শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ট্রেন বন্ধ থাকায় নিম্নআয়ের মানুষের ভোগান্তি

আবু সুফিয়ান

প্রকাশিত: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

 

# রেলপথ উন্নয়নের সুবিধা নিচ্ছে বাস মালিকরা
# সাড়ে তিন মাসের পরিবর্তে সময় কমানোর দাবি

 

 

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজ এবং সেই সাথে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন কাজের জন্য গত ৪ ডিসেম্বর ২০২২ থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার দুই মাস পেরিয়ে গেছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বিপাকে পড়েছেন এই রুটে চলাচলকারী হাজার হাজার যাত্রী।

 

এদিকে ট্রেন বন্ধ থাকায় তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে ট্রেন যাত্রীদের বাধ্য হয়ে বাসে করে গন্তব্য স্থানে যেতে হচ্ছে। যেখানে সব থেকে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা গামী বেশিরভাগ ট্রেন যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। এমনই এক যাত্রী বিসিক শিল্পাঞ্চলের মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি যুগের চিন্তাকে জানান, ট্রেনে করে আমরা ২০ টাকা দিয়ে ঢাকায় যেতাম কিন্তু এখন ঢাকা যেতে কমপক্ষে ৬০ টাকা আমাদেরকে গুনতে হচ্ছে। আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। সরকারের এ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে রেল লাইনের সংস্কার কাজ দ্রুত সময়ে করা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

 

নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের কর্মকর্তা সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে আগে ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করতো। নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন থেকেই প্রতিদিন ১০ হাজার টিকিট বিক্রি হয়। এছাড়া ঢাকার কমলাপুর পর্যন্ত আরও পাঁচটি স্টেশন আছে। সবমিলিয়ে দৈনিক বিশ হাজারেও বেশি মানুষ ট্রেনে যাতায়াত করেন। ট্রেনে যাতায়াতকারীদের মধ্যে অধিকাংশই চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থী। করোনা পরিস্থিতি লকডাউনের সময় ছাড়া দীর্ঘ বছরেও এই রুটে এতদিন ট্রেন চলাচল কখনও বন্ধ থাকেনি।

 

ঢাকার একটি কলেজের শিক্ষার্থী মো. মিফতাবুল-এর বাড়ি ফতুল্লায়। তিনি যুগের ছেলেকে জানান, ট্রেন যখন চলত তখন আমি নিয়মিত ট্রেনে করে যাতায়াত করতাম। কিন্তু এখন ট্রেন বন্ধ থাকায় বাড়তি টাকা দিয়ে বাসে করে যেতে হচ্ছে। শিক্ষার্থী আরো বলেন, বর্তমান আমাদের দেশে চলছে অর্থনৈতিক সংকট। মানুষদের কাছে টাকা পয়সা একদমই নাই। মানুষের আয় রোজগার কমে যাচ্ছে। ঠিক এই সময়ে ঢাকা নারায়ণগঞ্জ রুটে ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষ বা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য চরম সংকটের। যার আজ দুই মাস ১৫ দিন চলছে। জানিনা আর কতদিন লাগবে।

 

এদিকে রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া অংশে তিনটি পৃথক রেললাইনের নির্মাণকাজ ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজের জন্য রোববার থেকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটের ট্রেন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। কবে নাগাদ কাজ শেষ হবে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট করে কিছু না জানালও অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকবে বলে জানাচ্ছেন রেলওয়ে কর্মকর্তারা।

 

নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনে মো.ইদ্রিস মিয়া নামের এক ব্যক্তির সাথে কথা হয় দৈনিক যুগের চিন্তার। যিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আছেন। তিনি জানান, আমাদের দেশের সবকিছুর দাম হু হু করে বাড়ছে। সেই দাম বাড়ার যুদ্ধে জ্বালানি মূল্য কিন্তু সবার আগে। তারি ধারাবাহিকতায় বাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু ট্রেন বন্ধ থাকায় বাস মালিকরা এই সুযোগ নিচ্ছে যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করার। তিনি আরো জানান, যেখানে একজন লোক মাত্র ২০ টাকা দিয়ে ঢাকা যেতে পারতেন। সেখানে তাকে তিনগুণ বেশি ভাড়া দিয়ে কমপক্ষে ৬০ টাকা দিয়ে এখন তাকে ঢাকা যেতে হচ্ছে। নিম্ন আয়ের মানুষ যারা নিয়মিত এই রূটে যাতায়াত করেন তাদের জন্য বিষয়টি সত্যিই হতাশাজনক। বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষের খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।

 

নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশনের স্টেশন মাস্টার কামরুল ইসলাম সূত্রে জানা গেছে, রেলের চলমান সংস্কার কাজ কবে নাগাদ শেষ হবে এই প্রসঙ্গে রেল বিভাগের ঢাকা অফিস থেকে নির্দিষ্ট কোনো সময় বলা হয় নাই। তবে রেলওয়ের ঢাকা অফিস সূত্রে তিনি জানান, প্রকল্পকাজ শেষ হতে অন্তত তিন থেকে সাড়ে তিন মাস তো লাগবে।

 

একই রেলস্টেশনের আরেক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনে স্বল্প আয়ের মানুষ চলাচল করে বেশি। ট্রেন বন্ধ থাকায় তাদের সাময়িক বিপাকে পড়তে হবে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ দ্রুততার সাথে কাজ শেষ করতে পারবে বলে আশা করেন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত রেল কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা।

এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর