শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

তৈমূর আলম খন্দকারকে স্থায়ী বহিষ্কার

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২২  

# আমও গেল ছালাও গেল বলে ভাবছে বিএনপি কর্মীরা
# বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদটিও কেড়ে নেওয়া হল তার


বিএনপির সাথে আর কোন সম্পর্ক রইলনা তৈমূর আলম খন্দকারের। এবার স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে  বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক  বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পর্যায়ের পদ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রাতে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ বহিষ্কার করা হয়।  সূত্র বলছে, বাংলায় একটা প্রবাদ আছে লোভ করছো তো সব হারিয়েছ। সেই প্রবাদটি অবশেষে সত্যিই হলো বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এড. তৈমুর আলম খন্দকারের বেলায়।

 

নিজের পায়ে যেন নিজেই কুড়াল মারলেন যেন তিনি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করায় অবশেষে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলর পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বিএনপির বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সদ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি'র আহবায়ক পদ থেকে প্রত্যাহার করে দেওয়া এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে। দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্রভাবে মেয়র পদে নির্বাচন করতে গিয়েই বিএনপি থেকে পুরোপুরি কপাল পুড়ল তৈমুর আলম খন্দকারের।



২০২২ সালের ১৬ জানুযারি অনুষ্ঠিত নাসিকের তৃতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনিত প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারকে প্রায় সত্তুর হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে হ্যাট্রিক মেয়র নির্বাচিত হন।   রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৬৯ হাজার ১০২ ভোটে জিতেছেন আইভী। আইভী নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন এক লাখ ৫৯ হাজার ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমূর আলম খন্দকার হাতি প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ১৬৬ ভোট।


এরআগে সামবার (৩ জানুয়ারি) দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এড. তৈমুর আলম খন্দকারকে। তার পদ থেকে তাকে সরিয়ে দিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছেন বিএনপি। এর আগে গত রোববার (২ জানুয়ারি) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত একটি পত্রে এ বিষয়ে উল্লেখ করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, নির্দেশিত হয়ে জানাচ্ছি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে আপনাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে। তবে দলীয় পদ থেকে তৈমুরকে কেন সরিয়ে দেয়া হলো, এ নিয়ে কোনো তথ্য জানায়নি বিএনপি। এর আগে গত ২৬ ডিসেম্বর এড. তৈমূর আলম খন্দকারকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক পদ থেকেও অব্যাহতি দিয়ে যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম রবিকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয়েছিল।


 সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশেন নির্বাচনে বিএনপি দলীয়ভাবে অংশ না নিলেও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলর সদস্য এড. তৈমুর আলম স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে দলীয় শৃঙ্গলা ভঙ্গ করেছেন । শুধু তাই না তৈমুর আলম নিজেকে বিএনপির প্রার্থী বলে নিজেকে হাজির করছে এবং নেতাকর্মীদের তার পক্ষে কাজ করতে বাধ্য করছেন। এমন অভিযোগ তার বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই ছিলো। শুধু তাই না তৈমুর আলম স্বতন্ত্র মেয়র প্রাথী হয়ে হাতি প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কিন্তু তিনি তার নির্বাচনী প্রচারনায় বলে বেড়াচ্ছে বিএনপি দলীয়ভাবে না গেলেও আমার প্রতি বিএনপির সমর্থন রয়েছে। বিষয়টি দলের হাইকমান্ডও জানেন। এটি বিএনপির একটি কৌশল। আর নির্বাচনে প্রচারনায় শ্লোগান দেয় খালেদা জিয়ার মার্কা হাতি মার্কা, তারেক রহমানের মার্কা হাতি মার্কা, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সালাম নিন তৈমুর আলমকে হাতি মার্কায় ভোট দিন। তৈমুর আলম স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলীয় প্রতীক নিয়ে এমন প্রচারণা দলের ভার্বমূতি ক্ষুন্ন হয়েছে। তারপর উপরে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ হাইকমান্ডও নাখোশ ।


আরও জানা গেছে, নির্বাচনের আগে  বিএনপির স্থানীয় কমিটির এক সভায় অনুষ্ঠিত হয়। সভায় মূলত তৈমুর আলমের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আলোচনা হয়। বিএনপি দলীয়ভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে না গেলেও তৈমুর আলম বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলর ও জেলা বিএনপির আহবায়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করায় তার দায়ভার বিএনপির উপরে উঠেছে। আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতারাও সরাসরি বলেছিলেন তৈমুর আলম বিএনপিরই প্রার্থী। বিএনপি বলেছিলো তারা এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নিবে না তবে ঠিকই এসেছেন কিন্তু বোকরা পরে। আওয়ামীলীগের নেতাদের এমন বক্তব্যে বিএনপির হাইকমান্ডের নজরে আসে। এবং তারা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে এই বিষয়ে অতিবাহিত করেন এবং তৈমুর আলমের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দাবিও জানান। সেই দাবির প্রেক্ষিতে তৈমুর আলমকে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। এবার তাকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলর পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।


 নির্বাচনের আগে অব্যাহতির বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী বিএনপি নেতা তৈমুর আলম খন্দকার বলেন, এবিষয়ে দল থেকে এখনও আমাকে কিছু জানায়নি। যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, আলহামদুলিল্লাহ। আমি মনে করি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান একটা সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আমাকে জনগনের জন্য মুক্ত করে দিয়েছেন। এখন আমি রিক্সাওয়ালা ঠেলা গাড়িওয়ালাদের তৈমূর রিক্সাওয়ালা ঠেলাওয়ালাদের কাছে ফিরে যাবো। আমি জনমানুষের তৈমুর গণমানুষের কাছে ফিরে যাবো।
তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালে দল নমিনেশন দিয়েছিল। সেবার দল সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। আমি আজ পর্যন্ত আমার দলকে প্রশ্ন করিনি কেন আমাকে সরিয়ে দেয়া হল, কেন প্রত্যাহার করা হল।


নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তৈমুর আলমের মন্তব্য, ‘বসবো ক্যান। এবার তো দল বাঁচাইয়া দিসে। গতবার একটা প্রার্থীর পথ সুগম করে দিয়েছিল। এবার যদি দল মনে করে, যে ওই প্রার্থীর পথ সুগম করে দিয়েছে, তাহলে এটা তাদের ভুল সিদ্ধান্ত হবে।’ দলের পদ প্রত্যাহারে নির্বাচনে কী প্রভাব পড়বে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘প্রত্যাহারের ফলে আমার নির্বাচনে প্রভাব পড়বে না। আমি নির্বাচন থেকে বসছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আগেরবার দলের কথায় বসেছি। এবার আর সেটি থাকছে না। আমাকে নির্বাচন করার পথ সুগম করে দিয়েছে দল। তবে বিএনপি এটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি জনগণের সঙ্গে আছি।’ পদের পর দলেও থাকতে পারবেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে তৈমুর আলম বলেন, ‘এটা দল ভালো জানবে। রাখবে কি রাখবে না, এটা দল বলতে পারবে।’ ‘আমি জনগণের সাথেই থাকতে চাই। জনগণই আমার সব’ যোগ করেন তৈমুর আলম খন্দকার।

এই বিভাগের আরো খবর