শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

ডাম্পিংয়ের নামে চাঁদাবাজির মহোৎসব

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২০ নভেম্বর ২০২২  


# টিআই করিম এর নেতৃত্বে চার রেকারে ২০ জন টাকা ছাড়াই কর্মজীবন

# আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না : এডি. এসপি (ট্রাফিক)

 

নারায়ণগঞ্জ প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়া মোড়ের নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজ ও ডাক বাংলোর মধ্যবর্তী অংশে জেলা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডাম্পিং ক্ষেত্রটি অবস্থিত। এই ডাম্পিং অবস্থানকে আবর্তন করেই ও নগরীর বাইরের অসংখ্য অটোরিক্সা, ইজিবাইক, মিশুক এবং ব্যাটারীচালিত রিক্সা চালকদের আহাজারি।

 

 

আর তাদের উপর নির্যাতনে প্রতিদিনই ভোর থেকে রাত অবধি ভারী থাকে এখানকার পরিবেশ। দরিদ্র জনগোষ্ঠির সংসারের টানাপোড়ানে; তাদের হাড়খাটুনি পরিশ্রমের পুরো টাকাটাই দিয়ে যেতে হয় জরিমানা আর সারাটা দিন যায় বেকার, দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ গুলোর। নির্মমতা ও পাষন্ড আচরণ কী বা কেমন হতে পারে; সরেজমিন এসে এই খেটে খাওয়া রিক্সা চালকদের সাথে কথা বললে; সহজেই উপলব্ধ হয়। 

 

 

মাঝখান থেকে পকেট ভর্তি হয় কিছু চাটুকার আর দালালদের। আর যে সব চালকরা টাকা দিতে পারে না; তাদের যেতে হয় ডাম্পিংয়ের ভেতর  টিনের একচালার ঘরের ভেতর, তাদের উপরে চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। যেমন কনস্টেবল মো. শহিদুল ও এসআই মো. শফিক এর বেশ কিছু অটো চালকদের মারামারির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যা নগরবাসীর অজানা নয়।

 

 

চালকদের এমন ভাবে নির্যাতন করা হয় যাতে বাইরে এসে তারা কোন প্রকার মুখ খুলতে নারাজ, তাদের চোখে মুখে কেবলই আতঙ্ক আর উৎকন্ঠা। আর চলে অটোরিক্সা, ইজিবাইক, মিশুক এবং ব্যাটারী চালিত রিক্সা আটক করে জরিমানা আদায়ের মহোৎসব।

 

 

যার সিংহভাগই দালাল আর চাটুকারদেও পকেটে। অবৈধ ও সরকারী নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষাকারী গাড়ী জব্ধ করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চারটি রেকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। টিআই করিম এর নেতৃত্বে রেকার এর দায়িত্বে রয়েছেন,এস আই মো. হাসান, এস আই মো. শফিক, এস আই বাশার, কনস্টেবল মো. শহিদুল, প্রতিটি রেকারে ৫ জন করে চারটি রেকারে মোট ২০ জন ভলেন্টিয়ার কাজ করছে।

 

 

যারা সরকারী ভাবে স্থায়ী বা অস্থায়ী অথবা খন্ডকালীন কাজের জন্য নিয়োগ প্রাপ্ত নয়। তার পরেও তারা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা এবং মহিলা কলেজ এর সামনে বৈশাখী রেস্টুরেন্ট চারটি রেকার এর ২০ জনের লোকের সারাদিনে ৩ বেলা খাওয়ার বিল হয় ৮/৯ হাজার টাকা।

 

 

এই ২০ জন্য ভলেন্টিয়ারদের আয় বা মজুরীর টাকা কোথা থেকে আসে? অথচ চারটি রেকারের মাধ্যমে কমপক্ষে দিনে দুই থেকে আড়াইশত এর অধিক অটোরিক্সা, ইজিবাইক, মিশুক এবং বেটারী চালিত রিক্সা আটক করা হয়।

 

 

আর রেকারের লোকেরা বলে, শতকরা ৭০/৮০ টি অটোরিক্সা, ইজিবাইক, মিশুক এবং বেটারী চালিত রিক্সা সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের নাম ভাঙিয়ে রেকারের ২০ জন সহ দালাল প্রতিদিন হাতিয়ে নিচ্ছে বিশাল অংকের টাকা।

