শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

টাকার অভাবে মৃত্যু পথযাত্রী ফতুল্লার আ.লীগ নেতা এনায়েত

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২৩  


টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে এখন মৃত্যু পথযাত্রী ফতুল্লার আওয়ামী লীগ নেতা এনায়েত। তিনি তার সারাটি জীবন আওয়ামী লীগের জন্য উসর্গ করেছেন বলেই জানান তার এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু এনায়েত জানেন না কিভাবে অসৎ পথে টাকা উপার্জন করতে হয়। তাই সারা জীবন গরীবই থেকে যান সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের এই একনিষ্ঠ কর্মী।

 

 

গত ৩০ বছর ধরে ফতুল্লা থানাধীন এনায়েতনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন এনায়েত হোসেন মিয়া। গত ২৬ মে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বাকশক্তি হারাতে বসা এনায়েত মিয়া চিকিৎসা না পেয়ে বাসা-বাড়িতেই ধুকে ধুকে মরছেন। কোনো হাসপাতালেও ভর্তি হতে পারছেন না। 

 

 

এদিকে দীর্ঘ সময় আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত থাকা প্রবীণ এই রাজনীতিবীদ বেঁচে থাকার আকুতি জানান। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য দানবীর সেলিম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার স্ত্রী লিপি ওসমান, সন্তান অয়ন ওসমানসহ বিত্তবান ও দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে সহযোগীতা চান এই আওয়ামী নেতা। 

 

 

জানা গেছে, ১৯৭৭ সালে ছাত্রলীগের মাধ্যমে রাজনীতিতে পদার্পণ করেন তিনি। ১৯৭৮ সালে চাষাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি, ১৯৮২ সালে চাষাড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি হন এই রাজনীতিবীদ। আওয়ামীলীগের চরম দু:সময়ে যখন নেতাকর্মীদের সংকট ছিলো, সেই সময়ে (১৯৮৫ সালে) মাসদাইরে এসে গঠিত এনায়েতনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের কমিটিতে প্রচার সম্পাদকের পদ পান।

 

 

পরবর্তীতে ৯০’র দশকের শুরুতে এনায়েতনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি হন, মাঝে কিছু সময় বৃহত্তর মাসদাইর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে পুনরায় এনায়েতনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পান এই রাজনীতিবীদ। বর্তমানে তিনি এ পদেই বহাল আছেন। 

 

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে ভালো নেই বর্ষীয়ান এই আওয়ামীলীগ নেতা। গত ২৬ মে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে প্রথমে ভিক্টোরিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়। বর্তমানে ঢাকার নিউরোলজি হাসপতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. আবু নাঈম সাগরের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন তিনি। চিকিৎসকেরা বলছেন, এনায়েত হোসেনের উন্নত চিকিৎসা দরকার। ভালো চিকিৎসা পেলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন। 

 

 

এক ছেলে ও ২ মেয়ের জনক এনায়েত হোসেন। ছেলে কাজ করেন একটি গার্মেন্টেস। ফলে পরিবারের খরচ জোগাতেই হিমশিম খেতে হয় তাকে, বাবার চিকিৎসার খরচ বহন করা তো অনেক দুরের কথা। তাই অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে উত্তর মাসদাইরের ভাড়া বাড়িতে ধুকে ধুকে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন এনায়েতনগর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের এই সহ-সভাপতি। 

 

 

বাকশক্তি হারাতে বসা এনায়েত হোসেন ক্রন্দনরত অবস্থায় ভাঙ্গা ভাঙ্গা কণ্ঠে বলেন, কখনো ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা চিন্তা করি নি, সারাজীবন দলের জন্য নি:স্বার্থভাবে কাজ করেছি। গত ২৬ মে ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বিছানায় পড়ে আছি। অসুস্থতার খবর পেয়ে ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান চেয়ারম্যান, ছাত্রলীগ সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদসহ বৃহত্তর মাসদাইর আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাকে দেখতে আসেন।

 

 

এসময় অনেকে আমাকে আর্থিকভাবে সহযোগীতার আশ্বাস দিয়েছেন। ২/৪ জনের পকেট থেকে যতটুকু সম্ভব সাহায্যও করেছেন। কিন্তু এই অর্থ দিয়ে আমার চিকিৎসা ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব না। একমাত্র ছেলে কাজ করে গার্মেন্টেসে, যা বেতন পায় তা দিয়ে সংসারই ঠিকমতো চলে না। ‘আমার ও আমার পরিবারের পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন যদি বিত্তবান কেউ আমার দিকে তাকান, তাহলে আমি বেঁচে যাব।’ 

 

 

তাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য দানবীর সেলিম ওসমান, কিছুদিন আগেও যার মিছিল-মিটিং করে রাজপথে ছিলেন সেই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, তার স্ত্রী লিপি ওসমান ও অয়ন ওসমানের সহযোগীতা কামনা করেন এই নেতা।

 

 

তিনি বলেন, মাননীয় এমপি শামীম ওসমান, তার স্ত্রী লিপি ওসমান ও তাদের সুযোগ্য পুত্র অয়ন ওসমান কতো মানুষকে সহযোগীতা করেন। আমি তাদের সহযোগীতা চাই, আমি বাঁচতে চাই। সমাজের বিত্তবান মানুষ ও দলের সকল নেতাকর্মীদের সহযোগীতা চাই। 

 

 

তার স্ত্রী বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত আমার স্বামী। নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, স্ত্রী লিপি ওসমান ও সন্তান অয়ন ওসমান বিভিন্ন সময় অসহায় মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন। মানবতার কারণে আমাদের পরিবারের পাশে, আমার স্বামীর পাশে দাঁড়াবেন বলে বিশ্বাস করি। তাই আমরা তাদের সহযোগীতা চাই।  এন. হুসেইন রনী  /জেসি

এই বিভাগের আরো খবর