শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণকাজে ধীরগতি

শাহজাহান দোলন

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২১  

প্রথম সংশোধিত চুক্তি অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালের সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। পাশাপশি এর কিছুদিন পরেই সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করার কথা ছিলো কর্তৃপক্ষের। কিন্তু করোনাসহ নানান জটিলতায় গত বছর সেতুটির কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেনি বিদেশী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তাই সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্তির সময় বাড়িয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়। তবে চলতি বছর, অর্থাৎ এবারও নির্ধারিত সময়ে এই মেগা প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হবে না বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। তাই প্রকল্পের মেয়াদ আবারো বাড়িয়ে কর্তৃপক্ষ সেতু মন্ত্রণালয়ে একটি ডিপিপি পাঠিয়েছে, যা দ্রুতই অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের দেওয়া হবে। 

 

আর সেতুর সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান বলছেন, সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা বারবার পিছিয়ে যাওয়ায়, মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিনিয়তই আমাদের চাপ দেয়া হচ্ছে। এতে দ্রুতই প্রকল্পের কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ বিলম্বের কারণ হিসেবে কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময় উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস.এফ.ডি থেকে অর্থছাড় বিলম্বিত হওয়ায় প্রকল্পের বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। এছাড়া, গত বছরে সেতুর গার্ডার নির্মাণের জন্য ২০ জন বিশেষজ্ঞ চীনা প্রকৌশলী সেতুর কাজে যোগদান করার কথা থাকলেও করোনার কারণে ভিসা জটিলতায় তারা, কাজে যোগদান করতে পারেনি। তাই এতেও নির্মাণ কাজে কিছুটা ধীরগতি এসেছে। কর্তৃপক্ষ আরো জানায়, সেতুর কাজ সময় মতো শেষ না হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ উল্লেখ করে ইতিমধ্যে প্রকল্পের মেয়াদ ২০২২ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করে কর্তৃপক্ষ সেতু মন্ত্রণালয়ে একটি ডিপিপি পাঠিয়েছে। যা শীঘ্রই অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে দেয়া হবে। 

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের সহকারী প্রকৌশলী সিদ্দিকুর রহমান যুগের চিন্তাকে বলেন, নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর নির্মাণ কাজ এ বছর শেষ হবে কিনা, সেটা বলা কঠিন। তবে না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এতে আমাদের উপর সেতু মন্ত্রণালয় থেকেও চাপ আসছে। কিন্তু আমরাও তাদের জানিয়েছি কি জন্যে প্রকল্পটি সমাপ্তিতে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া আমরা এখন প্রয়োজনীয় জনবল এবং মালামাল সরবরাহ নিশ্চিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুর নির্মান কাজ শেষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

 এছাড়া সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শীতলক্ষ্যা নদীর উপড় নির্মাণাধীন সেতুটির কাজ বছরের পর বছর চলতে থাকায়, নদীর সৈয়দপুর ও মদনগঞ্জ এলাকা দিয়ে নৌযান চলাচলের রুট কিছুটা ছোট হয়ে গেছে। এতে ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা দিয়ে জাহাজ ও লঞ্চ চলাচলের সময় নাবিকদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। নারায়ণগঞ্জের তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর দুই প্রান্তের এপ্রোচ-রোড (সংযোগ সড়ক) এর কাজ ৮০ শতাংশ সম্পূর্ণ হয়েছে। পাশাপাশি এ-পর্যন্ত সেতুটি নির্মাণের জন্য মূল সেতু এবং সেতুর ভায়াডাক্টে ৩৮টি স্প্যানের সকল পিলার নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়েছে। অন্যদিকে সেতুর পশ্চিম প্রান্ত সৈয়দপুরে ১৩টি এবং পূর্ব প্রান্ত মদনগঞ্জে ২০টি গার্ডার নির্মাণসহ প্রকল্পের ৭৬ শতাংশ কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।   

 

উল্লেখ্য, ৫৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ লেন বিশিষ্ট এই সেতুর দৈর্ঘ্য ১,২৯০ মিটার। যার মধ্যে ৪০০ মিটার মূল সেতু এবং ৮৯০ মিটার রাস্তার দুই পাশের ভায়াটেক্ট। এতে ফুটপাত ও রিকশা চলাচলের জন্য পৃথক লেন থাকবে। সেতুটি নির্মিত হলে ফরিদপুর ও মুন্সিগঞ্জ থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী সড়কে যোগাযোগের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে যাবে। এবং নারায়ণগঞ্জ শহর ও বন্দর উপজেলার সাথেও দ্রুত সড়ক পথে যোগাযোগ করা যাবে। এর আগে, ২০১০ সালে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর প্রকল্প হাতে নেয় বাংলাদেশ সরকার। সৌদি আরব সরকারের অর্থায়নে ১ হাজার ২৯০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২২ দশমিক ১ মিটার প্রস্থের এই সেতুটি নির্মাণ ব্যয় ধার্য করা হয় ৫৯৯ কোটি টাকা। 

বন্দর ও সদর উপজেলাবাসীর বহুল কাক্সিক্ষত এই সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০১৫ সালে এই প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর ২০১৭ সালে সেতুর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।

এই বিভাগের আরো খবর