ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ৭ বছর
প্রকাশিত: ৩ মার্চ ২০২০
৬ মার্চ ২০১৩ বিকেলে সুধীজন পাঠাগারে যাওয়ার পথে নারায়ণগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সড়ক থেকে মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকীকে অপহরণ করা হয়েছিল। ঐ রাতেই ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় বিষয়টি উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি করেন এবং র্যাব ১১ এর কার্যালয়ে চিঠি দেন। এর দুই দিন পর ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর খালের পাড় থেকে পুলিশ ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে।
৮ মার্চ রাতেই ত্বকীর পিতা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ১৮ মার্চ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ত্বকী হত্যার জন্য তিনি শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমানসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে একটি অবগতিপত্র দেন। তদন্তে মামলাটির আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ২৮ মে ২০১৩ উচ্চ-আদালতের নির্দেশে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন (র্যাব) ত্বকী হত্যা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন।
সে বছর ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন নামের এক ঘাতক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। সে জবানবন্দিতে ত্বকীকে কখন, কীভাবে, কোথায়, কারা কারা এবং কেন হত্যা করেছে তার বিশদ বর্ণনা দেয়। তার বর্ণনা অনুযায়ী অপহরণের রাতেই তারা ত্বকীকে প্রথমে গজারির লাঠি দিয়ে পিটিয়ে অজ্ঞান করে এবং পরে কালাম সিকদার নামের এক ঘাতক তার বুকের উপর উঠে গলা চেপে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে। রাত ১১টার মধ্যেই তারা ত্বকীকে হত্যা করে এবং পরে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়।
ঘাতকের এই জবানবন্দির কিছুদিন পর ৭ আগস্ট র্যাব সে সময়ের সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের উইনার ফ্যাশন খ্যাত টর্চারসেলে অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে তারা দেয়ালে ও আসবাব পত্রে গুলির চিহ্ন দেখতে পান এবং সেখান থেকে রক্তমাখা প্যান্ট, দড়ি, রক্তমাখা গজারির লাঠি, ইয়াবা সেবনের সরঞ্জামাদি, পিস্তলের অংশসহ বিভিন্ন বস্তু আলামত হিসেবে সংগ্রহ করেন।
সে বছর ১২ নভেম্বর সুলতান শওকত ভ্রমর নামে অপর এক ঘাতক আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে সেও ত্বকীকে হত্যার বিশদ বিবরণ দেয়। সে তার বিবরণে উল্লেখ করে আজমেরী ওসমানের নির্দেশে তার টর্চারসেলে তারি উপস্থিতিতে ত্বকীকে রাত ১২টার আগেই তারা হত্যা করেছে। পরে আজমেরীর গাড়িতে করেই তারা ত্বকীর লাশ শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে নিয়ে যায় এবং লাশ নৌকায় করে নিয়ে নদীতে ফেলে দেয়।
ত্বকী হত্যার ১ বছরের মাথায় ৫ মার্চ ২০১৪ র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক র্যাবের প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমকে ত্বকী হত্যার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি জানান। তারা উল্লেখ করেন আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে।
হত্যার কারণ হিসেবে তারা তিনটি বিষয়কে উল্লেখ করেন-
১. ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর পক্ষ শক্ত অবস্থান গ্রহণ।
২. এর কিছু দিন পূর্বে গণপরিবহনে শামীম ওসমান ও তার অনুগত লোকদের ব্যাপক চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে তার (ত্বকীর বাবা) আন্দোলন।
