শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪   চৈত্র ১৪ ১৪৩০

দুদকের মামলায় পিপি দম্পতির আদালতে আত্মসমর্পণ

যুগের চিন্তা অনলাইন

প্রকাশিত: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

দুদকের  মামলায় পিপি দম্পতির আদালতে আত্মসমর্পণ 


অবৈধ সম্পদ থাকার অভিযোগে দুদকের দায়ের করা দুটি পৃথক মামলায় নারায়ণগঞ্জ জেলা আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও মহানগর আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক এড. ওয়াজেদ আলী খোকন ও তার স্ত্রী সেলিনা ওয়াজেদ মিনু আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

 

বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে তারা আত্মসমর্পণ করেন।

দুদক নারায়ণগঞ্জের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এড.বদিউজ্জামান বলেন, ‘দুপুরে পিপি ওয়াজেদ আলী খোকন ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা ওয়াজেদ মিনু জেলা ও দায়রা জজ আনিসুর রহমানের আদালতে স্বশরীরের উপস্থিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। এবং জামিন আবেদন করেন। শুনানি হলেও আদালত তাৎক্ষণিকভাবে কোন আদেশ প্রদান করেননি। ওয়াজেদ আলী খোকনের পক্ষে এড. খোকন সাহা মামলার আইনজীবী নিযুক্ত ছিলেন। দুদকের মামলা যখন ট্রায়ালে চার্জশীট হয়ে আসলে অবশ্যই একজন পিপিকে লিখিতভাবে মামলার দায়িত্ব দেয়া হয়। এই মামলায় আমাকে কিংবা অন্য কাউকে দুদক চিঠি দিয়ে নিযুক্ত করেননি। যেহুতু সিন না করিয়ে আত্মসমপর্ণ করা যায়না সেহুতু দায়িত্ববোধ থেকে এই মামলায় আমাকে দিয়ে সিন করানো হয়েছে। অর্থাৎ দুদকের পক্ষে আমি অবজেকশন দিয়েছি।’

এদিকে আদালতের বেশ কিছু সিনিয়র আইনজীবী জানান, খোকন দম্পতি কখন আদালতে হাজির হয়েছেন এবং কখন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে তা তারা জানেননা। অথচ পুরোদিনই তারা জেলা জজ আদালতে তাদের মামলা নিয়ে সময় কাটিয়েছেন। ওই আইনজীবীরা জানান, আদালত শুরু হওয়ার পর থেকে শেষ পর্যন্ত ওয়াজেদ আলী খোকন পিপি হিসেবে কোর্টে নিয়মিত দায়িত্ব পালন করতে তারা দেখেছেন।

গতকাল বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম বাদী হয়ে মামলা দু’টি দায়ের করেন। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

 

প্রথম মামলার অভিযোগে বলা হয়, এসএম ওয়াজেদ আলী খোকন, পাবলিক প্রসিকিউটর, নারায়ণগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তার নিজ নামে ও তার উপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নামে ৮৫ লাখ ৩২ হাজার ৩৭৫ টাকার সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করে গোপনপূর্বক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দেন।  তা স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে গোপন করা সম্পদসহ মোট ৯৯ লাখ ৪৯ হাজার ৩৫৫ টাকার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দখলে রাখায় তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়।

 

অপর মামলায় বলা হয়েছে, মিসেস সেলিনা ওয়াজেদ মিনুর দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে তার নিজ নামে ২৭ লাখ ৩৯ হাজার ১৬১ টাকার সম্পদের তথ্য প্রদর্শন না করে গোপনপূর্বক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য দিতো। স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে উক্ত গোপন করা সম্পদসহ মোট ১ কোটি ১ লাখ ৫৬ হাজার ১৭৪ টাকার জ্ঞাত-আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারা এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার অভিযোগে মামলা করা হয়।

 

প্রসঙ্গত, গত বছরের অক্টোবর মাসে নারায়ণগঞ্জ জজকোর্টের পিপি ওয়াজেদ আলী খোকনের বাড়িতে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের একটি প্রতিনিধি দল। পরে দলটি ওয়াজেদ আলী খোকনের স্ত্রীর ইনকাম টেক্সের ফাইল অনুসন্ধানের জন্য নিয়ে যায়। এসময় পিপি এবং তাঁর স্ত্রীসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

 

তখন ওয়াজেদ আলী খোকন এর আগে তাঁর সম্পদের যেই বিবরণী জমা দিয়েছিলেন সেখানে বর্তমান সম্পদের সঙ্গে ব্যপক পার্থক্য পেয়েছিলো অনুসন্ধানকারি দল।

 

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, তথ্যগুলো উঠে এসেছে তার স্ত্রী সম্পদ বিবরনীতে ট্যাক্স ফাইলে ব্যাপক গড়মিল পাওয়া গেছে। প্রথমে তার স্ত্রীর সম্পদগুলো তার ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রি করে এবং পরে তা হেবা করে নিজের নামে ট্রান্সফার করা হয় তার ফাইলে। এছাড়া তাদের ফাইলে যেসব ব্যবসার উল্লেখ করা হয়েছে, বাস্তবে তার কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পায়নি দুদক।

 

এর আগে ২০১৮ সালের মে থেকে নারায়ণগঞ্জ জজকোর্টেও পাবলিক প্রসিকিউটর ওয়াজেদ আলী খোকনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের আভিযোগ উঠে। এরপর থেকেই তার সেই অবৈধ আয়ের অনুসন্ধানে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন। 

 

এই বছরের ২৮ মে দুদক থেকে ওয়াজেদ আলী খোকনকে চিঠি পাঠায় দুদক। পরে ২৯ মে তাকে দুদক কার্যালয়ে এক ঘন্টার মতো জিজ্ঞেসা করে।

 

 

এই বিভাগের আরো খবর