শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি পদে কে আসছেন

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১ জুলাই ২০২২  


# তিন নেতার দৌড়ঝাঁপ
# বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছেড়ে যাইনি : মাসুম
# কর্মীদের মন জয়ের মাধ্যমে নেতা হওয়া যায় : ছগীর  

 

টানা তিন মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় রয়েছে দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। আর এই দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও তাদের অন্যতম প্রধান অঙ্গসহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখায় তেমন একটা শক্তিশালী হতে পারছে না। শক্তিশালী না হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হিসেবে মনে করছেন কমিটি না থাকা। বর্তমানে ৫ মাস যাবৎ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের কমিটি নেই। আর এতে করে ঝিমিয়ে পরছে দলীয় নেতারা। তবে যারা পদে আসতে চাচ্ছেন তারা তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে দলীয় নেতা কর্মীদের সক্রিয় রাখছেন।


এদিকে এই বছরের শুরুতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সকল থানা এবং ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর নির্দেশক্রমে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর শাখা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং এর অন্তর্গত সদর থানা, ফতুল্লা থানা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা, বন্দর থানা, রূপগঞ্জ থানা, সোনারগাঁ থানা কমিটি ও মহানগরের অন্তর্গত ২৭টি ওয়ার্ড কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। যা বর্তমানে কমিটি বিহীন আছে নারায়ণগঞ্জ জেলা মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ।

 

অন্যদিকে দলীয় সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে স্বেচ্ছাসেবক লীগের আত্মপ্রকাশ ঘটার পর তৎকালিন সময়ে নারায়ণগঞ্জে এই সংগঠনটির কাগজে-কলমে কোন কমিটি না থাকলেও নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দিতেন প্রয়াত রাজনৈতিক মাহাতাব উদ্দিন লাল ও নিয়াজুল।


 
অতঃপর ২০০৩ মতান্তরে ২০০৬ সালে আহবায়ক ও ৫ জন যুগ্ম আহবায়কসহ মোট ১০১ সদস্য বিশিষ্ট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় নিজাম উদ্দীনকে এবং যুগ্ম আহবায়ক করা হয় ফিরোজ হোসেন, আব্দুল মতিন মন্টু, গোলাম কিবরিয়া খোকন ও শাহাজাদা প্রধান বাবুলকে। তাদের ওই আহবায়ক কমিটি দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৮ বছর পার করলেও পূর্নাঙ্গ হয়নি জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের কমিটি। তাছাড়া বর্তমানে জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগে কোন কমিটি না থাকায় যারা নেতৃত্বে আসতে চায় তারা সক্রিয় ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।


 
খোঁজ নিয়ে জানাযায়, নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ কমিটিতে সভাপতি পদে আসতে একাধিক নেতা দৌড়ঝাঁপ করছে। তার মাঝে সবাই তরুন প্রজন্মের ইয়াং জেনারেশন হিসেবে পরিচিত। তবে এবার জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগে কমিটিতে পদে আসার জন্য নতুন প্রার্থীই বেশি। নতুন প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন, সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও থানা ছাত্রলীগের যুগ্ম সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম। এই নেতা দলের দুঃসময়ে একাধিকবার জেল খেটেছেন। বিএনপির ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করেন। দলের জন্য ত্যাগ শিকার করেছে। কারা বরণ করার পরেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে যাননি। তার দাবি দল তাকে মূল্যায়ন করবে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগে পদে দায়িত্ব পাবেন বলে আশাবাদি।

 

সোনারগাঁয়ের আরেক কৃতি সন্তান ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহম্মেদ সভাপতি পদ পেতে দৌরঝাপ করছেন। এবং তিনি দলের দুঃসময়ে আন্দোলন সংগ্রামে ঢাকায় অগ্রনী ভূমিকা পালন করেছে। তিনি সভাপতি পদে দায়িত্ব পাবেন বলে আশাবাদি। 

 

অন্যদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা জামির হোসেন রনি সভাপতি পদে সিভি জমা দিয়েছেন। তিনিও ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক আহবায়ক কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছে। দল তাকে মূল্যায়ন করবে বলে তিনি আশাবাদী। 

 

