনেকটাই লড়ে চড়ে বসেছেন। সকলেই এখন সম্মেলন নিয়ে নানা প্রস্তুতি গ্রহন করছেন। ইতিমধ্যেই এই সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি পদে বর্তমান আহ্বায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিনের বিপরীতে আর কাউর কাউর খবর শোনা যায়নি।

 

কিন্তু গুঞ্জন পাওয়া গেছে, সাধারণ সম্পাদকের পদ পেতে ইতিমধ্যেই বর্তমান কমিটির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন, যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল রাজীব, যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান খোকা এছাড়াও কমিটির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ ও এই পদের জন্য নির্বাচন করতে পারেন এমন গুঞ্জন ও শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে কমিটির ৯জন ব্যথিত বাহিরের কোন নেতাকর্মীর নাম এখানো আলোচনায় আসেনি। কিন্তু নেতাকর্মীদের দাবি, এই সম্মেলনের মাধ্যমে অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠবে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি।

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৩ সালে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় থাকায় ২০০৯ সালের ২৫শে নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি’র সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেয়া হয়। সর্বশেষ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধরণ সম্পাদক করা হয়।

 

কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। যার ফলে ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় সাড়ে ৩ বছর পর জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়।

 

নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা-উপজেলা-ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পার হলেও এই আহ্বায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এরমধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে।

 

দুই বছরের মাথায় একই বছরের ১৫ই নভেম্বর মনিরুল ইসলাম রবি ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তার সাথে সাথেই দীর্ঘ দেড় যুগে জেলা বিএনপির দায়িত্বে আসা নেতাকর্মীরা যে ব্যর্থ হয়েছিলেন সেখানে নতুন আলো ছিটিয়ে দেয় নতুন আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক সাবেক এমপি গিয়াস উদ্দিন।

 

বিগত দিনে সকল নেতাকর্মীরা সকল ইউনিটপুরো যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা শূর্নস্থান পরিবর্তন করতে পারেনি তা গিয়াস উদ্দিনের হাত ধরেই পূরন হলো। আর দীর্ঘ ২২ বছর পর জেলা বিএনপির চমক সম্মেলন হতে যাচ্ছে এতো যাকজমোক সম্মেলন বিগত দিনে ও করতে পারেনি বিএনপির নেতাকর্মীরা। জানা গেছে, জেলা বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটির আসার পর থেকেই অনেকটা উজ্জ্বীবিত হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির রাজনীতি।

 

আর এই কমিটিতে আহ্বায়ক করা হয় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছেন গোলাম ফারুক খোকন। সেই সাথে কমিটিতে ১ম যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন মামুন মাহমুদ। অন্যান্য যুগ্ম আহবায়ক হিসেবে রয়েছেন মনিরুল ইসলাম রবি, শহিদুল ইসলাম টিটু, মাসুকুল ইসলাম রাজীব, লুৎফর রহমান খোকা, মোশারফ হোসেন ও জুয়েল আহমেদ। এ কমিটি হওয়ার পর থেকে জেলা বিএনপির নেতৃত্ব গিয়াস উদ্দিনের হাতে আসে। তার নেতৃত্বে জেলা বিএনপিসহ সকল অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আগের তুলনায় আরো সুসংগঠিত এবং শক্তিশালী হতে থাকে।

 

এ কমিটি গঠন হওয়ায় ৯ দিন পরই কেন্দ্রের নির্দেশে বড় শোডাউন করে চমক দেখায় জেলা বিএনপি। পরবর্তীতে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশে ঘোষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একের পর এক কর্মসূচী সফলভাবে পালন করে জেলা বিএনপি। এরই ধারাবাহিকতায় কেন্দ্রের নির্দেশে সর্বশেষ ১৯ মে গণসমাবেশ করে বিএনপি। ১০ দফা দাবিতে বিএনপি যে আন্দোলন শুরু করেছে, এটি ছিল তাদের ১০ম কর্মসূচি।

 

এর আগে গত ২৪ ডিসেম্বর ৯ বিভাগীয় শহরে, ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণমিছিল, ১১ জানুয়ারি সারাদেশে অবস্থান কর্মসূচি, ২৫ জানুয়ারি সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশ, ১১ ফেব্রুয়ারি ইউনিয়ন পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচী, ২৫ ফেব্রুয়ারি জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা কর্মসূচী, ১১ মার্চ মানববন্ধন কর্মসূচী, ১ এপ্রিল ও ৮ এপ্রিল অবস্থান কর্মসূচি পালন করে জেলা বিএনপি। আর সকল পোগ্রামেই একের পর এক চমক দেখিয়ে গেছেন জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিন।

 

যার ফলে তার নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের উৎফুল্লতা আরো অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর দীর্ঘ অপেক্ষার পর গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে থাকার কারণে যে সম্মেলন আসতে যাচ্ছে তা জেলা বিএনপিকে আরো গর্জে তুলবে বলে ও মনে করছে তৃনমূলের নেতাকর্মীরা। আর ইতিমধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে আসতে নেতাকর্মীরা ভিড় জমিয়েছে ও গ্রুপিং শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু আহ্বায়ক গিয়াস উদ্দিনের দাবি, যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারাই পদে পদায়ন করা হবে। এদিকে বিদ্রোহী নেতা জেলা বিএনপির ১নং যুগ্ম আহ্বায়ক মামুন মাহমুদ কাউন্সিলে অংশ গ্রহণ কবে না জানা গেলেও তিনি যুগের চিন্তাকে বলে সে ও এই দলীয় সম্মেলনে অংশ নিতে প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।

 

এদিকে বিএনপির স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাউন্সিল সফলভাবে করার জন্য এরইমধ্যে জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। এদিকে ৩০ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির কাউন্সিল করার জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানা যায়। এই লক্ষ্যে জেলা বিএনপির নেতারা এখন কাউন্সিল আয়োজন করার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নেতাকর্মীরা এই কাউন্সিল জাকঁজমকপূর্ণ ভাবে পালন করার ঘোষণা দিয়ে যাচ্ছেন।

 

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গোলাম ফারুক খোকন যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা সম্মেলন নিয়ে বর্তমানে অনেকটাই প্রস্তত রয়েছি। আর এই সম্মেলনের মাধ্যমেই নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতি আরো স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হবে। আর এখন পর্যন্ত আমাদের কোন ভেন্যু দেওয়া হয়নি। তারপাশাপাশি কোন ডেট ফিক্সড করা হয়নি। কিন্তু আমরা বর্তমানে কাউন্সিলের জন্য ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।

 

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির ১ নং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যপক মামুন মাহমুদ যুগের চিন্তাকে বলেন, আমরা আভাস পেয়েছি অতি শীঘ্রই কাউন্সিল হতে যাচ্ছে। আর এখন পর্যন্ত ভেন্যু কোথায় হবে তা নিয়েও কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। আর যেহেতু এটা দলের কাউন্সিল সেখানে আমরা উপস্থিত থাকবো আর সবাই যদি আমাকে চায় তাহলে আমি নির্বাচন করতেও প্রস্তুত রয়েছি।

 

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক লুৎফর রহমান খোকা যুগের চিন্তাকে বলেন, বর্তমানে আভাস চলছে অতি শীঘ্রই সম্মেলন হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। আর এখন পর্যন্ত কোন তারিখ নির্ধারন করা হয়নি। কিন্তু আমরা বর্তমানে সম্মেলন নিয়ে ব্যাপকভাবে প্রস্তত আছি।এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর