বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১২ ১৪৩১

তারাবি নামাজের ইতিবৃত্ত

প্রকাশিত: ১০ মে ২০১৯  

ডেস্ক রিপোর্ট (যুগের চিন্তা ২৪) : পবিত্র রমজান মাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি অনুষঙ্গ তারাবির নামাজ। বাদ এশা থেকে পালনীয় এই নামাজ শরিয়া দৃষ্টিতে, সুন্নাতে মুয়াক্কাদা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০ রাকাতবিশিষ্ট তারাবির নামাজে রয়েছে অগণিত সওয়াব ও ফজিলত। হাদিস শরিফ মতে, একনিষ্ঠ মনে আদায় করলে আছে পাপ মার্জনার সুবর্ণ সুযোগ।

 

এ সুযোগ যেন হাতছাড়া না হয়, তাই প্রিয় নবী (সা.) তারাবির নামাজ আদায়ে অধিক তাগাদা দিতেন। নবী কারিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান সহকারে ও সওয়াবের আশায় তারাবির নামাজ আদায় করবে, তার পূর্বেকার সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’ (বুখারি ও মুসলিম)। মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায়, পূর্বাপর যাবতীয় পাপ মার্জনার কথা বলা হয়েছে।

 

তারাবির নামাজের ইতিহাস খুটে দেখলে আমরা দেখতে পাই, এ নামাজের প্রচলন নবীজির যুগ থেকেই। প্রথমদিকে প্রিয় নবী (সা.) সাহাবাদের সাথেই তারাবির নামাজ আদায় করতেন। লাগাতার আদায়ের ফলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরজ হয়ে যাবার আশংকা ছিল। আর যদি ফরজ হয়েই যেত, তবে উম্মতের জন্য তা পালন করা হত অত্যন্ত কষ্টকর। তাই কয়েক দিন সাহাবাদের সাথে আদায়ের পর নবীজি একদিন মসজিদে আসলেন না; একাকী আদায় করলেন।


এরপর থেকে জীবনের অন্তিমলগ্ন পর্যন্ত তারাবির নামাজ জামাত সহকারে আর আদায় করেননি। পরবর্তীতে হযরত ওমর (রা.) এর যুগে এসে পুনরায় জামাত সহকারে তারাবি আদায়ের রীতির প্রচলন হয়। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হযরত ওমর (রা.) লোকজনকে ওবাই ইবনে কাব (রা.) এর পেছনে একত্রিত করে, তাদের নিয়ে নামাজ আদায় করলেন। আর এটাই ছিল তারাবির নামাজের প্রথম জামাত’ (সহিহ ইবনে খুজাইমা)। নবীজি কর্তৃক জামাতে তারাবি আদায় বন্ধ হয়ে যাবার পর ইতিহাসে এটি নতুন আবিষ্কার ছিল। নতুন আবিষ্কারকে বিদআত বলে। শরিয়তের কোনোআইনের সাথে সাংঘর্ষিক হলে নতুন আবিষ্কারকে ইসলাম অস্বীকার করে। আর সাংঘর্ষিক না হলে তা তো ভালোই।


হযরত ওমর (রা.) এর কাজটিও অনুরূপ। বিদআত হলেও সাংঘর্ষিক না হওয়ার দরুন একে মন্দ বলা যায় না। তাই হযরত ওমর নিজেও বলেছেন, কতই না উত্তম বিদআত এটি’ (বুখারি)। ‘সকল বিদআত যে মন্দ হয় না; কিছু ভালও হয়ে থাকে’- হযরত ওমরের (রা.) ঐতিহাসিক উক্তি থেকে আমরা বিভ্রান্তিকর সময়ের আলোচিত পরিভাষা ‘বিদআত’ সম্পর্কে সেই নীতিই দেখতে পাই। হযরত ওমর (রা.) এর যুগ থেকে আজ পর্যন্ত এ নামাজ জামাতেই আদায় হয়ে আসছে। 

 

তারাবির নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়েও ইদানীং বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। তারাবির রাকাত কত, তা নিয়ে হাদিসের কিতাবে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও প্রচলিত মত হচ্ছে, তারাবির নামাজ বিশ রাকাত। ইমাম


তিরমিজি (রহ.) বলেন: ‘হযরত ওমর , আলী ও অন্যান্য সাহাবায়ে কিরাম (রা.) হতে বর্ণিত বিশ রাকাতের পক্ষে অধিকাংশ আলেম অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আর এটা ইমাম সাওরি, ইবনে মুবারক ও শাফিইরও অভিমত’ (তিরমিজি)। এ থেকে স্পষ্ট হয়, তারাবির নামাজ যে বিশ রাকাত, তা অধিকাংশ আলেমের অভিমত।

 

অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, ‘হযরত ওমর (রা.) এর যুগে লোকেরা (বিতরসহ) ২৩ রাকাত সহকারে তারাবির নামাজ আদায় করত’ (মুয়াত্তা, সুনানে বায়হাকী)। এই বর্ণনার ব্যাপারে ইমাম ফারইয়াবি ‘নির্ভরযোগ্য’ বলে মন্তব্য করেছেন। আর ইবনে কুদামা (রহ.) তার ‘মুগনী’ কিতাবে বলেন: ‘তারাবির নামাজ বিশ রাকাতের ব্যাপারটি ইজমার মতই সাব্যস্ত।


এখনো অধিকাংশ মুসলমান বিশ রাকাত আদায় করেন। কিন্তু সম্প্রতি আট রাকাতের কথা বলে তারাবির নামাজ নিয়ে একটি মহল ধুম্রজাল তৈরির অপচেষ্টা করছে, যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। কারণ যে হাদিসে আট রাকাত আদায়ের কথা আছে, তা কেবল তাহাজ্জুদের নামাজ বৈ অন্য কিছুর রাকাত বোঝায় না; আর তারাবি তো মোটেই নয়। সে হিসেবে বিশ রাকাতের মতই সর্বাধিক বিশুদ্ধ। তাই এই নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই। যদি কেউ সে পথে হাটে, তবে তা হবে প্রমাণিত বিষয়কে অস্বীকারের ব্যর্থ চেষ্টা মাত্র!

 

যেহেতু তারাবির নামাজ ও এর ফজিলত নবী কারিম (সা.) নিজেই ঘোষণা করেছেন, তাই এ নিয়ে নিরর্থক বাড়াবাড়ি কোনভাবেই কাম্য নয়। প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন: নিশ্চই আল্লহ পাক তোমাদের জন্য রমজানের রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি সুন্নাত করেছি তারাবিকে। অতএব যে ব্যক্তি ইমান সহকারে ও সৎ নিয়তে রোজা ও তারাবি আদায় করবে, সে তার গুনাহ থেকে ঐ দিনের ন্যায় নিষ্পাপ থাকবে, যে দিন তার মা তাকে জন্ম দিয়েছেন’ (নাসাই, ইবনে মাজাহ)।

 

তারাবির নামাজের মাধ্যমে পবিত্র কোরআনের সাথে সম্পর্ক গাঢ় করার লগ্ন আসে। প্রত্যেক রাকাতে ইমামের কণ্ঠে কোরআন পাঠ শুনে আলোকিত হয় মুমিনের হৃদয়। আর নামাজের মধ্যে স্রষ্টা ও সৃষ্টির যে বন্ধন, তা তো আছেই।