শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ডিএনডি প্রজেক্ট নিয়ে ফতুল্লায় আক্ষেপ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২১  

জলাবদ্ধতার দূর্বিসহ ভোগান্তির পর সরকারের নেক নজর পড়ে ডিএনডি এলাকায়। স্থায়ী সমাধানের জন্য মেগা প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সাংসদ শামীম ওসমানের প্রচেষ্টায় ডিএনডি প্রজেক্টের এই মেগা প্রকল্প এসেছে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। যা বাস্তবায়নে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাইতো, ডিএনডি প্রজেক্টের খবরে উচ্ছাসের কমতি ছিলো না ফতুল্লার নিম্নাঞ্চল তথা বৃহত্তর লালপুর ও ইসদাইর এলাকার লাখো মানুষদের।

 

তবে, সেই উচ্ছাস এখন আক্ষেপে পরিণত হয়েছে। কেননা, ডিএনডি অধ্যুষিত এলাকা হলেও হাজার কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের আওতায় পড়েনি লালপুর ও ইসদাইরসহ আশপাশের বৃহৎ এলাকা। ফলে, ডিএনডি প্রজেক্টের উন্নয়ন থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দারা। তা নিয়ে যেমন রয়েছে আক্ষেপ, তেমনই রয়েছে হতাশাও। 

 

কারণ, বৃষ্টি ছাড়াই এসব এলাকার অভ্যান্তরিন সড়কগুলো থাকে পানির নিচে। আর বৃষ্টি মৌসুমে বাসা বাড়িতেও প্রবেশ করে পানি। এই অবস্থায় লালপুর ও ইসদাইর বাসির জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধান নিয়ে চিন্তিত স্থানীয়রা।এই বিষয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করে লালপুর এলাকার বাসিন্দা মো. মাইনুদ্দিন বলেন, ‘ফতুল্লার মধ্যে অন্যতম নিম্নাঞ্চল হলো লালপুর, ইসদাইর ও টাগারপাড় এলাকা। খাল দখলসহ নানা কারণে এখানে জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। সাংসদ শামীম ওসমানের বদান্যতায় ডিএনডি প্রজেক্ট আসার পর ভাবা হয়েছিলো, প্রজেক্ট সম্পন্ন হলে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলবে। কিন্তু প্রজেক্টের উন্নয়ন কাজের নকশায় লালপুরসহ আশপাশের নিম্নাঞ্চল ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় না পড়ায় শতকোটি টাকার এই মেগা প্রকল্পের সুফল ভোগ থেকে আমরা বঞ্চিত। অথচ, আমাদের পার্শ্ববর্তী সিদ্ধিরগঞ্জে এই প্রকল্পের আওতায় পুরোদস্তর কাজ চলছে। 

 

তাছাড়া, পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন কুতুবপুরেও ডিএনডির কাজ চলমান। সেখানকার খালগুলো উদ্ধার করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের এখানকার খালগুলো দখলই হয়ে আছে। এর ফলে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনডি প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা বিফলে যাচ্ছে।’ ইসদাইর এলাকার বাসিন্দা ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইসদাইর পঞ্চায়েত কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান মাসুম দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘ডিএনডি অধ্যুষিত এলাকা হলেও ইসদাইর ডিএনডি প্রজেক্টের আওতাভুক্ত না হওয়ায় তা সত্যিই আমাদের জন্য দূর্ভাগ্য। জানতে পেরেছি, ইসদাইর রেললাইন এলাকা দিয়ে বগডুবি নামক যেই খাল প্রবাহিত হয়েছে তা সরকারি ম্যাপে নেই, তাই এই এলাকা ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় আসেনি। অথচ, খালটি একটি প্রসিদ্ধ খাল। এই খালটি কেন সরকারের ম্যাপে নেই, সেটাই এখন প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

 

লালপুর এলাকায় বসবাসকারি বক্তাবলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম শওকত আলী বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য দূর্ভাগ্য। লালপুর ও ইসদাইর সহ আশপাশের এলাকা ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় না আসলে আমাদের জলাবদ্ধতার সমস্যা থেকেই যাবে। তবে, চেষ্টা চলছে এই এলাকাগুলো ডিএনডি প্রকল্পের আওতায় আনার। আমাদের এমপি শামীম ওসমান এই বিষয়ে অবগত। যদি এই এলাকাগুলো ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় আনা সম্ভব না হয়, তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা যেন করা হয়, সেই আবেদন করা হয়েছে।’  

 

ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন দৈনিক যুগের চিন্তাকে বলেন, ‘সত্যিকার অর্থে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। ডিএনডির নিম্নাঞ্চল বা জলাবদ্ধতা প্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যে লালপুর ও ইসদাইর অন্যতম। এখানে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা লেগেই থাকে। এসব এলাকার অভ্যন্তরিন খালগুলো এখন বেদখল হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় যদি পড়তো, তাহলে অবশ্যই খালগুলো উদ্ধার হতো এবং পানি প্রবাহ স্বাভাবিক হয়ে জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলতো। কিন্তু তা হচ্ছে না। এটা আমাদের জন্য দূর্ভাগ্য। আমাদের এলাকায় যদি কাজ না হয়, তাহলে অন্যান্য এলাকায় লক্ষ কোটি টাকার কাজ হলেও তার সুফল আমরা পাবো না। আমরা সন্তুষ্ট নই। বিষয়টি সাংসদ শামীম ওসমান ভাই অবগত আছেন। তিনি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে পরবর্তীতে এই এলাকাগুলো ডিএনডি প্রজেক্টের আওতায় আনা যায়।’

 

ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর সোহেল আলী বলেন, ‘সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, প্রজেক্টের অর্ন্তভুক্ত খালগুলো দখলমুক্ত করা হয়েছে। এই অবস্থায় লালপুর এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা ভালো হলে ড্রেন হয়ে খালের মাধ্যমে নদীতে পানি চলে যাবে। তখন জলাবদ্ধতা থাকবে না।’

 

প্রসঙ্গত, ডিএনডি প্রজেক্টের কাজ বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সিদ্ধিরগঞ্জ ও কুতুবপুরের বিভিন্ন অঞ্চলে দখল হয়ে যাওয়া খাল উদ্ধার করলেও এখনো জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি মিলছে না। বিে শষ করে লালপুর ও ইসদাইর এলাকার চিত্র ভয়াবহ। গতকালের বৃষ্টিতেও তলিয়েছে বৃহত্তর ওই দুই এলাকা।  
 
 

এই বিভাগের আরো খবর