শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেল প্রকল্প ভুল পরিকল্পনায় প্রায় শতভাগ ব্যয় বাড়ছে

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৫ এপ্রিল ২০২২  

যাত্রী সেবার মান উন্নয়নের লক্ষে ২০১৫ সালে নেয়া হয় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প। ১২ কি:মি এই ডাবল লাইন রেলপথটি সাত বছরে নির্মাণ কাজে নেই তেমন কোনো অগ্রগতি। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে ধরা পড়ে নানা ধরনের অসংগতি। এসব ত্রুটি সংশোধনে প্রকল্প পরিকল্পনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হয়। এছাড়া অনুমোদন ছাড়াই প্রকল্পটির আওতায় একটি নতুন স্টেশনও নির্মাণ করা হয়েছে।

 

প্রাথমিকভাবে নতুন রেলপথটি শুধু ডুয়েলগেজ নির্মাণের কথা থাকলেও পরে বিদ্যমান লাইনটিকেও ডুয়েলগেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি নতুন নতুন বেশকিছু অঙ্গ যুক্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণব্যয় প্রায় ৬৭ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এর পরও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনের চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত অংশটি ডাবল লাইন হচ্ছে না। জমি অধিগ্রহণ নিয়ে জটিলতায় প্রায় দুই কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইনই থেকে যাচ্ছে।

 

সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। তা যাচাই-বাছাইয়ে সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 

এতে জানানো হয়, ২০১৫ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ’ প্রকল্পটি অনুমোদন করে একনেক। সে সময় প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

 

এর মধ্যে জাপানের অনুদান রয়েছে ২৪৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। বাকি ১২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সররবাহ করা হবে।প্রকল্পটির আওতায় ১২ দশমিক শূন্য এক কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মূল লাইন ছাড়াও পাঁচ দশমিক ১০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করার কথা।

 

বৈঠকের তথ্যমতে, গত বছর ১৮ জুলাই প্রকল্পটি যাচাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয়, প্রকল্পটির আওতায় জুরাইন রেলগেট থেকে চাষাঢ়া স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। আর চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ সিঙ্গেল লাইনটিকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। ডাবল লাইন হবে না ওই অংশটি।

 

এদিকে সংশোধিত হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেলপথটি নির্মাণ ব্যয় বাড়ছে ২৫৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা বা ৬৭ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। তবে প্রকল্পটিতে বাড়তি কোনো অর্থ দিতে রাজি নয় জাপান সরকার। ফলে ব্যয় বৃদ্ধির পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে বহন করতে হবে।

 

ব্যয় বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে বৈঠকে জানানো হয়, অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) চারটি স্টেশন বিল্ডিং (পাগলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া ও নারায়ণগঞ্জ) অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে যাত্রী চাহিদা বিবেচনায় ডিপিপির বাইরে শ্যামপুরে একটি নতুন স্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। আবার অনুমোদিত ডিপিপিতে স্টেশন বিল্ডিংয়ের যে আয়তন রাখা হয়েছিল, তাতে স্টেশন মাস্টারের কক্ষ,

 

প্ল্যাটফর্ম, টিকিট কাউন্টার, টিকিট রাখার স্টোর, ওয়েটিং রুম, পুরুষ ও মহিলা যাত্রীদের আলাদা টয়লেট, সিগন্যাল ইকুইপমেন্ট রুম, জেনারেটর রুম এবং রক্ষণাবেক্ষণ রুম স্থাপনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। এজন্য স্টেশন বিল্ডিংগুলোর আয়তন এক হাজার ২৮০ বর্গমিটারের পরিবর্তে দুই হাজার ৬১১ বর্গমিটার করা হয়েছে।

 

এদিকে ডিপিপিতে ছয় হাজার বর্গমিটার প্ল্যাটফর্ম ও দুই হাজার ৫০০ বর্গমিটার প্ল্যাটফর্ম শেড নির্মাণের সংস্থান ছিল। তবে ডিজাইন অনুযায়ী তা পর্যাপ্ত নয়। এছাড়া শ্যামপুর স্টেশনে দুটি প্ল্যাটফর্ম ও দুটি প্ল্যাটফর্ম শেড এবং পাগলায় একটি প্ল্যাটফর্ম ও দুটি প্ল্যাটফর্ম শেড নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলোর সামগ্রিক ক্ষেত্রফল দাঁড়িয়েছে প্ল্যাটফর্ম ১৭ হাজার ২০০ বর্গমিটার ও প্ল্যাটফর্ম শেড সাত হাজার ৫৯০ বর্গমিটার।

 

এর বাইরে জনসাধারণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নিকটবর্তী স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের চলাচলের সুবিধার্থে (বিদ্যমান পাঁচটি) অতিরিক্ত তিনটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) জন্য একটি দোতলা ভবন কাম ব্যারাক নির্মাণ, সরকারি রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) জন্য একটি দোতলা ভবন কাম ব্যারাক নির্মাণ এবং গেন্ডারিয়া থেকে চাষাঢ়ার মাঝে পাঁচটি গ্যাং হাট নির্মাণ নতুন যুক্ত হয়েছে।

 

অন্যদিকে প্রকল্পটির পরামর্শকের মেয়াদ গত বছর জুনে শেষ হয়েছে। তবে তা ১৮ মাস অর্থাৎ চলতি বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে হয়েছে। এজন্য অতিরিক্ত ব্যয় হবে। যদিও পরামর্শক খাতের বেতন-ভাতা চুক্তির ৫০ শতাংশের বেশি বাড়ানো সম্ভব নয়।

 

তাই আরেকটি পৃথক প্যাকেজ সৃষ্টি করা হবে। এছাড়া বিদ্যমান মিটারগেজ সিঙ্গেল লাইনটিকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের জন্য এবং রূপান্তরের কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সিগন্যালিং কাজের বিশদ ডিজাইন, দরপত্র প্রক্রিয়া, নির্মাণকাজের তদারকিসহ নতুন পরামর্শক প্যাকেজ প্রস্তাব করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে প্রায় শতভাগ।

 

জানতে চাইলে বৈঠকে সভাপতিত্বকারী রেলপথ সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রকল্পটির ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা যাচাইয়ে রেলওয়ে একটি কমিটি গঠন করবে। ওই কমিটি সব অঙ্গের ইউনিট রেট হ্রাস/বৃদ্ধির যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ করে একটি প্রতিবেদন জমা দেবে। ওই প্রতিবেদন সংযোজনসহ আরডিপিপি পুনর্গঠন করে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে বলা হয়েছে। পরে তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
 

এই বিভাগের আরো খবর