৩. চিহ্নিত গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভূমি দখলের প্রতিবাদে জনগণের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া।
এ তিনটি কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে তারা ত্বকীকে হত্যা করেছে বলে উল্লেখ করে র্যাব একটি অভিযোগপত্র তৈরি করেন এবং তা উপস্থিত সাংবাদিকদের সরবরাহ করেন। তখন তারা অচিরেই এ অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হবে বলে জানান।
৩০ এপ্রিল, ২০১৪ সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান মৃত্যুবরণ করলে জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ওসমান পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা জানান এবং এর পর থেকেই কার্যত ত্বকী হত্যার তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।
ত্বকী হত্যার এক বছর পরে নারায়ণগঞ্জে সংগঠিত সাত খুন মামলার কার্যক্রম নিম্ন ও উচ্চ আদালতে সম্পন্ন হয়েছে। শিশু রাজন-রাকিব হত্যাসহ কিছু মামলা দ্রুত নিস্পত্তি হলেও ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্রটি পর্যন্ত আদালতে পেশ করা হয় নাই। যার ফলে আদালতে ত্বকী হত্যায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়া ঘাতক সুলতান শওকত ভ্রমর ও ঘাতক ইউসুফ হোসেন লিটনসহ সকলেই উচ্চ-আদালত থেকে জামিন নিয়ে কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে কেউবা দেশেই ঘুড়ে বেড়াচ্ছে।
এখন একদিকে ঘাতক আজমেরী ওসমান প্রশাসনের সামনেই বীরদর্পে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে, অন্যদিকে শামীম ওসমান ত্বকী হত্যার বিচারপ্রার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে নিবৃত করতে ব্যর্থ হয়ে তাদেরকে হামলা করে, মামলা দিয়ে নির্যাতনের বিভিন্ন পথ অব্যাহত রেখেছে। বহু সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক কর্মী বিভিন্ন সময় তার হামলার শিকার হয়েছে, রক্তাক্ত হয়েছে, রবীন্দ্রজয়ন্তীসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে তারা হামলা চালিয়েছে।
শামীম ওসমান নিজের স্ত্রীসহ বিভিন্ন আত্মীয় ও ঘনিষ্ঠজনদের দিয়ে ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করিয়েছে; তাঁর বিরুদ্ধে ধর্ম-অবমাননার মিথ্যা অভিযোগ এনে হেফাজতে ইসলামকে দিয়ে মামলা করিয়েছে। তাদের নিয়ন্ত্রিত মসজিদে মসজিদে মিথ্যা খুদবা দিয়ে জনতাকে উত্তেজিত করার চেষ্টা করেছে, হেফাজতকে দিয়ে মিছিল করিয়েছে। আবার সে মামলায় যাতে আদালতে যেতে না পারেন তার জন্য হেফাজত ও তার অনুগত ছাত্রলীগ-যুবলীগ পরিচয়ধারী ক্যাডারদের দিয়ে আদালত প্রাঙ্গণে লাশ চাই, কল্লা চাই বলে মহড়া দিয়েছে। হেফাজতকে নিয়ে সমাবেশ করে কতল করারও হুমকি দিয়েছে।
আজকে রাষ্ট্রে সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর মধ্যদিয়ে বিচারিক প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গির নগ্ন বহিপ্রকাশ পরিলক্ষিত হচ্ছে। রাষ্ট্রে সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর কারণে আমরা মনে করছি যে, সরকার তার রাজনৈতিক প্রয়োজনে কোন কোন বিচার সম্পন্ন করে থাকে এবং রাজনৈতিক প্রয়োজনেই কোন কোন অপরাধের বিচার কার্য সম্পূর্ণ বন্ধ করে রাখে। আজকে বিচার ব্যবস্থার প্রতি মানুষের নানাহ প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে রাষ্ট্রের এ শক্তিশালী স্তম্ভটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। বিচার ব্যবস্থা ও সুশাসন ধ্বংস হয়ে গেলে রাষ্ট্রের আর গণতান্ত্রিক চরিত্র অবশিষ্ট থাকে না, রাষ্ট্র দেউলিয়া হয়ে পড়ে। মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে আমরা দেউলিয়া দেখতে চাই না। আর চাইনা বলেই আর বিলম্ব না করে ত্বকী হত্যার সকল ঘাতকদের ও হত্যার নির্দেশদাতাদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনা এবং আদালতে অভিযোগপত্র প্রদান করে বিচার সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি।