 

 

সরকার যেখানে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই ডিজিটালাইজেশন করা হয়েছে। যেখানে সারাদেশে ডিজিটালভাবে বিল, জরিমানাসহ সকল রাজস্ব আদায় করা মেশিনের মাধ্যমে আর একমাত্র নারায়ণগঞ্জের এই ডাম্পিংটিতেই নিজেদের ইচ্ছে মতো জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ শাখার রেকার বিল পরিশোধ রশিদের মাধ্যমে হাতে লেখা, আর তাতে বসানো হচ্ছে ইচ্ছে মতো টাকার অঙ্ক।

 

 

জেলা পুলিশ সুপার এবং ট্রাফিক সুপারের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব করে বেড়াচ্ছে দালাল চক্র। নারায়ণগঞ্জে নব নিযুক্ত পুলিশ সুপারের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যহত করতে সুপরিকল্পিতভাবে এসব কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে এ চক্রটি।

 

 

ডাম্পিং এ  মোটরসাইকেল আটক করা হলে ডাম্পিং এ জরিমানা আদায় না করে পাঠানো হয় মেট্রো সিনেমা হল ট্রাফিক অফিসে এবং কোন প্রকার জরিমানা রশিদ না দিয়েই টাকা হাতিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়।

 

 

এই  যে, সরকারী নির্দেশ কে বৃদ্ধাঙ্গুগুলি দেখিয়ে এবং ট্রফিক অফিসারদের তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র ডাম্পিং এর ভিতরে অটোরিক্সা, ইজিবাইক, মিশুক এবং ব্যাটারী চালিত রিক্সা আটক করে চালকদের সাথে দুর্ব্যবহার, গায়ে হাত তোলা থেকে শুরু করে সকল প্রকার নির্যাতন করে এবং জোড়পূর্বক অন্যায়ভাবে টাকা রেখে দেয়া হয়; এর কী কোনো প্রতিকার নেই?, প্রশ্ন রাখেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

 

 

সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন মিনিমাম অটো মিশুক ব্যাটারিচালিত রিক্সা ২০০ জব্দ করা হয়। ট্রাফিক পুলিশের বক্তব্য জানা যায়, প্রায় ৪০/৫০ টি। সূত্রমতে জানা যায়, প্রতিদিন ৪০/৫০ টি ব্যাটারি চালিত অটো মিশুক এর রেকার বিল অফিসে জমা হয়। তাহলে বাকি জমাকৃত টাকা কোথায় যায় প্রতিদিন?

 

 

এই ধরনের কর্মকান্ড যদি এই মূর্হুতেই বন্ধ করে; দোষীদের বিরুদ্ধে দূরত্ব আইনগত ব্যবস্থা নেয়া না হয় তাহলে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন এর ভাবমূর্তি জন্য চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে; মনে করছে সচেতন মহল।

 

 

এবিষয়ে ,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ট্রাফিক মো. সোহান সরকার বলেন, “আমি ২০ জনের বিষয়ে কিছু জানি না আমার জানা নাই। আর তাদের আমরা কোন টাকা দেই না। আমার জেনে জানাতে হবে। তারা কতগুলা গাড়ি আটক করেন; সেটা মাসিক হিসাব হয় এমনি বলতে পারবোনা কিছু।”

 

 

এ বিষয়ে, ট্রাফিক পুলিশের টি আই করিম এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “২০ জনের আয়ের বলতে কিছু নাই। তারা হলো অন্য গাড়ির চালক, তাদের বলা হয় আপনার গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হবে, যদি আপনি আরো ৫টি করে গাড়ি আটক করে দেন।

 

 

তবে রেকার এর লোকদের বৈশাখী রেন্টুরেন্ট এত টাকা খাওয়ার বিল হয়; আমি সেটা জানি না, সেটা আমি খবর নিয়ে দেখবো। আর আপনাদের সাংবাদিকদের কয়টা ফোন আসে? বেশির ভাগ ফোন আসে বিভিন্ন মহলের !! তাদের ছাড়তে হয়, ভাই সারাদিন আমার ফোন বাজতে থাকে।” এন.এইচ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর