মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

দামে দিশেহারা ক্রেতা

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২২ অক্টোবর ২০২১  

# মাস না ফুরোতেই অনেকেরই পকেট হচ্ছে ‘গড়ের মাঠ’।


# নিত্যপণ্যের দামের এমন আস্ফালন মানুষকে কাঁদাচ্ছে।


# ক্রেতাদের অভিযোগ কোন পণ্যের দাম একবার চড়লে আর সহজে নামে না।




নিত্যপণ্যের বাজারে জমেছে কালো মেঘ। করোনার এই দুঃসময়ে দামের ঝাঁজে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের চোখে জলকণা। মাস না ফুরোতেই অনেকেরই পকেট হচ্ছে ‘গড়ের মাঠ’। সহজদামে যেন কোন পণ্যই মিলছেনা। আগুনদামের কারণের অনেক পণ্যে হাত দেওয়ার সাহসই পাচ্ছেনা ক্রেতারা।অতিরােিত এমনিতেই মানুষের জীবনযাত্রা গতিহীন। কেউকেউ হারিয়েছেন চাকরি। অনেকের চাকরি থাকলেও ঝুলে গেছে বেতন। দীর্ঘ লকডাউনের পর ব্যবসায়ীরা প্রতিষ্ঠান খুললেও এখনো পুরোপুরি ফেরেনি ছন্দ। এমন প্রেক্ষাপটে নিত্যপণ্যের দামের এমন আস্ফালন মানুষকে কাঁদাচ্ছে।



নিম্নশ্রেণির মানুষ যে মোটা চালে ডাল মিশিয়ে পেট ভরাবে, নেই সেই উপায়। গরিবের মসুর ডালে চলছে খেল। কিছুটা স্থির চালের চালবাজি, তবে জারি তেলের তেলেসমাতি। পরিবারের ছোট সদস্যকে যে দুধ মুখে তুলে দেবেন বাবা. সেই প্যাকেটজাত দুধের দরটাও এখন পাগলা ঘোড়া। ডিম কিনতে রীতিমত হিমশিম। আটা-ময়দা কিনতে বেকায়দা। ব্রয়লার মুরগিও দিচ্ছে দামে সুড়সুড়ি। আর চিনির দামটাও এখন অচেনা। রুপালি ইলিশের এখন ‘রুপার দর’ একাই নাচিয়ে যাচ্ছে বাজার। ক্রেতাদের অভিযোগ, কোন পণ্যের দাম একবার চড়লে আর সহজে নামে না।


 
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালের বাড়তি দাম, জাহাজভাড়াসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে যাওয়ায় বাজারেও সমন্বয় করতে সমস্যা হচ্ছে। এদিকে নজরদারির দায়িত্বে থাকা দপ্তরগুলোও বলছে কোন পণ্যের অযোক্তিক দাম বাড়েনি।  



কেমন বেড়েছে দাম :  গত কয়েক সপ্তাহের বাজার পরিস্থিতি লক্ষ্য করে দেখা গেছে, আজ বাড়ছে চালের দাম কাল বাড়ছে তেলের দাম। ডাল, পেঁয়াজ, আটা, ময়দা, মরিচ, আদা কোন পণ্যের দাম স্থির থাকছে না। অন্যদিকে আর্শ্চয্যজনকভাবে বেড়েছে চিনির মূল্য। ফলে অল্প কামাইর মানুষেরা হারাচ্ছে ক্রয়ক্ষমতা। গরিবের পণ্যে ব্রয়লার মুরগি ও  কক মুরগির দামও অস্থির। আর গরুর মাংস দাম অনেক আগেই চলে গেছে নাগালের বাইরে। লাগাতার এসব নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠেছে নিম্ন ও মধ্যবিক্ত মানুষেরা।



নগরীর দ্বিগবাবুর বাজারে কথা হয় আলমাস মিয়ার সাথে তিনি জানান, বর্তমানে জীবনের নূণ্যতম চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আয়ের সঙ্গে ভারসাম্য রাখতে গিয়ে কাছাট করতে হচ্ছে প্রতিদিনের বাজার তালিকা। এভাবে দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধিতে ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের মধ্যে। তাদের দাবী বাজার ব্যবস্থার উপর সরকারের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। অন্যদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, এবার বাজারে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আবহাওয়ার উপর দ্রব্যমূল্যর দাম বাড়ার বিষয়টি নির্ভর করে বলে তারা জানান। তবে ভোক্তাদের দাবী সব পণ্যের দাম আবহাওয়ার উপর নির্ভর করে না। চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, মাংস ইত্যাদি। এগুলোতে সরকারের মনিটরিং থাকে না বলেই দাম বাড়ে। এসব পণ্যে সরকারের জোর মনিটরিং দরকার। সঙ্গে অন্যান্য পণ্যের  ক্ষেত্রে সাপ্লাই চেন ঠিক রাখা।

 