সেই সাথে পিছিয়ে নেই জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাবেক আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক গোলাম কিবরিয়া খোকন। তিনি বিভিন্ন নেতার সাথে যোগ সাজস করে দৌড়ঝাঁপ করে যাচ্ছে। কিন্তু কেন্দ্র তাকে মুল্যায়ন করে সভাপতি পদে দায়িত্ব দিবে বলে তিনি আশাবাদী। তবে  পূর্বের  আহবায়ক কমিটি নিয়ে তৃনমূলের নানা অভিযোগ রয়েছে, কেননা পূর্বে তারা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের থানা পর্যায়ে কমিটি দিতে পারেনি। এতে তাদের ব্যর্থতার দায়ভার এড়িয়ে যেতে পারেন না। নতুন কমিটিতে আসার জন্য তরুন একাধিক নেতা দলীয় কর্মসূচিতে সরব হয়ে কাজ করে যাচ্ছেন।

 

এদিকে কমিটিতে পদে আসার জন্য এই চার নেতা নিজেদের অবস্থান জানান দেয়ার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। সেই সাথে দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছেন। স্বেচ্ছাসেবকলীগে এবার নতুন নেতৃত্ব চান তৃনমূল নেতা কর্মীরা। একাধিক নেতা অভিযোগ তুলেন, আগের কমিটিতে যারা দায়িত্ব পালন করেছে তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে ব্যার্থ হয়েছেন। আর এজন্য এবার তাদের কপাল পুরতে পারে। অন্যদিকে নতুন মূখ হিসেবে জেলার ৩ নতুন মুখ দলীয় কর্মসূচি পালনের পাশাপাশি নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে কেন্দ্রের শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে যাচ্ছেন। তারা প্রত্যেকেই আশাবাদি কেন্দ্র তাদের মূল্যায়ন করে সভাপতি পদে দায়িত্ব দিবেন। তবে ৪ জন সভাপতি পদ দাবী করলেও ১ জন সভাপতি হবেন। কিন্তু কেন্দ্র যাকে যোগ্য মনে করে সভাপতি পদে দায়িত্ব দিবে তারা তাকেই মেনে নিবে।

 

জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান মাসুম বলেন, আমি কলেজ ছাত্রলীগ থেকে শুরু আমি যখন যে সংগঠনে কাজ করেছি তখন দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি কলেজ ছাত্রলীগ করেছি, থানা ছাত্রলীগ করেছি, থানা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক সাধারন সম্পাদক পদে দায়িত্ব পালন করেছি, সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের সাথেও সম্পৃক্ত আছি। তাই আমি বিশ্বাস করি কেন্দ্র যদি আমাকে নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ সভাপতি পদে দ্বায়ীত্ব দেয় আমার শতভাগ সততা এবং নিষ্ঠা দিয়ে আমি আমার দল কে সাজাতে পারবো বলে আমি বিশ্বাস করি।

 

তিনি কমিটি প্রসঙ্গে বলেন, দলকে শক্তিশালী করতে হলে দলের সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হবে। আর এজন্য আমি মনে করি নারায়ণগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ কমিটি দ্রুত হওয়া উচিৎ। দলের জন্য সর্বদা ত্যাগ করেছি। কখনো দল থেকে কোন সুবিধা নেই নাই। এমনকি জেল জুলমের মাধ্যমে নির্যাতিত হয়েও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে সরে যাইনি। নেতা কর্মীদের খোজ খবর রেখেছি। তাদের পাশে থেকেছি। আমাকে সভাপতি পদে দায়িত্ব দিলে সকলকে নিয়ে শক্তিশালী কমিটি গঠন করতে সক্ষম হবো।

 

জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের আরেক সভাপতি পদপ্রার্থী জামির হোসেন রনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগ কমিটিতে দায়িত্ব পালন করেছি। তাছাড়া ২০১৯ সনের স্বেচ্ছাসেবকলীগের জাতীয় সম্মেলনে আমি নারায়ণগঞ্জ থেকে কাউন্সিলর হিসেবে ছিলাম। জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের দায়িত্বে থাকা কালীন স্বচ্ছতা এবং দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। নিপু আরাফাত কমিটির ছাত্রলীগে দায়িত্ব পালন করেছি। তাই আমি মনে করি কেন্দ্র আমাকে মূল্যায়ন করবে।


অন্যদিকে জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ও ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ছগীর আহম্মেদ বলেন, আমি বিএনপির সরকারের আমলে ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেছি। তখন থেকে তৃনমূল পর্যায়ের নেতা কর্মীদের সাথে মিলে কাজ করেছি। সেই সাথে নেতা কর্মীদের মনজয়ের চেষ্টা করেছি। কেননা নেতা হলে সবার আগে কর্মীদের খোজ খবর নিতে হবে। তাহলে নেতা হওয়ার আশা করা যায়। দলীয় আন্দোলন সংগ্রামে সব সময় রাস্তায় মিছিল মিটিং করেছি। গোলাম কিবরিয়া খোকনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তার নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।এমই/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর