শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘ত্বকী হত্যার বিচার বিলম্বিত হওয়ায় অনেকেই লম্ফঝম্ফ করছে’

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ৮ আগস্ট ২০২২  

 

# এসপি-ডিসির চেয়ার ভেঙে থাকলেও কাজটি সঠিক করেননি : সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন

 

সম্প্রতি সাংসদ শামীম ওসমানের দুটি বক্তব্য ঘুরে ফিরে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। এরমধ্যে একটি হল দীর্ঘদিন পরে মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করে বারবার বক্তব্য দিচ্ছেন শামীম ওসমান। চলতি মাসে একটি টেলিভিশনের টকশোতেও শামীম ওসমান এই দাবি করেন। 

 

এর দিন কয়েক আগে জেলা কমিউনিটি পুলিশের সভায় শামীম ওসমান দাবি করেন, তিনি এমন কোন এসপি-ডিসি নাই যাদের চেয়ার ভাঙেননি। এমনকি পুলিশের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি তার মামলায় জামিন নিতেন। শামীম ওসমানের এই দুই বক্তব্যে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা তৈরি হয়। 

 

শামীম ওসমানের বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন ২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনে তার বিপক্ষে জয়ী প্রার্থী বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন। ত্বকী হত্যকাণ্ডের বিচার নিয়ে  সাবেক সাংসদ গিয়াসউদ্দিন যুগের চিন্তাকে দেয়া স্বাক্ষাৎকারে বলেছেন, ত্বকী হত্যাকাণ্ড একটি নির্মম ও নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড। 

 

শুধু নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্যই নয়, এটি সমগ্রজাতির জন্য দুঃখজনক ঘটনা। একজন ছাত্রকে নিষ্ঠুরভাবে এভাবে হত্যা করা  কোন বিবেকবান মানুষই না শুধু, সাধারণ মানুষও মেনে নিতে পারে নাই। আমাদের দেশের পুলিশ অনেক ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকলেও এতোটুকু যোগ্যতা এখনো হারায়নি যে এ ধরণের হত্যকাণ্ডে তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদেরকে খুঁজে বের করতে পারবেনা। এতো অদক্ষ আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নন। 

 

আমি যা জানি, যারা এই হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে ছিল, তারা প্রকৃতভাবে সুষ্ঠুৃভাবে তদন্ত করেই রহস্য উদঘাটন করেছিল। তারপর, সরকার ও প্রশাসনের কাছে সেই রিপোর্টও তারা দাখিল করেছে। অদৃশ্য কারণে দীর্ঘদিন হয়ে যাওয়ার পরেও এই হত্যাকাণ্ডে বিচার হচ্ছেনা। বিচার না হওয়াতে  একেকজন একেক সময়ে লম্ফঝম্ফ করে কথা বার্তা বলছে। এবং ত্বকী হত্যার বিচারকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য অনেক কলা কৌশলও করা হচ্ছে। 

 

আমরা চাই, ত্বকী হত্যাকাণ্ডের মতো নির্মম নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডে যে বা যারাই জড়িত থাকুক; কে আমরা জানিনা, বলতে চাইনা কিন্তু প্রশাসন জানতে পেরেছে, প্রশাসন সেই রিপোর্টও দিয়েছে। প্রশাসনের সেই রিপোর্ট অনুযায়ী বিচার করা হোক। কথা বলার চাইতে, বাক-বিতণ্ডা করার চাইতে, স্ট্যান্টবাজি করার চাইতে মূল হল, সরকার ইচ্ছা করলে ত্বকী হত্যার বিচারটা করতে পারে। বিচারটা হোক এটা আমরা চাই।

 

এসপি-ডিসির চেয়ার ভাঙা নিয়ে শামীম ওসমানের দেয়া বক্তব্য প্রসঙ্গে মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, শুধু এটুকুই বলবো, একজন নেতা যদি নিজেকে জনগণের সামনে, কর্মীবাহিনীর সামনে, দেশবাসী ও প্রশাসনের সামনে নিজেকে ফোকাস করার জন্য তার খারাপ দিকটাকে তুলে ধরে, তাহলে তার কাছ থেকে আগামী প্রজন্ম কী শিক্ষা গ্রহণ করবে? তিনি এমন করছে কি না আমি ঠিক জানিনা। তবে তার দলের নেতাকর্মীরাই বলছে, এগুলো উড়ো কথা। আর যদি করেও থাকে তবেও তা তিনি ভালো করেননি।


প্রসঙ্গত, ৬ আগস্ট পূর্ণ হল তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১১৩ মাস, সাথে সাথে একটি বিচারহীনতারও ১১৩ মাস। দীর্ঘ এ সময়েও তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের তদন্ত শেষ করে তৈরী করে রাখা অভিযোগপত্রটি আদালতে পেশ করা হয় নাই। দেশে এটি বিচারহীনতা ও রাষ্ট্রের বৈষম্য মূলক বিচার ব্যবস্থার একটি নগ্ন উদাহরণ।  

 

ত্বকী হত্যার ১১৩ মাস উপলক্ষে ত্বকী সহ সকল হত্যার বিচারের দাবিতে আজ ৮ আগষ্ট ২০২২ সোমবার সন্ধ্যা সাতটায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তন প্রাঙ্গণে এক আলোক প্রজ্বলন কর্মসুচি অনুষ্ঠিত হয়।


এদিকে জেলা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের নবগঠিত কার্যনির্বাহী পরিষদের পরিচিতি সভায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমানের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্টজনেরা। তারা বলছেন, পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে শামীম ওসমানের এমন বক্তব্য দিয়ে কি প্রতীয়মান হয়। প্রশাসন সম্পর্কে সমাজে কি মেসেজটা পৌঁছে দিলেন তিনি। প্রশাসন, আইন, বিচার ব্যবস্থার অবস্থা সম্পর্কে কি তথ্য তুলে ধরলেন শামীম ওসমান।  

 

শামীম ওসমান ওই অনুষ্ঠানে দাবি করে বলেন,  ‘আগে আমি পুলিশের বড় দুশমন ছিলাম, পুলিশ বলতেই আমার সাথে লাগালাগি ছিল। মমিনউল্লাহ পাটোয়ারির আগে এমন কোন এসপি নাই  যেই এসপির টেবিল চেয়ার আমি ভাঙ্গি নাই, এমন কোন ডিসি নাই যার টেবিল আমি ভাঙ্গি নাই। নিজাম, পলাশ ওরা পিচ্চি পিচ্চি ছিলো ওরা জানে। 

 

জেলখানা থেকে কোন আসামী আমি জামিন করে ছুটাই নাই। জেল খানায় গেছি, হাজার হাজার পোলাপান নিয়ে ঘেরাও করছি, জেলগেট খুলছি,  ডিসি সাহেব এসে বলতো ভাই জামিনটা নেন। আমি বলতাম জামিন নামা পাঠায় দেন। তৈমুর আলম খন্দকার ছিলো আমাদের ফ্রি লইয়ার। ওনি আমাদের বিরুদ্ধে কেস করতো। শুনতাম সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ৪৯টা কেস খাইছি।

 

কারণ কেস খাইলে খুশি হইতাম! কেন? কারণ কেস খাইলে পুলিশ টাকা দিবো; এবং পুলিশ আমাদের টাকা দিতো। কেনো দিতো, বলতো ‘ভাই জামিনটা নেন।’ তখন বলতাম, ‘টাকা দেন জামিন নেই। কলেজে গিয়ে চুপচাপ টাকা দিয়ে আসতো আর আমরা জামিন নিয়ে আসতাম। কোর্টে আসলে উকিল বলতো ভাই কোন হইচই কইরেন না। উপর থেকে ডিসি কিছু দিবো আবার সেটাও খাইতাম। আমরা এভাবে রাজনীতি করছি।’ এন.এইচ/ জেসি

এই বিভাগের আরো খবর