শহরের সবচাইতে বড় বাজার দ্বিগুবাবুর বাজারে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, বৎসরের শুরু যে ডিমের ডজন ছিল ৮৫-৯০ টাকা বর্তমানে ওই ডিমের ডজন ১২০-১২৫ টাকা। বড় দানার মসুর ডাল ছিল ৬৫-৭০ টাকা ওই ডাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০ টাকা কেজি। সয়াবিন তেল খোলা ১২২-১২৪ ট্াকা বর্তমানে ওই খোলা তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৪২ টাকা। বোতলজাত সয়াবিন তেল ছিল ১৩০-১৩৫ টাকা। এখন বিক্রি হচ্ছে ১৫৩-১৫৫ টাকা। বৎসরের শুরু পাম তেলের দাম বেড়ে ১০০-১১২ টাকা বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৪-১৩৬ টাকা। আর চিনি বৎসরের শুরু বিক্রি হয় ৬৫-৭০ টাকা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা। আটা (প্যাকেট-খোলা ) ২৮-৩৩ টাকা বর্তমানে ৩৫-৪০ টাকা। ময়দা প্যাকেট- খোলা ৩৩-৪৫ টাকা এখন ৪৫-৫৫ টাকা। গুড়া দুধ ৫০০-৬৩০ টাকা এখন ৬৯০-৭২০ টাকা। মুরগি ব্রয়লার ১১০-১২০ টাকা বর্তমানে ১৭০-১৮০ টাকা। চিকন চাল ৫৮-৬৪ এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৮ টাকা। আর মোটা চাল ছিল ৪৪-৪৮ টাকা বর্তমানে ৪৬-৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ৪০-৪৫ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭০ টাকা।


এদিকে সয়াবিন তেলের মূল্য বেড়েছে লিটারে পঞ্চাশ টাকারও বেশী। এই দাম কয়েক ধাপে বেড়েছে। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের মূল্যও বেড়েছে অস্বাভাবিহারে। আবার পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। আমদানি পোঁজের দামও বাড়ছে। হঠাৎ করেই পেঁয়াজের কেজিতে বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। পাশাপাশি কাঁচামরিচের দামও বেড়েছে কেজিতে একশত থেকে ১২০ টাকা। গত সপ্তাহে যে কাঁচামরিচের কেজি ছিল ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গতকাল ওই কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি ধরে।  


ক্রেতাদের দাবি, একটি পণ্যের দাম বাড়লে আর কমে না। এভাবে একের পর এক পণ্যের মূল্য বাড়লে বাঁচা দায় হয়ে পড়বে। নিত্যমূল্যের চড়া দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। তারা জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্রের মূল্যে দাম বাড়লে মানুষের জীবনমানের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। অনেক সময় মানুষকে সঞ্চয় ভেঙে জীবন চালাতে হয়।  



এছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মধ্যে  আবারও ডিমের দাম অস্থির হয়ে উঠেছে। গত সপ্তাহের চেয়ে ডিমের হালিতে দুই টাকা বেড়ে ৩৮ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর অস্বাবাভিকভাবে বাড়ছে ব্রয়লার মুরগির দাম। গরিবের পণ্যে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০-১৮০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে কক বিক্রি ২৯০-৩২০ টাকা কেজি। তবে কোন কোন বাজারে দামের হেরফের রয়েছে।

 


এদিকে শীত উঁকি দিতেই বাজারে আসতে শুরু করেছে শাক-সবব্জি। এসব কোন কোন শাক-সবব্জির দাম ১০০ টাকা ছুঁই ছুঁই। আলু, পটল, বেগুন, বরবটি, কাকরল, কচুর গাটি, দারা, করল্লা, উস্তা, টমেটো আগের বাড়তি দামেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। তবে শীতকালীন কিছু সবজি বাজারে এলেও দাম ঊর্ধ্বমুখী। শীতকালীন সবজি শিম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আর দেশী  টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। বিদেশী টমেটো ১০০ টাকা।  

 


কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি কেজি চিচিঙ্গা ৫০, ঝিঙ্গা ৪০, কাঁচা পেঁপে ৩০, দেশী ধনিয়া পাতা ১৫০, লাউ (মাঝারী) ৬০, শশা (চিকন) ৫০, ছোট লেবু প্রতি হালি ২৪, বড় সাইজ ৪০, চাল কুমড়া পিছ ৫০, করল্লা ৫০, বরবটি ৬০, বেগুন ৪০, পটল ৪০, পুঁইশাক ৩০, লালশাক ৩০, উস্তে ৬০ ঢেড়স ৪০ গাজর ১২০, মুলা ৫০ টমেটো ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হতে দেখা গেছে।

 


অন্যদিকে, মাছের বাজারেও আগুন। প্রতি কেজি কাঁচকি মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, চাষ করা কৈ ১৫০ থেকে ২০০, মাঝারি সাইজের চিংড়ি ১০০০ থেকে ১২০০, শিং ৫০০ থেকে ৬০০, পুঁটি ৩০০ থেকে ৩৫০, বড় সাইজের শোল ৮০০ থেকে ৯০০, পাঙ্গাস ১২০ থেকে ১৩০, বোয়াল, রুই, কাতলাসহ অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা কমতির দিকে। তবে পূর্বের চড়া মূল্যে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। ৫৫০ কাটা কেজি সরকারী নির্দেশনা থাকলেও ৬০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দাবি, বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অতিশিঘ্রই বাজারে নিত্যপণ্যের দাম লাগাম টেনে না ধরলে মানুষের বেঁচে থাকাটাই দুষ্কর হয়ে পড়বে।
 

এই বিভাগের আরো খবর