বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

তারেকের প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বিদেশ গিয়েছিলো কাশেমী

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২১  

সরকার পতনের আন্দোলন আরো জোরদার করতে তারেক রহমানের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ব্যাংকক গিয়েছিলেন কাশেমী।গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বিএনপি ও হেফাজতের একজন শীর্ষ নেতার নির্দেশে হেফাজতের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক এবং একাদ্বশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মনির হোসেন কাশেমী ব্যাংকক যান। সেখানে একজন ব্যক্তির সঙ্গে তার বৈঠক হয়। ওই বৈঠকে সরকার পতনের আন্দোলনের বিষয়ে নিয়েও আলোচনা হয়। এজন্য কাশেমী ব্যাংকক থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থও নিয়ে আসেন বলে জানাজায়। 


গ্রেফতারের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছেন তিনি। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কাশেমী এখন কারাগারে রয়েছেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার জানান, ‘মনির হোসেন কাশেমীর কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। পরবর্তীতে তাকে আবারও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হতে পারে।’

 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরো জানান, হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে বিরোধীদলীয় নেতাদের রাজনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করতেন মনির হোসেন কাশেমী। হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যে কয়জন রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা নিয়েছিলেন মনির হোসেন কাশেমী তাদের মধ্যে অন্যতম। ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় পড়াশোনা শেষে সৌদি আরবে চলে যান তিনি। সেখানে সৌদি আরবের রাজ পরিবারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। সেই পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা তিনি বাংলাদেশে পাঠাতেন।

 

এছাড়াও আরো জানা যায়, ২০১২ সালে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে প্রথমে গাজীপুরের একটি মাদ্রাসায় চাকরি করতেন তিনি। সেখান থেকে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে তিনি বারিধারার জামিয়া মাদানীয়া আরাবিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষক হিসেবেও যোগদান করেন এবং এই মাদ্রাসার শায়খুল হাদীস নূর হুসাইন কাশেমীর সংস্পর্শে থাকায় হেফাজতে ইসলামে মনির প্রভাব বিস্তার করেন। এই কাজ আরও বেশি সহজ করার জন্য হেফাজতের আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীর খাদেম হিসেবে ইনামুল হাসান ফারুকীকে তিনি নিযুক্ত করেন। তারা দুজনে মিলে হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিয়েছিলেন।

 

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মনির হোসেন কাশেমী তার রাজনৈতিক অভিলিপ্সার কথা স্বীকার করেছেন। গত বছরের ডিসেম্বরে মারা যাওয়া হেফাজত নেতা নূর হুসাইন কাশেমী ও বিএনপির এক নেতার পক্ষ থেকে তিনি (মনির হোসেন) তারেক রহমানের একজন প্রতিনিধির সঙ্গে সাক্ষাত করতে ব্যাংকক যাওয়ার কথাও স্বীকার করেছেন। মনির হোসেন কাশেমী জানিয়েছেন, অজ্ঞাত ওই ব্যক্তির সঙ্গে তার সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে আলোচনা হয়। এজন্য তারেক রহমানের ওই প্রতিনিধি তাকে বিপুল অর্থ দেওয়ার প্রস্তাব দেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই গত বছরের মার্চেই বিএনপি হঠাৎ করে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল-মিটিং করে। পরবর্তীতে গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে শাপলা চত্বরের মতো আরেকটি জমায়েতের পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেই পরিকল্পনা তারা বাস্তবায়ন করতে পারেননি।

 

জিজ্ঞাসাবাদে মনির হোসেন কাশেমী জানিয়েছেন, বিএনপির এক নেতার মোবাইল থেকে শায়খুল হাদীস নূর হুসাইন কাশেমীর মোবাইলে একটি ‘প্রোগ্রাম ক্যান্সেলড’ লেখা একটি বার্তা আসে। এই বার্তা পেয়ে তারা শাপলা চত্বরের মতো জমায়েতের পরিকল্পনা থেকে সরে আসেন। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, মনির হোসেন কাশেমী অনেক চতুর। চাঞ্চল্যকর অনেক তথ্য দিলেও জিজ্ঞাসাবাদে অনেক বিষয় তিনি এড়িয়ে গিয়েছেন। এমনকি গ্রেফতার হওয়ার বিষয়টি আগেই টের পাওয়ায় তিনি নিজের পাসপোর্ট ও ব্যবহৃত মোবাইলটি লুকিয়ে রাখেন। গ্রেফতারের পর নানা চেষ্টা করেও তার ব্যবহৃত মোবাইল ও পাসপোর্ট উদ্ধার করা যায়নি।

এই বিভাগের আরো খবর