হালিম আজাদ
লেখক : কবি ও সাংবাদিক এবং সদস্য সচিব-সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ
- পরিত্যক্ত গুদামে যুবকের লাশ
- ঈদ শেষ হয়নি বিএনপির
- ‘এই গরমে ইনফ্লুয়েঞ্জা সংক্রমণ’
- ‘এইভাবেই চলতাছে জীবন’
- প্রফুল্ল আজাদ-নাজিম
- এমপির সন্তান হুইপের আত্মীয়রাই ফ্যাক্টর
- অনলাইনে কালামের মনোনয়নপত্র জমা
- মোটর সাইকেল কিনে না দেওয়ায় যুবকের আত্মহত্যা
- বেলগাছের ডালে নারীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার
- ৩’শ শয্যায় ঠাণ্ডা-জ্বর, ভিক্টোরিয়ায় ডায়রিয়া রোগীর ভিড়
- সোনারগাঁ-রূপগঞ্জ নির্বাচনে আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ
- পাঁচ বছর যাবৎ পূর্ণাঙ্গ হয়নি জেলা যুবদল
- এমপি-মন্ত্রীর সন্তান-স্বজনকে ভোটে না দাঁড়ানোর নির্দেশনা
- আদালতে জাকির খানের বিরুদ্ধে দু’জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ
- বন্দরে অবশেষে উত্তপ্ত হলো নির্বাচনী ময়দান
- সরকারিভাবে সয়াবিনের নতুন দাম নির্ধারণ
- ঈদ শেষে বেড়েছে আলু-পেঁয়াজের দাম
- ঈদের ছুটি শেষ হতে না হতেই অবৈধ অটো-মিশুকের প্রবেশ শহরে
- ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব বুঝে নিলেন চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম
- আড়াইহাজারে অটোরিকশা চাপায় শিশুর মৃত্যু
- ৮ মাসেও বদলায়নি মহানগর যুবদলের ভাগ্যের চাকা
- কেউ কাউকে ছাড় নয়
- বিএনপিতে হিমশীতল হতাশা
- পি.এস সেলিমে ধ্বংস মান্নান
- চতুর্মুখী গ্যাড়াকলে রশীদ
- চিরচেনা রূপে ফেরেনি নারায়ণগঞ্জ
- ঈদ পরবর্তী বাজারে কমেছে সবজির দাম
- বন্দর উপজেলা নির্বাচনে ১১ প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা
- স্বস্তির বৃষ্টিতেও কমছে না গরম
- জনগণের গোলাম হিসেবে কাজ করে যাব : ফাইজুল ইসলাম
- পছন্দ-অপছন্দের নির্বাচনী লড়াই
- সদর উপজেলা নির্বাচন অনিশ্চিত
- চতুর্মুখী গ্যাড়াকলে রশীদ
- শামীম ওসমানের কাছে হকার সমস্যার সমাধান
- নিরুত্তাপ শাহজাহান ভূঁইয়া
- ফতুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব বুঝে নিলেন চেয়ারম্যান ফাইজুল ইসলাম
- সোনারগাঁ-রূপগঞ্জ নির্বাচনে আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ
- কেউ কাউকে ছাড় নয়
- খানপুর হাসপাতাল রোডে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত
- ফুটপাত দখলমুক্ত রাখাই চ্যালেঞ্জ
- বন্দরে অবশেষে উত্তপ্ত হলো নির্বাচনী ময়দান
- এবার সংগঠন মেরামতের পালা
- লাঙ্গলবন্দে দুদিনব্যাপী মহাষ্টমী স্নানোৎসব শুরু
- আ’লীগ নেতা কাজিমউদ্দিন প্রধান আর নেই
- যোগ্য নেতাকর্মী নেই বিএনপি’র
- অনলাইনে কালামের মনোনয়নপত্র জমা
- মান্নানে কলঙ্কিত হচ্ছে বিএনপি
- বিএনপিতে হিমশীতল হতাশা
- আট লেন করেও যানজটমুক্ত হয়নি ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক
- বাজারে কমেছে মাংস-সবজির দাম
- H2o নিয়ে আমরা হাসি, দিন শেষে আমাদের নিয়ে হাসে তারা!
- একজন তরুন কবির চোখে বঙ্গবন্ধু
- আশীর্বাদ না অভিশাপ কিং মেকার!
- আজ গৌর পূর্ণিমা, শ্রী চৈতন্য দেবের আবির্ভাব তিথি
- একজন বাঙালী মা ও মুক্তিযুদ্ধ
- দীপাবলী শ্যামাপূজা ও বাঙালি নারী
- পরিবেশ সুরক্ষা ও নান্দনিক পরিবেশ বাস্তবায়িততেই -সামাজিকের অগ্রগতি
- সাইফুল্লাহ বাদল বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক
- নারী দিবসের তাৎপর্য নেই
- মাদক মামলায় গ্রেফতার হওয়া দুলালকে দাদা’র প্রার্থী ঘোষণা
- শেখ হাসিনার একটি বাড়ি একটি খামার বিষয়ক আশ্রয়ণ প্রকল্প
- বায়ুদূষণ রোধে করণীয়
- বসন্তে বাসন্তী পূজার ইতিবৃত্ত
- রাজার দোষে রাজ্য নষ্ট প্রজা কষ্ট পায়
- পোষ্টার লাগানোর সময় বৈধ, পরে অবৈধ!