শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৫ ১৪৩০

দুই কুতুবে জিম্মি কুতুবপুর, হুইলচেয়ারে বসে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণ

যুগের চিন্তা রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২৮ মে ২০২৩  

 

# পদ-পদবীর অন্তরালে গড়ে তুলেছেন বিশাল অপরাধ সিন্ডিকেট
# সন্ত্রাসী মীরু ও সোহেলের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকাশ্যে চলে মাদক বেচাকেনা
# অপরাধ কর্মকান্ডে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা দরকার

 

 

ফতুল্লার কুতুবপুরে হাত বাড়ালেই মিলছে ভয়ংকর মাদক। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় হরহামেশাই বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। আর এসব মাদক কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে রাতারাতি অনেকেই আঙ্গুল ফুলে হয়েছেন কলাগাছ। হুইলচেয়ারে বসে অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণকারী দুই কুতুবের এমনিই এক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে এসেছে আমাদের অনুসন্ধানে।

 

রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় কুতুবপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার কয়েক শতাধিক মাদক কারবারিদের দেখভালের দায়িত্বেও রয়েছেন দুই কুতুব। কুতুবপুর ইউনিয়নের অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে রয়েছেন স্থানীয় দুই নেতা নামধারী মীর হোসেন মীরু ও পিয়াস আহাম্মেদ সোহেল। তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কুতুবপুরে বিভিন্ন এলাকার মাদক, চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিং সহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক তথ্য।

 

তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী মীরু নিজেকে সেচ্ছাসেবক লীগের নেতা দাবী করলেও নেই কোনো পদ-পদবী। পিয়াস আহাম্মেদ সোহেল ফতুল্লা থানা জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি। তারা রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করে এবং তাদের পদ-পদবীর অন্তরালে গড়ে তুলেছেন বিশাল অপরাধ সিন্ডিকেট। তাদের সিন্ডিকেটে রয়েছে কয়েক শতাধিক কিশোর ও সন্ত্রাসী বাহিনী। আর এইসব বাহিনীর ধারা নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কুতুবপুরে অপরাধ জগৎ।

 

পিয়াস আহাম্মেদ সোহেল, তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পাগলা বাজার, আলীগঞ্জ, রসুলপুর, নন্দলালপুর, পিলকুনীসহ বেশ কয়েকটি এলাকার অপরাধ জগৎ। এইসব এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাগলা বাজার, স্টুডিও, জেলেপাড়া, মেরী এন্ডারসনের সামনে দিন রাত মাদক বিক্রি ও চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি সুসংগঠিত হয় তার নিয়ন্ত্রণে।

 

শুধু তা-ই নয়, পাগলা সিএনজি, লেগুনা স্ট্যান্ডে তার নামে প্রতিদিন চলে চাঁদাবাজি। আর এসব এলাকার মাদক ব্যবসায়ীরা তাকেই মাদক বিক্রির টাকা দিয়ে মাদক ব্যবসা চালাতে হয় বলেও জানা যায়। প্রতিনিয়ত তার পাশে চিহ্নিত মাদক কারবারিদের দেখা মিলে। আলীগঞ্জ এলাকার চিত্র একই, কারণ সেখানেও পিয়াস আহাম্মেদ সোহেলের সেল্টারেই চলছে মাদক ব্যবসা। এমটায় অভিযোগ এলাকাবাসীর।

 

মীর হোসেন মীরু, তিনি ফতুল্লা মডেল থানার একজন তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। তার নিয়ন্ত্রণে অপরাধ সুসংগঠিত হয় কুতুবপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকায়। তার রয়েছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী। মিরু বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে পাগলা, তালতলা, বউ-বাজার, শাহীবাজার, নিশ্চিতপুর, চিতাশাল, নয়ামাটিসহ বেশ কয়েকটি এলাকা। চুরি, ছিনতাই, মাদক, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পদপদবী না থাকলেও সে রাজনৈতিক পরিচয়ে গড়ে তুলেছেন বিশাল অপরাধ জগৎ। হুইল চেয়ারে বসে এসব নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি।

 

নাম প্রকাশ্যে অনইচ্ছুক এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, আলীগঞ্জ রেললাইন ও পাগলা বাজার এলাকায় প্রকাশ্যে মাদক বেচাকেনা চলে পিয়াস আহাম্মেদ সোহেলের নাম ভাঙ্গিয়ে। তবে যারা মাদক বিক্রি করে সবাইকে প্রায় সময় তার পিছনে দেখা যায়, তার মতো একই অবস্থা সন্ত্রাসী মীরুর। তাদের কারণে আজ আমাদের সমাজে অপরাধ করেও বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। সমাজের অধিকাংশ মানুষ এখন তাদের হাতের কব্জায় জিম্মি। তাদের অপরাধ এখন থেকেই নিয়ন্ত্রণ করতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান তিনি।

 

এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কাছে সচেতন মহলের দাবি, তাদের অপরাধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা দরকার। তাদের কারণে আজ যুবসমাজ ধাবিত হচ্ছে মাদক সহ বিভিন্ন অপরাধে। এখন থেকে তাদের লাগাম টেনে ধরে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামীতে হুমকির মুখে পরবে সমাজের প্রতিটি পরিবার। তাই নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কমনা করেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী।এস.এ/জেসি

এই বিভাগের আরো খবর