মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪   বৈশাখ ১০ ১৪৩১

দুই ডাম্পিং প্ল্যান্ট নির্মাণ কাজ শেষের অপেক্ষায় সিটি কর্পোরেশন

মাহফুজ সিহান

প্রকাশিত: ২ জুন ২০২১  

কঠিন বর্জ্য কি ধরণের সমস্যা তৈরি করতে পারে তা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড ৬ লেনে উন্নীতকরণের কাজ করতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর। এছাড়া দারুণ কিছু ড্রেনেজ সিস্টেম থাকার পরও অসচেতন ও দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে পলিথিন ফেলার ফলে শহরেও জলাবদ্ধতার মূল কারণ এই কঠিন বর্জ্য। তবে আশার কথা হলো, চলতি বছরেই জালকুড়ি দশপাইপ এলাকায় প্রায় ২৪ একর (২৩.২৯) জায়গার উপর  ডাম্পিং স্টেশন নির্মাণ কাজ শেষ হবার কথা। আর বন্দরেও ৬৯ দশমিক ৮৭ একর জায়গা অধিগ্রহণকরে তৈরি হচ্ছে ডাম্পিং।

 

এটি ২০২৩ সালের মধ্যে শেষ করার কথা। জালকুড়ির প্রকল্পেই সিটি করপোরেশনের সাথে পাওয়ার ডেভেলপম্যান্ট বোর্ডকে (পিডিবি) ‘ওয়েস্ট টু এনারজি প্ল্যান্ট’ স্থাপনের জন্য ১০ একর জায়গা বরাদ্দ দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। যেখানে চুক্তিঅনুসারে এই প্ল্যান্টে প্রতিদিন ৬০০ মেট্রিক টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে ৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এদুটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সিটি করপোরেশন এলাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন তো আসবেই এর পাশাপাশি সিটির বাইরের এলাকাতেও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরবে। 

 


সিটি করপোরেশনের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, নারায়ণগঞ্জ নগরীতে প্রায় ৩৫০ টন কঠিন বর্জ্য তৈরি হয়, তন্মোধ্যে শিল্পবর্জ্য যেমন পলিথিন, জুট কাপড়, পলিথিন ইত্যাদি, আবাসিক বর্জ্য যেমন খাদ্য, শাকসবজি,ফল, পলিথিন, কাগজ ও কাপড়ের মতো। সিটি করপোরেশন প্রতিদিন ২৯০ টন কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। বর্জ্য সংগ্রহের হার একদিনের মধ্যে প্রায় ৮৩%। এবং অবশিষ্টাংশ স্থানীয় নদীর পাড় বা খালে উপর ডাম্প করা হয় যা স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে পরিবেশের অবক্ষয় ও জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ক্ষতির কারণ হয়। ফলে পরিবেশগত বিপদ এবং স্বাস্থ্যের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। কমিউনিটির আবাজিক বর্জ্য এবং বাণিজ্যিক ও অ-বিপজ্জন শিল্প বর্জ্য, নির্মাণ বর্জ্য, ভূগর্ভস্থ বর্জ্য  ও মেডিক্যাল বর্জ্যগুলি রাস্তার পাশে, পুকুর, খাল ইত্যাদি স্থানে ফেলা হয়। কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ ব্যবস্থাপনা এতই অপ্রতুল যার কারণে নগরীতে দূষণ ও স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়ায়। 

 


বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফেরাতে জালকুড়ির দশপাইপ এলাকায় নির্মিত ডাম্পিং গ্রাউন্ড নির্মাণ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সিটি করপোরেশন এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য  ৩৪৫ কোটি ৯১ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যায়ে এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে তৈরি হচ্ছে। ২০১৫ সালে এই প্রকল্প প্রস্তাব কর হলে  ২০১৮ সালে এটি একনেক সভা অনুমোদন পায়। এই প্রকল্পের বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর। ভূমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হবার পর এখন অন্যান্য কাজ চলামান রয়েছে।  বর্তমানে প্রকল্পের গড় অগ্রগতি প্রায় ৯৫ শতাংশ। প্রকল্পের বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ১৮ কিলোমিটার রাস্তা, ২ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন, ৩ হাজার ৭১৭ বর্গ মিটার অফিস ভবনের চারপাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের আওতায় বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট, রিসাইক্লিং প্ল্যান্ট, কম্পোস্ট প্ল্যান্ট,  লিচিক পন্ড, গ্রীণ পন্ড,  গ্রে ওয়াটার পন্ড, গ্যারেজ  ও ওয়েটিং রুমসহ আরও অনেক স্থাপনা নির্মাণ করা হবে।

