বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১১ ১৪৩১

তিন ছাত্রীকে বিশেষ বেতন দিতে না পারায় ফেল করার ঘটনায় তদন্ত কমিটি

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৪ ডিসেম্বর ২০২২  

 

# তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো : অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক

 

বিশেষ ক্লাসের ১২ মাসের বেতন ৬ হাজার টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মর্গ্যান গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের দশম শ্রেণির এক মেধাবী ছাত্রীকে নির্বাচনী পরীক্ষায় ৩ বিষয়ে ফেল করিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

 

 

এর আগে নির্বাচনী পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে ওই ছাত্রীকে ৪০ মিনিট আটকে রেখে অকথ্য ভাষায় গালাগালও করা হয়। স্কুল শিক্ষকের এহেন আচরণে ওই ছাত্রী মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েছেন। শিক্ষার্থী  ও তার বাবা এ কথা গণমাধ্যম কর্মীদের জানিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।  

 

 

আগামী বছর অনুষ্ঠেয় এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে গত বৃহস্পতিবার সে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হকের কাছে লিখিত আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনা খতিয়ে দেখতে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

 

 

লিখিত আবেদনে সূচনা দাস নিতু নামে দশম শ্রেণির মানবিক বিভাগের (রোল নং-৩) ওই ছাত্রী উল্লেখ করেন, গত ৮ নভেম্বর স্কুলে ভুগোল পরীক্ষা চলাকালীন কথিক বিশেষ ক্লাসের ফি ছয় হাজার টাকা না দেওয়ার কারণে নির্বাচনী পরীক্ষার হল থেকে তাকে ডেকে নিজের কক্ষে নিয়ে যান সহকারি প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার।

 

 

এরপর তাকে বলেন, বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে পারো না তাহলে এই স্কুলে মরতে আসছো কেন? অন্য স্কুলে গিয়ে মরতে পার না। অনেক শিক্ষকের সামনে নিতুকে খুব বাজে ভাবে অপমান অপদস্ত করা হয়। ওই সময় নিতু বারবার তার পরীক্ষার সময় নষ্ট হচ্ছে জানিয়ে তাকে পরীক্ষার হলে যেতে দেওয়ার অনুরোধ করেন।

 

 

কিন্তু লায়লা কিছুতেই কর্ণপাত করেননি। ফলে নিতু ভুগোল পরীক্ষা খারাপ হয়। ওই ঘটনার পরদিন বিজ্ঞান পরীক্ষা থাকায় সেটিও তার খারাপ হয়েছে। ফেল করিয়ে দেওয়া হয় গণিতেও।

 

 

নিতু বলেন, আমার বাবা একটি প্রতিষ্ঠানের গার্ড ও স্বল্প আয়ের চাকুরিজীবি। আমি নিজে টিউশনি করে আমার পড়াশোনার খরচ চালাই। আমার স্কুলের কোনো মাসের বেতন বকেয়া নেই এবং পরীক্ষার ফি ও দিয়েছি নিয়মিত। তবে বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে পারি নাই।

 

 

কারণ স্কুলের বেতন ও নিজের খরচ চালানোর পর বিশেষ ক্লাসের বেতন দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। ইতিপূর্বে আমি স্কুল থেকে বেতন মওকুফ চেয়েছিলাম, কিন্তু তারা আমার বেতন মওকুফ করেনি। তারা আমাকে বলেছে যে, “স্কুলের বেতন পুরোপুরি দিলে বিশেষ ক্লাসের বেতন দেওয়া লাগবে না।

 

 

সেই অনুযায়ী আমি বিশেষ ক্লাস করেছি। আমি ক্লাসের থার্ড গার্ল হয়ে পরীক্ষায় কেন ফেল করবো। বিশেষ ক্লাসের বেতনের জন্য টেস্ট পরীক্ষার হল থেকে ডেকে নিয়ে আমাকে মানসিক ভাবে অত্যাচার করা হয়েছে।

 

 

তবে নিতু দাবি করেন, সে অতীতে শুধু গনিতে ফেল করেছিল। কারণ গনিতে শিক্ষক রেখে আলাদা বেতন দেয়ার মতো টাকা তাদের কাছে নেই। এবার ৩ বিষয়ে ফেল করার কথা জানার পর সে পরীক্ষার খাতা পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়ে আবেদন করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ তাকে সাফ না করে দেন।

 

 

তিনি অভিযোগ করে জানান, তিন বিষয়ের মধ্যে ভূগোল পরীক্ষা দিন আমাকে ৪০ মিনিট বিশেষ ক্লাসের বেতন দেয়ার জন্য পরীক্ষা হল থেকে ডেকে নিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। এর পরের দিনই ছিল বিজ্ঞান পরীক্ষা।

 

 

ভূগোল পরীক্ষার দিন ৪০ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখায় আমি সারাদিন কান্নাকাটি করেছি। পরের দিন আমার বিজ্ঞান পরীক্ষা ছিল। আমার পরীক্ষার খাতা চ্যালেঞ্জ করলেও স্কুল কতৃপক্ষ তা দেখাতে বাধ্য নয় বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

 

 

জানতে চাইলে সহকারী প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তার বলেন, সেদিন একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এর বেশি কিছু নয়। তবে স্কুলের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সহকারি প্রধান শিক্ষক লায়লা আক্তারের ব্যবহার খুবই রূঢ়।

 

 

নিতুর সঙ্গে পরীক্ষা চলাকালীন এমনটা না করলেও পারতেন। মেয়েটির বাবা গরীব। তাই সেই জানুয়ারী থেকেই বিশেষ ক্লাসের বেতন দিতে হবে না বলে নিতুকে জানিয়েছিল স্কুল কতৃপক্ষ। সমস্যা হলো শিক্ষিকা লায়লা প্রভাবশালী স্কুল কতৃপক্ষের পছন্দের। তাই তার বিষয়ে কিছু করা যাচ্ছে না।

 

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আজিজুল হক বলেন, নিতুর কাছ থেকে লিখিত পেয়ে বিষয়টি তাৎক্ষণিক ভাবে ফোনে ওই শিক্ষকের কাছে জানতে চেয়েছি। ওই শিক্ষক ঘটনা সরাসরি অস্বীকার না করে ঘুরিয়ে উত্তর দিয়েছেন। তাই ঘটনা তদন্তে ১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে দায়িত্ব দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে এ ব্যাপারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

এস.এ/জেসি
 

এই বিভাগের আরো খবর