 

এছাড়া ময়লা আবর্জনা আহরণ ও অপসারণ ব্যবস্থাপনার জন্য ট্রাক, ট্রলি, হুইল টাইপ বোল্ড ডোজার, চোইন ডোজার, ওয়ে ব্রীজ এবং সাকশন ক্লিনার ক্রয় করা হবে। পিডিবির সংশ্লিষ্টতায় এই প্রকল্পেই ১০ একর জায়গার উপর নির্মিত প্ল্যান্টে প্রতিদিন ৬০০ মেট্রিক টন বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ করে ৬ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ইতিমধ্যে পিডিবি’র মাধ্যমে দরপত্র আহবান করে চায়নার কোম্পানি ইউডি এনভায়রনমেন্টাল ইকুইপমেন্ট কোম্পানি, এভারব্রাইট এনভায়রনমেন্টাল প্রোটেকশান টেকনিক্যাল ইকুইপমেন্ট (চাংঝো) এবং এসএবিএস সিন্ডিকেটের কনসোর্টিয়াকে চুক্তির চিঠি (এলওএ) দেওয়া হয়। শীঘ্রই প্রকল্পের অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু হবে।  এই কার্যক্রমে সময় ব্যয় হবে ৪৪৫ দিন। এই অবকাঠামোগত কাজ সম্পূর্ণ হলে বর্জ্য হতে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। 

 


নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, তারা নিজ উদ্যোগেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় বর্জ্য সরবরাহ করবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে শুধু বিদ্যুৎই পাওয়া যাবেনা, বর্জ্য অপসারণের মতো গুরুতর সমস্যার সমাধান হবে। সম্পূর্ণ সিটি করপোরেশন প্রতিদিন ৬০০ মেট্রিক টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়। তবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সিটি হতে সংগ্রহকৃত বর্জ্যরে অতিরিক্ত আরও ১০০ মেট্রিক টন বর্জ্যরে প্রয়োজন হবে। যা শহরের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হবে। ফলে বর্জ্যরে কারণে পরিবেশ দূষণের মতো মারাত্মক সমস্যার সমাধান হবে  এবং জেলা শহর পরিচ্ছন্ন নগরীতে পরিণত হবে। 

 


অপরদিকে কঠিন বর্জ্য থেকে সিটি করপোরেশনের বন্দর এলাকার মানুষকে নিষ্কৃতি দিতে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে কদমরসুল অঞ্চলের মধ্যবর্তী ২৫নং ওয়ার্ডে ধামগড় ও লক্ষণখোলা মৌজার নিরিবিলি এলাকায় ৬৯ দশমিক ৮৭ একর জায়গা অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়। ওই বছরের ২১ জুলাই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কদমরসূল অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও উন্নয়ন প্রকল্প (ডিপিপি) প্রস্তাব করে। যার প্রস্তাবিক প্রকল্প ব্যয় ৩০১ কোটি ৩৫ লাখ ২১ হাজার টাকা। গতবছরই একনেক সভায় প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। 

 


এই প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, প্রকল্পটির মেয়াদকাল ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২৩ সাল পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজে ভূমি অধিগ্রহণ ৬৯ দশমিক ৮৭ একর, কার ওয়াশিং সেড নির্মাণ ২২৫০ বর্গমিটার, রাস্তার নির্মাণ কাজ ৫৫০ মিটার, বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ২৬০০ মিটার, ভূমি উন্নয়ন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ ঘনমিটার, প্রকৌশল সরঞ্জাম ক্রম ১৬টি, এরমধ্যে স্কিভ স্টিয়ার লোডার ৫টি, চেইন ডোজার (১৯ টন), ১টি, পে-লোডার (২.৫ ঘনমিটার) ২টি, লোবেড (২০-২৫ টন) ১টি, ওয়ে ব্রিজ (২৫টন) ১টি, স্ক্যাভেটর (২০-২৫ টন) ১টি, গার্বেজ ট্রাক (৫ টন), মোটর সাইকেল ৬টি, ভ্যান ও ট্রলি ২০০টি এবং সম্পূর্ণ প্রকল্প এলাকয় সড়কবাতি স্থাপন অন্তর্ভূক্ত আছে। 

 


প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দাবি, জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে সম্পদের সু-ব্যবহার, সহজ ও কার্যকরভাবে কঠিন বর্জ্য সংগ্রহ এবং প্রক্রিয়াকরণ, দূষণ কমিয়ে পরিবেশের উন্নয়ন, নগরীর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতকরণসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটবে। এছাড়া কদমরসুল অঞ্চলসহ নগরীর স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হবে।  
 

এই বিভাগের আরো খবর